shono
Advertisement

একই হুকে ঝুলছে প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিকের স্ত্রী ও ছেলের মৃতদেহ, উত্তেজনা পর্ণশ্রীতে

হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে স্বামী-স্ত্রীর বিশ্বাসহীনতার ইঙ্গিত।
Posted: 10:46 PM Nov 27, 2020Updated: 10:48 PM Nov 27, 2020

অর্ণব আইচ: সিলিংয়ের হুক থেকে একসঙ্গে ঝুলছেন মা ও তাঁর বারো বছরের ছেলে। ঘরে ঢুকে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিক বীরেন্দ্র কুমার ও প্রতিবেশীরা। পর্ণশ্রীতে এই জোড়া মৃত্যু ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। কী কারণে মা ও বালক ছেলে একসঙ্গে আত্মঘাতী হলেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ঘর থেকে সুইসাইড নোট না মিললেও একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। এই মেসেজে রয়েছে স্বামী ও স্ত্রীর একে অপরের প্রতি বিশ্বাসহীনতার ইঙ্গিত। আবার পারিবারিক গোলমাল কোন পর্যায়ে গেলে গৃহবধূ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আত্মঘাতী হতে পারেন, তাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

Advertisement

পুলিশের মতে, মা রূপা কুমার (৩৪) ও ছেলে শান কুমার (১২) একে অপরকে এতটাই ভালবাসতেন যে কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে চাননি। মায়ের চিন্তা ছিল, তাঁর মৃত্যুর পর ছেলেকে কে দেখবে? তাই মা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ছেলেও মায়ের সঙ্গে আত্মঘাতী হতে রাজি হয়ে যায়। আরও তথ্য জানতে ওই গৃহবধূর মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া পরীক্ষা করা হচ্ছে।

[আরও পড়ুন: আসন নিয়ে বামেদের সঙ্গে দর কষাকষি নয়, ভোটের প্রস্তুতি বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেসকে বার্তা রাহুলের]

পুলিশ জানিয়েছে, পর্ণশ্রী পল্লির মেনকা আবাসনের একতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকত প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিক বীরেন্দ্র কুমারের পরিবার। অবসর গ্রহণের পর এখন জিপিওতে পোস্টাল ম্যানেজারের পদে রয়েছেন তিনি। বিহারের বাঁকা জেলার বাসিন্দা বীরেন্দ্র সঙ্গে ২০০৭ সালে বিয়ে হয় মুঙ্গেরের বাসিন্দা রূপার। চাকরি সূত্রে কলকাতায় থাকার সুবাদে প্রায় আড়াই বছর আগে পর্ণশ্রী পল্লিতে তাঁরা আসেন। ছেলে শান একটি নামী স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।

ফ্ল্যাটের মালিক তথা প্রতিবেশী সুমিত্রা কুটি জানান, বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ফেরার পর বীরেন্দ্র দেখেন, তাঁর স্ত্রী দরজা খুলছেন না। তিনি দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন। শব্দ পেয়ে সুমিত্রা ও তাঁর ছেলে বাইরে বেরিয়ে আসেন। আসেন অন্য প্রতিবেশীরাও। শেষ পর্যন্ত তাঁরা একসঙ্গে দরজাটি ভাঙেন। শোওয়ার ঘরে ভিতর থেকে তালা দেওয়া ছিল। সেটিও ভাঙা হয়। এরপরই দেখা যায়, মা ও ছেলে একসঙ্গে একই হুক থেকেই গলায় গামছা ও ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন। কাছেই পড়ে রয়েছে চারটি চেয়ার। পুলিশের মতে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বারো বছরের ছেলেটিকে ঝুলিয়ে দেওয়া মায়ের পক্ষে সম্ভব নয়। দু’জন যে একসঙ্গে আত্মঘাতী হয়েছেন, ময়নাতদন্তের পর পুলিশ নিশ্চিত।

কেয়ারটেকার মাধব দাস জানান, তিনি ও অন্যরা মা ও ছেলেকে নামিয়ে আনেন। ছেলেটির মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিল। প্রতিবেশী হাবিব সাহেব তাঁর গাড়ি করে দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে আরও এক প্রতিবেশী জোসেফ সরকার পুলিশকে খবর দেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দু’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বীরেন্দ্র কুমার বলেন, স্ত্রী কেন ছেলেকে নিয়ে আত্মঘাতী হলেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাঁর দাবি, তাঁদের মধ্যে কোনও ঝগড়াঝাঁটি হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরেও ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তখনও স্ত্রী স্বাভাবিক ছিলেন।

[আরও পড়ুন: আড়াই লক্ষ রোগীর টাকা উধাও! আর্থিক তছরুপের ঘটনায় শোরগোল আরজি কর হাসপাতালে]

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এর আগেও দম্পতির মধ্যে চেঁচামেচি কানে এসেছে তাঁদের। যদিও কারণ তাঁরা বুঝতে পারেননি। তবে স্ত্রীর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে স্বামী বলছিলেন, মা তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে শেষ করে দিলেন। যদিও তিনি তাঁর মা, না কি শাশুড়ির কথা বলছিলেন তা জানা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তের পুলিশ জেনেছে, রূপা মৃত্যুর আগে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ তাঁরই মাকে পাঠিয়েছিলেন। তাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাসহীনতার ইঙ্গিত রয়েছে। সেই কারণেই আত্মহত্যা কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। এ ছাড়াও পুলিশ জেনেছে, বীরেন্দ্রর অভিভাবকরা চাইতেন দম্পতির আরও সন্তান হোক। যদিও দম্পতি তা চাইতেন না। এই বিষয়ে পারিবারিক গোলমাল চলছিল কি না, তা জানতে গৃহকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement