‘দত্তা’ (Datta) রিলিজের আগে মার্কিন মুলুক থেকে ফোনে ধরা দিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta)। তাঁর কথা শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
কোস্টা রিকায় কী করছেন? বেড়াতে?
নিউ ইয়র্কে একটা কাজ আছে, সেখান থেকে একটা মিনি ভেকেশন নেব। ছোট্ট ছুটি যাকে বলে, তারপর এসেই যুদ্ধ, ‘দত্তা’ রিলিজ হবে।
১৬ জুন ‘দত্তা’ রিলিজ। ‘দত্তা’-র মতো ছবিতে অভিনয় করার আগে বুক কাঁপেনি? ১৯৭৬, অজয় কর, সুচিত্রা সেনকে নিয়ে ‘দত্তা’ করেছিলেন। তার আগে ১৯৫১-তে সৌমেন মুখোপাধ্যায় সুনন্দাদেবীকে নিয়ে।
‘দত্তা’ একটা চিরন্তন উপন্যাস। তার যা বিষয় এবং বিজয়ার চরিত্র অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, সেই সময় থেকে এই সময়েও। সেই সমাজেও কিন্তু বিজয়ার চরিত্র স্বতন্ত্র। একটা ফিউডাল সোসাইটিতে কীভাবে নিজের জায়গা করে, একজন নারীর ভয়েস অনেকদূর যেতে পারে, সেই দিনে দাঁড়িয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কিন্তু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পুরো ফিউডাল সোসাইটি এবং ব্রাহ্মসমাজের বিপ্রতীপে গিয়ে সে নিজের ব্যক্তিসত্তাকে এস্টাবলিশ করেছিল। আমার কাছে ‘দত্তা’ চিরকালীন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বিজয়ার মতো চরিত্র ঘরে ঘরে প্রয়োজন। আজকের প্রেক্ষিতেও ভীষণ বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রাসঙ্গিক চরিত্র এটা। সুচিত্রা সেন বা সুনন্দাদেবী দত্তা করেছেন। সুনন্দাদেবীর ‘দত্তা’র সময় আমার জন্মও হয়নি। সুচিত্রা সেনের ‘দত্তা’-র সময়ে আমার জন্ম হয়েছে কিন্তু এত ছোট ছিলাম, আমার মনেও নেই। পরে দেখেছি। উনি মহানায়িকা, নমস্য ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে তুলনাও ধৃষ্টতার। আর এই উপন্যাসটা চিরকালীন।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন চরিত্রে যেখানে সুচিত্রা সেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছেন।
‘অচেনা উত্তম’ এবং ‘দত্তা’। নেগেটিভ সমালোচনার ভয় নেই?
১৯৭৬-এর পরে ২০২৩– মানে কয়েক যুগ কেটে গেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছে নতুন ভাবে করা যেতেই পারে। গল্পটা এত শক্তিশালী এবং পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, যখনই ‘দত্তা’ বানানো হোক, মানুষ আগ্রহ দেখাবে। তবে সুচিত্রা সেন বা সুনন্দাদেবী তাঁদের সময়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী, তাঁরা কিংবদন্তি। ওঁদের সঙ্গে তুলনা করা আমার কাছে খুব ডিফিকাল্ট। দর্শক যদি করে সেটাও চাইল্ডিশ হবে। অনেক ছবিই তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বানানো হয়েছে। যেমন– ‘দেবদাস’, ‘পরিণীতা’ বা ‘ফেলুদা’, ‘ব্যোমকেশ’। প্রত্যেকের স্বকীয়তা রয়েছে। আমার কাছে খুব গর্বের বিষয় যে সুচিত্রা সেন অভিনীত চরিত্রে করতে পারছি।
এই ছবিটা নির্মল চক্রবর্তীর প্রথম ছবি। যিনি আপনার দীর্ঘদিনের কাজের সহযোগী, পারিবারিক বন্ধু তথা জনসংযোগের দায়িত্ব সামলেছেন। তাই কি প্রযোজনায় এগিয়ে এলেন?
নির্মলদা আমাদের বহু বছরের সহযোগী, বহু বছরের সম্পর্ক। যবে থেকে কেরিয়ার শুরু করেছি নির্মলদার সান্নিধ্য পেয়েছি। স্নেহ পেয়েছি। একটা পারিবারিক যোগাযোগ হয়ে গেছে। আমার জনসংযোগে নির্মলদা বড় ভূমিকা পালন করেছেন। প্রায় সাত-আট বছর আগে থেকে উনি বলেছিলেন, একটা ছবি ডিরেক্ট করার ইচ্ছের কথা। ওঁর অনেক অভিজ্ঞতা। রিসার্চ করতে করতে হঠাৎই আমাকে ‘দত্তা’-র কথা বলেন। আমার মনে হয়, এটা দারুণ কাজ হতে পারে, আমরা সকলে মিলে ওঁকে সাপোর্ট করি। পরিচালনার বেশ কিছু জায়গা আমার ভাল লেগেছে। একটা তো মানুষের প্রতি টান থাকেই যে, আমার টিম থেকে কেউ কাজ করতে চাইছে, বা আমার সহযোগী, এবং নতুনদের আমি সাপোর্ট করতে চাই। ছবির ট্রেলার তার নিদর্শন। এত মানুষ ভালবেসেছে! পোস্ট, টুইট প্রায় সেভাবে করাই হয়নি। পাঁচ-ছ’দিনে দেড় থেকে পৌনে দু’লাখ মানুষ দেখে ফেলেছে। এটাই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি। আশা করি দর্শক ছবিটা দেখতে আসবে।
[আরও পড়ুন: OMG! মুক্তির আগেই বিপুল টাকা আয় করে ফেলেছে প্রভাস-কৃতীর ‘আদিপুরুষ’!]
শরৎচন্দ্রের কালজয়ী সৃষ্টির চলচ্চিত্ররূপ ফোটানো শক্ত। এখনকার দর্শক কতটা রিলেট করবে মনে হয়?
দর্শক মনে হয় রিলেট করতে পারবে। কিছু কিছু বিষয়, চরিত্র বাঙালির নস্টালজিয়ার সঙ্গে জুড়ে আছে। যেমন– ব্যোমকেশ, ফেলুদা বা কোনও উপন্যাসের চরিত্র কিন্তু মানুষ বার বার দেখতে চায়। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র কিংবা বঙ্কিমচন্দ্রের সৃষ্ট চরিত্র কিন্তু মানুষ বার বার দেখতে চায়। ফিল্ম, টিভি, OTT– মাধ্যম বদলে গেলেও এসবের চাহিদা আছে। বিজয়ার চরিত্র ছাড়াও বাকি প্রত্যেকটা চরিত্রই অত্যন্ত রেলিভ্যান্ট। সমাজ-পরিস্থিতি হয়তো বদলেছে কিন্তু মানুষের লড়াইটা তো আজও আছে।
‘দত্তা’র শুটিংয়েও লড়াই ছিল…
হ্যাঁ, শুটিং করা সহজ ছিল না। কারণ অতিমারী পরিস্থিতি। কিছু অংশ রিশুটও হয়। এই বাজেটে, এমন সিম্পল ন্যারেটিভে এটা করা সহজ ছিল না। অনেক কিছু অতিক্রম করেছি আমরা সকলে। আরেকটু যোগ করতে চাই, জয় সরকার ছবির মিউজিক করেছে, গান নিয়েও কথা হচ্ছে। বাবুল সুপ্রিয়, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, অদিতি গুপ্ত গান গেয়েছে। ভাল গান হয়েছে। সাহেব, জয়দা, বিশ্বজিৎদা, দেবলীনা কুমার সকলে ভাল করেছে। প্রদীপ মুখোপাধ্যায়কে মিস করছি আমরা। ওঁর শেষ জন্মদিন এই ছবির সেটেই পালন করেছিলাম। কত বড় মাপের অভিনেতা, ওঁর প্রতি এই ছবি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
বলিষ্ঠ নারীচরিত্রে এখনও টলিউডে আপনার কথা ভাবা হয়। তবে লাস্ট রিলিজ ‘মায়াকুমারী’ চলেনি বলে খারাপ লাগা আছে?
নারীপ্রধান চরিত্রে আমাকে ভাবা হয়, যেমন– ‘রাজকাহিনী’, ‘মুক্তধারা’, ‘চতুরঙ্গ’, বা ‘চারুলতা’। বেশিরভাগই সফল। যেগুলো কম সাফল্য পেয়েছে বা ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলো হয়তো একটা লার্নিং এক্সপিরিয়েন্স আমার কাছে। তবে কোনটাই দর্শক সম্পূর্ণ বর্জন করেছে, সেরকম নয়। ‘মায়াকুমারী’ খুব সুন্দর ছবি, গানগুলোও বড় হিট। আমি চলেনি বলব না, তবে আমাদের আরও প্রত্যাশা ছিল। আরও একটু প্রচার বা স্ট্র্যাটেজিক্যাল মুভ নিলে ভাল হত। কিছু জিনিস হয়তো ছবির মধ্যে ডাইলিউট হয়ে গেছে। মায়াকুমারীকে নিয়ে আরও একটু কনসেনট্রেট করা যেত যদি, ছবিটা হয়তো আরও বড় জায়গায় যেত। ওভারঅল ‘মায়াকুমারী’ আমার জন্য খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা।
OTT আসায় সিনেমার জগৎ বদলে গেছে। হিন্দি বা বাংলায় ওয়েব সিরিজে কাজের অফার আসছে না?
OTT প্রসঙ্গে বলি, আমি অনেক অফার পেয়েছি। আমি যদি OTT ডেবিউ করি আরেকটু ইন্টারেস্টিং কিছু হতে হবে। তাই একটু অপেক্ষা করছি। কথাবার্তা চলছে, সবগুলোই হিন্দিতে। আর কিছু হিন্দি ছবিও আমার OTT-তে আসার কথা। তাই অপেক্ষা করছি। আপাতত ‘দত্তা’-র দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে আছি। এর পরে ‘বিউটিফুল লাইফ’ আসবে, দারুণ আর্টিস্টিক কাজ। চাইব দু’টো ছবিই যেন মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে একটু হলেও।