ফেয়ারনেস ক্রিম মাখলে সাতদিনেই বাড়বে জেল্লা। বন্ধুমহলে আলাদা করে নজর কাড়বেন আপনি। এমনই সব বিজ্ঞাপনে আসক্ত হয়ে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে বাজার থেকে ক্রিম কিনে আনেন। কিন্তু এসবের চক্করে পড়ে অজান্তেই দিনের পর দিন স্রেফ বোকা হচ্ছেন আপনি। এসব আসলে ধাপ্পা ছাড়া আর কিছুই না। লিখছেন ডা. কৌশিক লাহিড়ী।
কোনও ক্রিম মেখে ফর্সা হওয়া যায় না! গায়ের রং নির্ভর করে নৃতত্ত্ব, বংশগতি এবং পরিবেশের উপর! যদি সত্যি ফেয়ারনেস ক্রিম মাখিয়ে কাউকে ফর্সা করা যেত তাহলে ম্যান্ডেলা, পেলে, মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো শ্রদ্ধেয় কালোমানুষরা ফর্সা হয়ে যেতেন অনেক আগেই! ফেয়ারনেস ক্রিম বলে বাজারে যা চলে সেটা প্রধানত ধাপ্পা এবং বিজ্ঞাপনী দামামা নির্ভর! ড্রাগ এবং কসমেটিক অ্যাক্টের শিডিউল জে ক্লজ ১৮-তে আছে যে ফর্সা করার দাবি জানিয়ে কোনও ওষুধ বিক্রি করা দূরের কথা, বিজ্ঞাপন দেওয়াও বেআইনি! অথচ, শুধু বিক্রি নয়, রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে এই সব ক্রিম। এগুলি অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং শক্তিশালী স্টেরয়েডের ভয়ংকর ককটেল!
[আরও পড়ুন: কন্ডোম বা পিল নয়, গর্ভনিরোধক হিসাবে যৌন মিলনের সময় পরুন গয়না!]
এগুলি প্রাথমিকভাবে দাদের মলম হিসেবেই তৈরি হয়েছিল, কিন্তু অপব্যবহার হচ্ছে ফর্সা হওয়ার ক্রিম হিসাবে। স্টেরয়েড যুক্ত ক্রিম মাত্রাতিরিক্ত মাখলে স্কিন পাতলা হয়, লাল হয়ে রক্তনালি দেখা যায়, ব্রণ বেরোয়, মেয়েদের মুখে অবাঞ্ছিত লোম বের হয়!
ভারতে প্রায় অর্ধেক (৪৭%) উপভোক্তা ক্রিম কেনেন ফর্সা হওয়ার বাসনায়! স্টেরয়েড মানেই কিন্তু খারাপ নয়! এটি অন্তত প্রয়োজনীয় একটি ওষুধ যা শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শেই ব্যবহার করা যায়। স্বচিকিৎসা কখনওই নয়! এই স্টেরয়েড ক্রিমের অপব্যবহার আমাদের দেশের লজ্জা! অভিশাপ! আসুন সবাই সচেতন হই।
অভিনেত্রী নন্দিতা দাশ দিশা দেখিয়েছিলেন কয়েকবছর আগেই। শুরু হয়েছিল, ‘স্টে ডার্ক, স্টে বিউটিফুল’ আন্দোলনের! কঙ্গনা রানাওয়াতও তাই! তবে মেগাস্টার, সুপারস্টারদের ফর্সা হওয়ার ক্রিমের বিজ্ঞাপন করাটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, অনৈতিক কাজ। কঙ্গনার পথ ধরেই এবার দক্ষিণী সিনেমা জগতের অভিনেত্রী সাই পল্লবী ফর্সা হওয়ার ক্রিমের ২ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের অফার হেলায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর এই সচেতন, সাহসী পদক্ষেপ নিশ্চয়ই সমর্থন কুড়াবে চিকিৎসক সমাজের কাছ থেকে যাঁরা এই ভয়ংকর ব্যাধিকে মুছে দিতে চান! পল্লবীকে অভিনন্দন, কুর্নিশ! তবে অনেক আগেই এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল কলকাতায়। আশা করি, ফর্সা হওয়ার উদগ্র বাসনায় আর কেউ মুখ পোড়াবেন না!
[আরও পড়ুন: লুকিয়ে ক্যানসারের বিষ! দেশজুড়ে নিষিদ্ধ জনসন অ্যান্ড জনসন বেবি শ্যাম্পু]
The post ফেয়ারনেস ক্রিম আসলে দাদের মলম! কী বলছেন বিশেষজ্ঞ? appeared first on Sangbad Pratidin.