‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবিতে রানির পাশাপাশি প্রশংসিত অনির্বাণ ভট্টাচার্যের অভিনয়ও। বলিউড ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন অভিনেতা। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
আপনার হিন্দি ডেবিউ ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’-র জন্য কেমন ফিডব্যাক পাচ্ছেন?
অনির্বাণ: এখানকার ইন্ডাস্ট্রির পরিচিতরা, বন্ধুবান্ধব, যাঁরা আমাকে চেনেন তাঁদের থেকে একটা ওভারহোয়েলমিং ফিডব্যাক পাচ্ছি। গত চার-পাঁচ বছরে যেটা একেবারে কমে গিয়েছিল। বিশেষত অভিনয় নিয়ে জানানোর যে ব্যাপারটা, সেটা আবার এই ছবির সঙ্গে ফিরে এল। এবং মায়ের এই ছবির ট্রেলার আর গান দেখে খুব ভাল লেগেছে।
শুনেছি এই ছবির জন্য অডিশন দিতে হয়নি। কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন?
অনির্বাণ: আমাকে অবাক করে দিয়ে সরাসরি ছবির জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। পরিচালক অসীমা ছিব্বারের ফোনটা যখন আসে, তখন আমি মেদিনীপুরে। ভোট ছিল। জুম কলে পুরো গল্পটা বলেন এবং রানির স্বামীর চরিত্রটা অফার করেন। এও জানান, ‘রানিই আমাদের তোমার কথা বলেছে’। অডিশন না হলেও রিহার্সাল করানো হয়েছে এবং ওঁরা বুঝেছেন এই চরিত্রটা আমি পারব। আমার এখনও মনে আছে যেদিন এম.এ এন্টারটেনমেন্ট-এর অফিসে যাই লুক সেটের জন্য, সেখানে ক্যারেক্টার বোর্ডে আমার ছবির মাথায় ক্যাপশন ছিল ‘অপশন বি’। ‘অপশন এ’-র জায়গায় ছবি ছিল না। বোঝাই যাচ্ছে ওঁরা বুঝেই আমাকে সিলেক্ট করেছেন। আমি নিজেও অনেক রিহার্সাল করেছি। নিজের মতো করে খাতায় লিখে প্র্যাকটিস করতাম। চরিত্রের ব্রিফ না করে অসীমা সিন ধরে-ধরে ‘অনিরুদ্ধ’-র সাইকিটা বোঝাতেন। আর প্যানডেমিক চলছিল, বড় কোনও কাজ ছিল না। তাই নিজে বসে চরিত্রের একটা মেন্টাল ফ্রেম তৈরি করেছিলাম। প্রিপারেশন নিতেই হত। আমাকে হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি এবং নরওয়েজিয়ান– এই চারটে ভাষাতে কাজ করতে হয়েছে।
অভিনয় করার সময়, দক্ষ অভিনেতার চরিত্রের প্রতি একটা নিজস্ব মতামত বা ইনপুট থাকে। ‘অনিরুদ্ধ’-র মতো মিসোজিনিস্টিক-কেও এই ছবিতে প্রথমে একেবারে ভিলেন বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না। সে অস্পষ্টতার আড়াল নিয়ে চলে। এটা চিত্রনাট্যে ছিল, না কি আপনার মস্তিষ্কপ্রসূত?
অনির্বাণ: চিত্রনাট্যকার যেটা লিখেছেন বা পরিচালক যেটা চাইছেন, সেই অভিমুখে আমাকে চরিত্রটা নিয়ে যেতেই হবে। সেটাকে কনট্র্যাডিক্ট করতে পারব না। অসীমার সামনেই আমি যেটা করেছিলাম, চরিত্রে একটা স্ট্রেস যোগ করেছিলাম এবং তাতে ওর ভিলেনিটা একটু ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে ভেঙে পড়েছে, তবু প্যান্ট-জামা পরে অফিস যাচ্ছে এবং বলে যাচ্ছে, এটার জন্য সে দায়ী নয়। বোঝা যাচ্ছে যে দায়িত্ব নেবে না। অনিরুদ্ধর প্রায়োরিটি যে আলাদা সেটা স্পষ্ট হয় অনেক পরে, কারণ অভিনয়ের মধ্যে স্ট্রেস যোগ করে একটা অ্যামবিগুইটি যোগ করতে চেয়েছিলাম। ‘অনিরুদ্ধ’ একজন পেট্রিয়ার্কাল, আলফা মেল। কিন্তু সেটা খুব সূক্ষ্মভাবে উন্মোচন করতে হত, প্রথমেই ডার্ক শেড দেখিয়ে দিলে চলত না। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর বিষয়টাও সূক্ষ্মভাবে আছে।
রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা শুনতে চাই। থাপ্পড় মারার সিনে কতটা নার্ভাস ছিলেন?
অনির্বাণ: আমি শুটিংয়ের প্রথমদিকে একটু বেশিই নার্ভাস ছিলাম। এই ছবির সঙ্গে আমার অনেক কিছুই প্রথমবার হল। প্রথমবার ইউরোপ, কলকাতার কয়েকজন ছাড়া সবাই অচেনা, প্রথম এত বড় মাপের হিন্দি ছবি, তাও আবার রানি মুখোপাধ্যায়ের অপোজিটে। নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ। কোভিডের জন্য নানা প্রোটোকল। শুটিংয়ের আগে রিহার্সালে প্রথম দেখা রানির সঙ্গে। পরের দিনই পার্ট করতে হবে। সেদিন একেবারে ব্ল্যাংক, ক্লুলেস লাগছিল। রানি এসেই উচ্ছ্বসিত হয়ে আমাকে সম্বোধন করল। একেবারে লিডারের মতো সবাইকে আপন করে নিল। আর শুটিংয়ের দিন পাঁচ-সাতেকের মাথায় আমার খুব প্রশংসা করেছিল। বলেছিল, ‘আই অ্যাম এনজয়িং দ্য গিভ অ্যান্ড টেক বিটুইন আস!’ ওরা সকলে ভীষণ যত্ন করেছে। এও মনে আছে শুটিংয়ের পনেরো দিনের মাথায় খুব হোমসিক লাগছিল। মধুকে, বাবা-মাকে ফোন করে বলতাম। তারপর অবশ্য ঠিক হয়ে যায়। আর থাপ্পড় মারার শটটা খুব ডিফিকাল্ট শট। হ্যান্ডহেল্ড সিঙ্গল শট। রিহার্সাল করতে গিয়ে প্রথমে মক করেছি। অমনি ওরা বলে উঠল, ‘মক করছ কেন, ক্যামেরায় সব বোঝা যাবে’। সিনটার নামই ছিল হি স্ল্যাপ, শি স্ল্যাপ’! (হাসি)
[আরও পড়ুন: ‘পরশুই ভিডিও পাঠিয়েছিলাম, আজ উনি নেই!’, প্রদীপ সরকারের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রাইমা ]
যে সমাজে আমরা বাস করি, প্রত্যেকের মধ্যেই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের একটা প্রভাব আছে। আপনি কখনও নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মিসোজিনি, পেট্রিয়ার্কি বা টক্সিসিটি লক্ষ করেছেন, যেটাকে অ্যাড্রেস করতে চান? অনির্বাণ ভট্টাচার্য কি আলফা মেল?
অনির্বাণ: না, আমার মধ্যে নেই। কেন নেই জানি না। হয়তো বড় হওয়ার সময় আমার বাড়িতে সেটা দেখিনি। আমার বাবা খুব সাধারণ মানুষ ছিলেন। বাবা-মা কেউই যে খুব ইন্টেলেকচুয়ালি এক্সপোজড হয়েছেন এমন নয়। সাধারণ জীবনযাপন ছিল আমাদের। তবে ভারত যে পুরুষতান্ত্রিক দেশ এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আমার মধ্যে আলফা মেল আছে কি না জানি না। এগুলো আরও বোঝা যায় সম্পর্কে গেলে, বা এখন যে বিয়ে করেছি সেই নিরিখে। আমার সঙ্গিনীর সংস্পর্শে আমি কেমন সেটা বিচার করলে তখনই মিসোজিনির প্রভাবটা বোঝা যায়। এখনও পর্যন্ত নিজের কোনও মুভমেন্ট হার্মফুল মনে হয়নি। বাট আই অ্যাম নট দ্যাট শিওর যে আমার মধ্যে ‘শভিনিজম’ বা ‘ আলফা মেল’ বিষয়টা একদম নেই। এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। শহরে থাকার ফলে, শিক্ষা এবং বৌদ্ধিক এক্সপোজারের কারণে একটা সচেতনতা কাজ করেই। কিন্তু আমার একেবারে গুঢ় অন্তরে সেই পুরুষটা লুকিয়ে বসে নেই যে ডমিনেট করতে চায়, সেটা আমার জানা নেই।