shono
Advertisement
Ritwik Ghatak

মেঘ ঢাকা নয়, মেঘ সরানো ঘটক

কিংবদন্তী পরিচালকের জন্মশতবার্ষিকীর লগ্নে রইল 'মেঘে ঢাকা ঘটক' রিভিউ।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 09:34 PM Nov 03, 2025Updated: 09:34 PM Nov 03, 2025

নির্মল ধর: ঋত্বিক ঘটকের জীবনের বয়স মাত্র ৫১ বছর। ফিচার ছবি সাকুল্যে ৮টি, অসমাপ্ত ছবির সংখ্যা ৪, তৈরি চিত্রনাট্য: ৩, পরিকল্পনায় ছিল আরও ৮ টি চিত্রনাট্য। সফল চিত্রনাট্যে অন্যের ছবি:৬। তাঁর টালমাটাল ফিল্ম জীবনের এটা একটা শুকনো পঞ্জী শুধু। এর বাইরে রয়েছে তাঁর নিজের তৈরি ছবিগুলোর ধারাহিক অসাফল্যের এক বুক হতাশা, অসংখ্য মানুষের কথার খেলাপি, রাজনৈতিক দলের কিছু মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা, তাঁর ছবি তৈরির পেছনেও কিছু প্রভাবশালী মানুষের ঈর্ষা এবং আরও কিছু ব্যাখ্যাতীত ঘটনার সমাপতন! এবং অবশ্যই তার পেছনে রয়েছে ঋত্বিক ঘটকের আপসহীন মনোভাব, সিনেমার ব্যাকরণ সম্পর্কে তাঁর আইজেন্সটেইন-পুডোভকিনের ভাবশিষ্য হয়ে দর্শনের এক নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার দুঃসাহসিক ভাবনা! যার সঙ্গে কিছুতেই সমঝোতা করে নিজের শিল্পকে পণ্য করে তুলতে চাননি আজীবন! চেতনা নাট্যাদলের অতিসাম্প্রতিক প্রযোজনা 'মেঘে ঢাকা ঘটক' (রচনা: জিৎ সত্রাগ্নি) সত্যি বলতে, ঋত্বিকের জীবনের সন্তর্পনে লুকিয়ে রাখা অনেক মেঘ সরিয়ে তাঁকে একজন মানবিক, অতি সংবেদনশীল,বাংলা সংস্কৃতির এক আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলো।

Advertisement

মঞ্চে যখন স্ত্রী সুরমা ওরফে তাঁর 'লক্ষী' বেদনা-যন্ত্রনায় বিদ্ধ হয়ে বিলাপের সুরে বলে ওঠেন "কেনো, কেনো বার বার ওঁর ছবির ক্ষেত্রেই বিদেশের উৎসবে যাওয়া আটকে যায়, কেনো ওঁর ছবির সাবটাইটেল করার অর্থ মঞ্জুর হয়ে সঠিক সময়ে হাতে আসে না! কেনো একের পর এক প্রযোজক ছবি করাবেন বলে কথা দিয়েও পিছিয়ে যান। এত সব দুর্ঘটনা শুধু ওঁর বেলাতেই ঘটে! কেনো, কেনো?" সত্যিই তার উত্তরতো আমাদের কাছে নেই। একাডেমিতে দর্শকের আসনে বসে তখন গলার মধ্যে একদলা বোবা কান্না আটকে থাকে! ঋত্বিক ঘটকের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে, তাঁর ছবি নিয়ে, তাঁর সিনেমা ও জীবন দর্শন নিয়ে বহু উচ্চমানের অধ্যাপকীয় সন্দর্ভ আমরা পড়েছি, আলোচনা শুনেছি। কিন্তু এমন সহজ সরল ভঙ্গিতে জীবন্ত করে তোলা শুধু ঋত্বিক নয়, তাঁর জীবনসঙ্গী সুরামারও ব্যথা, যন্ত্রণা,অভিমান এবং গভীর ভালবাসার কথা কেউ কলমে বা মুখে বলেননি। ব্যতিক্রম একমাত্র সত্যজিৎ। তিনিই বলেছিলেন একমাত্র ঋত্বিক হলিউডি সিনেমার ধারার বাইরে দাঁড়িয়ে বাংলার সংস্কৃতির গভীরতর এক ব্যঞ্জনার সন্ধান করে গেছেন। আর চেতনা নাট্যদল ও নাটকের পরিচালক সুজন মুখোপাধ্যায় আড়াই ঘণ্টার নাটকে প্রমাণ করে দিলেন সিম্বলিক মঞ্চ নির্মাণ, সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত ব্যবহার, ঋত্বিকের নিজের বিভিন্ন ছবির অংশের ব্যবহারে তো বটেই, এমনকি 'ব্যাটলশিপ পোটেমকিন'-এর ওডেসা সিঁড়ির সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য, বা চ্যাপলিনের 'দ্য গ্রেট ডিক্টেটর' ছবির জ্বালাময়ী বক্তৃতার অংশ দেখিয়ে বাংলা মঞ্চে সিনেমা ও নাটকের এক নতুন ভাষ্য তৈরি হল।

এই প্রযোজনা শুধু চোখ খুলে দেখার নয়, হৃদয়ের আবেগ অনুভূতিকে যেন নিংড়ে বার করে আনে! এতটাই এই প্রযোজনার ভার। দলের প্রত্যেকটি শিল্পীর সুষম অভিনয় এই প্রযোজনাকে ঋদ্ধ করেছে। তবুও যে দুটি নাম আন্ডারলাইন করতেই হচ্ছে, তাঁরা হলেন ঋত্বিকের ভূমিকায় পরিচালক নিজে অর্থাৎ সুজন মুখোপাধ্যায় এবং সুরমার চরিত্রে নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল নিবেদিতা সপাটে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন সুজনকে উইকেটের অন্যপ্রান্তে রেখে! আপাত মাতাল ঋত্বিকের মনের গভীরে যে অভিমানী শিল্পীর কান্না জমানো ছিল, সেটা যেমন জীবন্ত করেছেন সুজন, তেমনি একটি ম্যানিকুইন চরিত্র আর সিনেমা থেকে নীতা, সীতা, বিমল, কাঞ্চন, বঙ্গবালাদের মঞ্চে পরিচালকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে যে জবাবদিহির দৃশ্য রচনা করেছেন জিৎ সত্রাগ্নি সেটাও এই নাটকের প্রনবিন্দুর কাজ করেছে। এই নাটক আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসে 'চেতনা' দলের একটি মাইলস্টোন হবার পথে। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • যে দুটি নাম আন্ডারলাইন করতেই হচ্ছে, তাঁরা হলেন ঋত্বিকের ভূমিকায় পরিচালক নিজে অর্থাৎ সুজন মুখোপাধ্যায় এবং সুরমার চরিত্রে নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়।
  • এই নাটক আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসে 'চেতনা' দলের একটি মাইলস্টোন হবার পথে। 
Advertisement