shono
Advertisement
Agriculture

স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় মহামারীর আতঙ্কে আলুচাষিরা, বৃষ্টির অপেক্ষায় চা বাগান

ঘন কুয়াশা থাকলে ফসলে ছত্রাক বাহিত 'লেটব্লাইট' রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 03:04 PM Feb 12, 2025Updated: 03:07 PM Feb 12, 2025

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: একে কনকনে ঠান্ডা। কুয়াশার দাপট। তার দোসর হয়েছে আকাশে জলভরা মেঘের ঘনঘটা। ওই পরিস্থিতিতে ফসলে ছত্রাক বাহিত 'লেটব্লাইট' রোগ ছড়িয়ে মহামারীর আতঙ্কে কুঁকড়ে উত্তরের আলুচাষিরা। অন্যদিকে, বৃষ্টির আশায় প্রহর গুনছে চা চাষিরা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এমনই অদ্ভুত ছবি ধরা দিয়েছে উত্তরের গ্রামাঞ্চলে।

Advertisement

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে সোমবার সকাল থেকে উত্তরের পাহাড়-সমতলের আবহাওয়া দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে। সকাল থেকে রোদের দেখা নেই। মেঘলা আকাশ। নেমেছে দিনের তাপমাত্রাও। সমানতালে চলছে ঘন কুয়াশার দাপট। আবহাওয়ার এমন ভোল বদলে মাথায় হাত পড়েছে আলু চাষিদের। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, একটানা কুয়াশা এবং বৃষ্টি দুটোই আলু চাষে সাক্ষাৎ যমদূতের মতো। আবহাওয়া দপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি সপ্তাহখানেক চলতে পারে। সেটা হলে আলুগাছ 'ফাইটোপথরা ইনফ্যাস্ট্যান্স' ছত্রাক বাহিত লেটব্লাইট অর্থাৎ নাবি ধসা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে গাছের পাতা লালচে হয়ে যেতে পারে। পাতা ও ডগায় পচন ধরে গাছগুলো নষ্ট হয়। জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অ্যাগ্রোনমিস্ট কৌশিক পাল বলেন, ''ঘন কুয়াশায় লেটব্লাইট রোগ মহামারীর আকার নিতে পারে। ওই কারণে আলু চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে।"

কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে প্রায় দেড় লক্ষ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। এবার কিছুটা এলাকা কমেছে। সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয় জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায়। এটাই মূলত উত্তরের আলু চাষের বলয়। জলপাইগুড়িতে আলু চাষের এলাকা প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর। আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর। কোচবিহারে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর এবং উত্তর দিনাজপুরে প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর। ইতিমধ্যে আগে চাষ করা আলু বাজারে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু প্রচুর জমিতে লেট আলুর চাষ চলছে। সেখানেই বিপদ।

অন্যদিকে, আকাশে মেঘ দেখে চা চাষিরা আহ্লাদে আটখানা। চায়ের মরশুম শুরু হলেও বৃষ্টির অভাবে এখনও বেশিরভাগ ছোট চা বাগানে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেখা মেলেনি। চা চাষিরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর উত্তরে শীতের হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়ে থাকে। ওই বৃষ্টির জল মিলতে ছেঁটে দেওয়া চা গাছে নতুন পাতার দেখা মেলে। দুবছর থেকে আবহাওয়ার স্বাভাবিক ছন্দের তাল কেটেছে। শীতে বৃষ্টি মেলেনি। এবারও সেটাই হয়েছে। অবশেষে আকাশে মেঘের আনাগোনা বেড়েছে। বৃষ্টি হলে মার্চে ভালো পাতা মিলবে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী জানান, উত্তরে ছোট চা বাগান রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অন্তত দুলক্ষ পরিবার। উত্তরের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর জেলা এবং শিলিগুড়ি মহকুমার ৪১ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে ছোট চা বাগান রয়েছে। এখানে ভালো মানের চা পাতা উৎপাদনের জন্য ৩১ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং দিনে রোদ, রাতে বৃষ্টি দরকার।

বিজয়গোপালবাবুর কথায়, "কাগজে-কলমে বাগান খুলেছে। কিন্তু এখন বৃষ্টি না হলে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেখা মিলবে না।" এখন ডিজেলে পাম্প চালিয়ে কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করে বৃষ্টির ঘাটতি মেটানোর লড়াই চলছে। ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির অন্যতম কর্তা রজত কার্জির বক্তব্য, এক একর আয়তনের চা বাগানে সেচ দিতে মাসে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। সব চাষিদের পক্ষে ওই ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ঋণ করতে হচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চাষে ক্ষতির আশঙ্কা।
  • উত্তরবঙ্গে ঘন কুয়াশায় ছত্রাক বাহিত 'লেটব্লাইট' রোগের প্রকোপে বিপর্যস্ত আলু চাষ।
  • আবার মেঘলা আকাশ দেখে বৃষ্টির অপেক্ষায় চা চাষিরা, নইলে চা গাছে কুঁড়ি আসবে না।
Advertisement