বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: দক্ষিন কলকাতার স্টুডিওর ভেতর তখন সরগরম । উপল সেনগুপ্ত গাইছেন 'আমাকে খুঁজে নে জলফড়িং'। সঙ্গে রয়েছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিল ভট্টাচার্য এবং চন্দ্রবিন্দুর (Chandrabindoo) গোটা গ্যাং। তত্ত্বাবধানে প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। গানের মধ্যেই জলফড়িং খুঁজে নেবে নাকি জলফড়িং দিতে হবে? এই নিয়ে একটা সন্দেহ দেখা দিল। এইসবের মধ্যেই সময় নষ্ট করতে নারাজ উপল পরের গান ওয়েসিস-এ চলে যেতে চাইলেন। এরপর এল 'আমাকে নাও'। ২২ নভেম্বর নজরুল মঞ্চে হতে চলা 'এক্স ইজ ইকুয়াল টু জুজু'-র জন্য এই তোরজোর। কিন্তু এক্স ফ্যাক্টর কই? প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করলেন, "কই হে তোমাদের দাদা কোথায়!" উত্তর এল, "দাদা ঘুমচ্ছে!" দাদা মনে শিলাজিৎ! তিনি না এসে পৌছানো পর্যন্ত বৃত্তটা যেন সম্পূর্ণ হচ্ছে না। ঘড়িতে পাঁচটা দুই তখন। উপল, অনিন্দ্য গাইছেন 'বেদুইন'। ঠিক তখনই টকটকে গোলাপি শার্ট পরে ঢুকলেন শিলাজিৎ। এসেই মাটিতে বসে পুরো গান শুনলেন। শেষ হওয়া মাত্রই বললেন, আমার দুটো অবজারভেশন আছে। এই সময় হল ব্রেক! অনিন্দ্যর দিকে তাকিয়ে শিলাজিৎ বলেই ফেললেন, "বাংলা সিনেমা করলে মজুরের মতো খাটতে হয়! বোঝা গেল তিনি আসছেন শুটিং থেকে।"
শিলাজিৎ এবং চন্দ্রবিন্দু-র কোলাবরেটিভ অনুষ্ঠান এর আগে হয়নি শুনে অবাকই হলাম। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ব্রাউন ক্রো ইভেন্টস অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্টস এর তীর্থঙ্কর মজুমদার জানালেন, "আগে হয়নি, এই প্রথমবার। একসঙ্গে স্টেজে গাইলেও দুজনের গান নিয়ে এইভাবে শো হয়নি।" তার মুখেই জানা গেল অনিন্দ্য, উপল এবং চন্দ্রিল একটি করে শিলাজিতের গান গাইবেন। শিলাজিৎও গাইবেন চন্দ্রবিন্দুর গান। দুই পক্ষের দশ বারোটা গান নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মেডলে! আর নতুন গান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কথা হল শিলাজিৎ এবং অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। শিলাজিতের কথায়, "আমাদের নানা ব্যস্ততার মধ্যে টিটো (তীর্থঙ্কর) প্ল্যান করে ডেট ঠিক করে নিল। আমি বলব, এটা আমাদের প্রথম ধাপ। চন্দ্রবিন্দু আর শিলাজিৎ যদি কোল্যাবরেট করতে বসে সময় নিয়ে, তাহলে যে যে অদ্ভুতুরে জিনিস হতে থাকবে তার শেষ নেই। তবে আরও সময় দরকার। ধরা যাক এটা আমাদের প্রথম ভেঞ্চার! ভবিষ্যতে আরও গভীরভাবে কোল্যাবরেট করতে পারব আশা রাখি।" এই মঞ্চে দাড়িয়ে নতুন গান হবে কিনা জানতে চাইলে শিলাজিৎ বললেন, "ভেবেছিলাম মঞ্চেই ইমপ্রমটু একটা গান বানিয়ে ফেলব আমি আর অনিন্দ্য! এরা তো রাজিই হচ্ছে না! চন্দ্রিল-উপল ভয় দেখাচ্ছে। আমি তবু আশা ছাড়িনি। ঠিক করেছি এক্স ইজ ইকুয়াল টু কি এই প্রশ্নটা করব!"
রিহার্সালে ব্যস্ত অনিন্দ্য, চন্দ্রিল, শিলাজিৎ ও উপল। ছবি- কৌশিক দত্ত
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় যোগ করলেন, "স্টেজেই চেষ্টা করা হচ্ছিল ইম্প্রোভাইজ করে একটা গান তৈরি করার। সেটা হবে কি না কেউ জানে না। আমার কাছে এই কোল্যাবটার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হল আমরা যে মেডলেটা করছি। কোন কোন গান থাকবে সেটা এক্ষুনি বলব না। আমাদের পরস্পরের ভালোলাগার জায়গা আছে। শিলাদার কিছু গান আছে আমরা শুনে বেড়ে উঠেছি আবার আমাদের কিছু গান শিলাদার পছন্দ। আর আমার মনে হয় যে যেই প্যাটার্নেই গান করুক না কেন খুব সুন্দরভাবে একটা সেতু তৈরি করা সম্ভব। কারণ আমরা একে অপরের গানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এটা-সেটা করে হয়তো পাঁচমেশালি কিছু একটা তৈরি হবে, কিন্তু মিশবেই।"
"আসলে মনে মনে তো মিশেই আছে", বললেন শিলাজিৎ। স্মৃতিচারণে ডুব দিয়ে জানালেন, "আমাদের প্রথম আলাপ কলেজ সার্কিটে। অনিন্দ্য আমার ভাইয়ের বন্ধু ছিল। ওদের দল আছে, আমিও ভাবছি দল তৈরি করব। এদিকে ওরা নতুন বলে ওদের গান গেয়ে বেড়াচ্ছে অন্য একজন, ক্রেডিট দিছে না। আমিও তো এই ভয় থেকেই গানে এসেছি যাতে আমার গান অন্য লোকে ক্লেম করতে না পারে", বলছিলেন শিলাজিৎ। "শিলাদা আর আমাদের গানে আসার ক্ষেত্রে একটা কমন ব্যাপার হল, আমদের দুজনেরই গান বেহাত হয়ে যাচ্ছিল", হাসতে হাসতে যোগ করলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ব্রেকের পর রিহার্সালে ফিরে গেলেন সবাই। বিকেলের ঘণ্টা বেজে আসন্ন শীতের সন্ধ্যে নেমেছে। আর ওই মিউজিক স্টুডিওর ঘরে তখন 'জলফড়িং', 'পাঁচটা কাক', 'ছেড়া ঘুড়ি', 'রঙিন বল', 'অ্যান্টেনা', 'ওয়েসিস' মিলেমিশে যাচ্ছে। 'এক্স ইজ ইকুয়াল টু' কি হতে পারে? খোঁজ চলছে তার। রিহার্সাল দেখতে দেখতেই 'এক্স'-এর মানেটা স্পষ্ট হয়ে উঠল। যে যাই বলুক 'এক্স ইজ ইকুয়াল টু' হল এই গানের বন্ধুদল। যারা 'গান ভালোবেসে গান'। সেই ভালোবাসার স্টেজ রিহার্সাল দেখে ফিরলাম। ২২ নভেম্বর আপনারাও দেখতে পাবেন।
