সুকুমার সরকার, ঢাকা: শুক্রবার ভোরে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রবিবার বিকালে তাঁর বুকে পেসমেকার বসানো হয়েছে। এর পর তাঁকে ৭২ ঘণ্টার জন্য তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আজ, সোমবারও তাঁর স্বাস্থ্যের কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার মাঝরাত থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। খবর পেয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা রাতেই তাঁর গুলশানের বাসভবনে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন। মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে এদিন ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ তাঁকে রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পর থেকেই বিএনপি নেত্রীকে সিসিইউ-তে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
আজ, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমে জানান, গতকাল রবিবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার বসানো হয়। এখন ৭২ ঘণ্টার জন্য তাঁকে সিসিইউতে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জানা গিয়েছে, দেশ ও বিদেশের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে খালেদা জিয়ার শরীরে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাহিদ হোসেন বলেন, "ম্যাডামের হৃদ্রোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে ব্লক ছিল। আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে পেসমেকার বসানো হয়েছে।" খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যা-সহ নানা রোগে ভুগছেন।
[আরও পড়ুন: ভারত থেকে ফিরেই ত্রিপুরার বিশেষ উপহার পেলেন হাসিনা, কী পাঠালেন মানিক সাহা?]
এদিকে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ সোমবার, ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মহম্মদ মোর্শেদ হাসান খান এনিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে যে, তিনি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। দেশে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো আর পরিকাঠামো নেই। কারণ তাঁর চিকিৎসার জন্য যে ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার সেসব বাংলাদেশে নেই।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১ মে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেসময় তার চিকিৎসায় তদারকিতে থাকা বোর্ডের পরামর্শে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। একদিন পর ২ মে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর হাসপাতাল থেকে নিজের বাসভবনে ফিরেছিলেন তিনি। এর আগে গত ৩০ মার্চও ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। রাখা হয়েছিল সিসিইউতে।