রমেন দাস: চন্দ্রযানে ভর করেই মঙ্গলে (Mars) জমি কিনবেন আপনি? আর দেরি নয়, গুছিয়ে ফেলুন ব্যাগ। কারণ, এবার চাঁদে উপনিবেশ তৈরির মাধ্যমেই গড়ে উঠতে পারে মঙ্গলে বসতি! পাকাপাকি পৃথিবীর পর মঙ্গল হয়ে উঠতে পারে মানুষের জন্য বিচরণক্ষেত্র। গালগল্প নয়, এমনই বলছেন মহাকাশ (Space Scientist) বিজ্ঞানীদের একাংশ। কেন?
শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও চন্দ্রযান-৩ মিশনের (Chandrayaan 3 Mission) সাফল্যের পর এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। মঙ্গল, চাঁদ এবং জনতার চাঁদ-ছোঁয়া নিয়ে খানিকটা আশার বাণী শুনিয়েছেন বাংলার বিস্ময় প্রতিভা দক্ষিণ কলকাতার পঞ্চসায়র এলাকার বাসিন্দা শুভ্রদীপ ঘোষ। পাঠভবনের ছাত্র বর্তমানে ইসরোর (ISRO) বিজ্ঞানী। থাকেন শ্রীহরিকোটায়। চন্দ্রযান-৩ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন তিনি। স্যাটেলাইট বহনকারী রকেটের ‘লিকুইড প্রপালসন’ অর্থাৎ দ্বিতীয়ভাগের দায়িত্বে ছিলেন শুভ্রদীপ (Subhradip Ghosh) । শুধু তাই নয়, ২০১৯-এ এমটেক পড়তে পড়তে ইসরোয় (ISRO) চাকরি পাওয়া বিজ্ঞানীর দায়িত্বে ছিল গ্রাউন্ড স্টেশনও।
কী বলছেন তিনি? জানাচ্ছেন, ”রকেট (Rocket) অর্থাৎ যা ওই স্যাটেলাইট বহন করে। তার মোট তিনটি অংশ। তার মধ্যে আমার দায়িত্বে ছিল দ্বিতীয় অংশটি। যা একেবারে পৃথিবী থেকে চাঁদের কক্ষপথে স্যাটেলাইট পৌঁছনো পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। সেই কাজটাই মূলত করেছি। দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ, নিরন্তর গবেষণায় এসেছে সাফল্য।” চাঁদের (The Moon)নিকষ কালো অন্ধকারে প্রবেশ করেছে ভারতের বিক্রম। ইতিহাস গড়েছে দেশ। কিন্তু এর ফলে কী উপকার হবে দেশের? ওই বিজ্ঞানীর কথায়, ”চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কোনও দেশ আগে প্রবেশ করতে পারেনি। ওই অংশে সূর্যের আলো খুবই কম। তাই মনে করা হয়, ওই অংশে নানা বহুমূল্য, প্রয়োজনীয় খনিজ যেমন থাকতে পারে। ঠিক তেমনই জমাটবদ্ধ জলের একটা প্রবল ভাণ্ডার থাকতে পারে। এই কারণেই এই পদক্ষেপ। কিন্তু ঠিক কী কী সুবিধা আমরা পেতে পারি, একথা প্রকাশের সময় আসেনি এখনও।”
[আরও পড়ুন: মহাবিশ্বের রহস্য ভাবায়? ইসরোর মহাকাশবিজ্ঞানী হতে পারেন আপনিও]
২০০৮ সালে চাঁদের কাছাকাছি গিয়েছিল চন্দ্রযান-১ (Chandrayaan 1) । তখনই চাঁদে জল থাকার হদিশ মেলে বলে দাবি করেন মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একাংশ। এবার চাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়েছে ভারত। এখানেই উঠছে একাধিক সম্ভাবনার কথা। শুভ্রদীপ বলছেন, “মাত্র ১৪ দিন। এই কয়েক দিনেই যা করার করতে হবে। কারণ বিক্রম (Vikram Lander) এবং তাঁর মধ্যে থাকা ছোট রোবট প্রজ্ঞানের (Prajyan) শক্তি ফুরোবে। ১৪ দিন থাকা সূর্যের আলোয় ওদের কাজ চলবে। রোবট প্রজ্ঞান কাজ শুরু করেছে। অনবরত তথ্য পাঠাচ্ছে সে। কিন্তু তার মৃত্যুর অর্থাৎ শক্তি শেষের আগেই কাজ সেরে ফেলতে চাইছেন বিজ্ঞানীরাও।”
এরপর? বিজ্ঞানীদের অনেকের দাবি, এরপর যা যা তথ্য এদেশের কাছে আসবে। তা বিশ্বের কোনও দেশেই নেই। আর সেখানেই এগিয়ে রয়েছে ভারত। আর এই এগিয়ে থাকার মধ্যেই রয়েছে মঙ্গল-সূত্র। বাঙালি ওই বিজ্ঞানীর (ISRO Scientist) কথায়, “ধরা যাক শিয়ালদহ স্টেশন আর হাওড়া স্টেশন। আপনি হাওড়া গেলেন শিয়ালদহ স্টেশন হয়ে। ঠিক এমনই এক চেষ্টা চলছে। অর্থাৎ চাঁদকে ভায়া করে মঙ্গলে জমি শক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। চাঁদে উপনিবেশ গড়ে মঙ্গলে (MARS) বসতি স্থাপন করার দিকে লক্ষ্য থাকলেও থাকতে পারে।”
[আরও পড়ুন: নেমেই কাজ শুরু ‘বিক্রম’-এর ক্যামেরার, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ভিডিও পাঠাল চন্দ্রযান ৩]
প্রসঙ্গত, চন্দ্রযান-২ (Chandrayaan) মিশন শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হয়। ঠিক তার পরেই ফের নতুন উদ্যমে শুরু হয় পরের মিশনের কাজ। এবার সেই কাজেই অসাধ্য সাধন করেছে দেশ। এরপরের লক্ষ্য সূর্য। বলছেন ওই বিজ্ঞানী। তাঁর কথায়, “আর কিছুদিনের মধ্যেই সূর্যের উদ্দেশে যাবে ভারত। আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আদিত্য এল-ওয়ান পাঠানো হবে। যার কাজ হবে সূর্য এবং পৃথিবীর এমন একটি অংশে যাওয়া যেখানে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব নেই।” কলকাতার বাসিন্দা শুভ্রদীপের কথায়, ”ওই অংশের নাম এল-১। সেখান থেকেই সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে আদিত্য।” শুধু তাই নয়, ভারত যে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর জন্য প্রায় প্রস্তুত এখবরও দিয়েছেন তিনি। ইসরোর বিজ্ঞানীর দাবি, “তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে সেই প্রস্তুতি চলছে। এক বা একাধিক ভারতীয় মহাকাশে যাবেন ভারতের রকেটে।” যদিও এটাও খুব একটা বিস্তারিত বলব না এখনই।’
ইসরোর ইতিহাসে তাজ্জব বনেছে বিশ্ব। ভারতের রেকর্ডের কাছে পিছিয়েছে একাধিক শক্তিধর দেশ। আর এখানেই ফের শুরু হয়েছে জল্পনা। তাহলে কি চাঁদকে সেতু করে মঙ্গলেই ঐতিহাসিক বিস্ফোরণ ঘটাবে ভারত? মহাকাশ বিজ্ঞানের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বিজ্ঞানী শুভ্রদীপের আশার কথাই।