shono
Advertisement
Metanil Yellow

বিপজ্জনক হলুদ! আপনার রান্নাঘর সুরক্ষিত তো?

বিশেষজ্ঞ জানালেন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
Published By: Suparna MajumderPosted: 03:41 PM Jul 17, 2024Updated: 03:41 PM Jul 17, 2024

রং মেশানো খাবার ভালো নয় মোটেই। তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলুদ রঙ থাকলে। না বুঝেই চেটেপুটে আমরা খাই। জিলিপি থেকে পাস্তা, পোলাও, বিরিয়ানি ও আরও কত কী! যথাযথ ফুড কালার তো নয়ই, তদুপরি যে কেমিক্যালটি ব্যবহার করা হয় তা মানব শরীরের জন্য বিপজ্জনক। আলোচনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত বিশ্বাস

Advertisement

যে কোনও খাবারই স্বাদের পাশাপাশি বর্ণেও হতে হয় এক নম্বর। কারণ খাবার টেস্ট করার আগে দেখেই তো খেতে ইচ্ছে জাগে, তার পর তো রসাস্বাদন। তাই খাবারকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলাও জরুরি। কিন্তু এইদিকে বেশি নজর দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে খাবারের যে স্বাস্থ্যগুণ সেটা অনেক ক্ষেত্রেই কম্প্রোমাইজ হচ্ছে। আকর্ষণীয় করতে খাবারে মেশানো হচ্ছে রং। কখনও ভেবে দেখেছেন খাবারের মাধ্যমে এমনই বিষাক্ত রং শরীরের ভিতরে গেলে কী হবে? অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে ফেলছেন নাতো? এমন রঙের কৃত্রিম উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, লেড-ক্রোমেড, মেটালিন ইয়েলো, টার্ট্রাজিন নামক কৃত্রিম হলুদ রং ব্যবহারের ফলে শরীরে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।

ছবি: সংগৃহীত



অন্ধত্ব-বন্ধ্যাত্ব-পঙ্গুত্ব
নানা ধরনের রঙিন খাবার আছে, তবে জানবেন সবচেয়ে বিপজ্জনক হল এই হলুদ রং। গবেষণার তথ্য, এই মেটালিন ইয়েলো মারাত্মক প্রভাব রয়েছে চোখের উপর। দৃষ্টি শক্তি হারানোর সম্ভাবনা প্রখর।
এছাড়া আজকাল দেখা যাচ্ছে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বেড়েছে। খুব অল্পবয়সিদের মধ্যেও সন্তানধারণ ক্ষমতা দুর্বল হচ্ছে। নেপথ্যে একটি অন্যতম কারণ হল এই ধরনের রঙিন খাবারগুলি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া।
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেটালিন ইয়েলো ব্যবহার করলে অ্যালার্জির ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে, যাঁরা এ ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল ব্যক্তি এবং হাঁপানি রোগীদের জন্য এটি বেশি বিপজ্জনক। এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

২০০৭ সালে ব্রিটিশ খাদ্য মান নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষ (FSA) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দেখা গেছে টার্ট্রাজিন এবং অন্যান্য কৃত্রিম রঙের ব্যবহারে শিশুদের মধ্যে হাইপারঅ্যাকটিভিটি এবং আচরণগত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় বলা হয়, এসব রং শিশুদের মনোযোগের সমস্যার কারণ হতে পারে।
আরও আশঙ্কার, এই রং ক্যানসারের বাহক। বহুবছর আগেই বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, এই কেমিক্যাল কার্সিনোজেনিক। এই রং দীর্ঘদিন ধরে খেলে ক্যানসার হবেই। সম্প্রতি ওয়াল্র্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্য, আমাদের অধিকাংশ মারণরোগের অন্যতম কারণ খাবারের রং, প্রসেস ফুডে মেশানো কেমিক্যাল, এমনকী, হলুদ রং-ও।
এছাড়া কিডনির কার্যকারিতা বিকল করে ও লিভার ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে এই বিষাক্ত কেমিক্যালের সংস্পর্শে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মেটালিন ইয়েলো ব্যবহারে পেটের ব্যথা, ডায়েরিয়া এবং অন্যান্য পাচনতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই পাচনতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি বেশি বিপজ্জনক। হতে পারে ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখও।
২০১২ সালের একটি গবেষণায় (প্যারাসাইট রিসার্চ ল্যাবরেটরি) ইমিউন সিস্টেমের উপর মেটালিন ইয়েলোর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে যে, হলুদ রঙের ব্যবহারে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে সংক্রমণ এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ছবি: সংগৃহীত

[আরও পড়ুন: পার্লারের ফেশিয়াল করা কি ভালো? গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানালেন বিশেষজ্ঞ]

বুঝে মুখে তুলুন
আসলে এই মেটালিন ইয়েলো হল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কালার। সাধারণত ফুড কালার হিসেবে আমরা যা মনে করি, সেই গুণমান মোটেই মানা হয় না অধিকাংশ খাবারে ব্যবহৃত হলুদ রঙের ক্ষেত্রে। এ রাজ্যে তথা এ দেশেই একমাত্র এই ধরনের রঙের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু জানেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ডে এই কালার পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। ইউরোপীয় দেশগুলিতে এই রং খাবারে থাকলে সেখানে ওয়ার্নিং লেবেল দেওয়া থাকে। আর এরাজ্যে দেদার বিকোচ্ছে সানসেড ইয়োলো রং মিশ্রিত খাবার থেকে পানীয়। বিভিন্ন ঠান্ডা পানীয়, গরমের এনার্জি ড্রিংক থেকে শুরু করে সবেতেই মেশানো হয় এই হলুদ রং।

কয়েক দশক আগে, বলা যায় ১৯৭৮ সালের সময়ে খাবারে এই ধরনের খারাপ রঙের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু কোথায় কী! নিয়ম নিয়মের খাতা, ব্যবসায়িক স্বার্থে চলছে রঙের ব্যবহার। আর আমজনতাও এব্যাপারে এতটাই অসচেতন যে, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির রং ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে দিনের পর দিন ব্যবহার হয়ে চলেছে কিন্তু তাতে কারও কিছু এসে যায় না।
বিভিন্ন সবজি-ফল থেকে শুরু করে রান্নার মশলা কিংবা লাড্ডু, জিলিপি, বরফি, নিমকি, পাঁপড়, পাস্তা, বিভিন্ন মিষ্টি, আইসক্রিম, লজেন্স, ফ্রুট জুস ইত্যাদি অধিকাংশ খাদ্যেই এই হলুদ রং সর্বাধিক ব্যবহৃত রং। এছাড়া বিরিয়ানি, বাসন্তী পোলাও ইত্যাদিতেও এই রংই মেশানো হয়। নিত্য অফিসকাছারি কিংবা টুকটাক আমরা যেসব খাবারগুলি খাই সেগুলি বেশিরভাগই কিন্তু রং মিশ্রিত খাবার।

প্যাকেটের গায়ে দেখে নিন
সস্তার রান্নার মশলাও নিরাপদ নয়। বিশেষ করে হলুদ, জাফরান, রান্নায় মেশানোর হলুদ রং বা যে কোনও প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে দেখে নিন প্যাকেটে গায়ে INS ১১০ লেখা আছে কি না। এই রং গুলি FSSAI নির্ধারিত মাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করলে কম ক্ষতি করে। প্যাকেটের বাইরে খোলা খাবার হলুদ হলে সেটা একেবারেই এড়িয়ে যান।

সস্তার হলুদে দেখা যায় আটা বা ময়দার সঙ্গে খারাপ হলুদ রং মিশিয়ে তাতে ফ্লেভার মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। যা নিত্য রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রোজ একটু একটু করে শরীরে ঢুকে ক্ষতি করে বিশাল পরিমানে। এমনকী, বিরিয়ানি, পোলাও, বিভিন্ন মিষ্টি, জুস ইত্যাদিতেও দেখা যায় এই নিম্নমানের রং মেশাতে। যেগুলিতে আইএনএস নম্বরের কোনও উল্লেখই থাকে না।

ছবি: সংগৃহীত

নিরাপদ ও বিকল্প
হলুদ: কাঁচা হলুদ রান্নায় ব্যবহার করা যেতে পারে হলুদ রং হিসেবে। এটি খাবারে উজ্জ্বল হলুদ রং দেয় এবং স্বাস্থ্যকরও।
জাফরান: যদিও এটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল, জাফরান একটি প্রাকৃতিক রং এবং এতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর উপাদান।
গাজরের রস: গাজরের রস খাবারে হলুদাভ-কমলা রং দিতে পারে এবং এতে রয়েছে ভিটামিন ও পুষ্টি।
আনাট্টো: একটি বিশেষ ফলের বীজ থেকে প্রাপ্ত আনাট্টো প্রাকৃতিক খাদ্য রং হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এটি নিরাপদ।

[আরও পড়ুন: মাথায় ঘোমটা, সিঁথিতে সিঁদুর, বউদি সোহিনীর গৃহপ্রবেশের ছবি শেয়ার করলেন ননদ দীপ্সিতা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • রং মেশানো খাবার ভালো নয় মোটেই।
  • সবচেয়ে বিপজ্জনক হলুদ রঙ থাকলে।
Advertisement