গৌতম ব্রহ্ম: ঘূর্ণিঝড় রেমাল থাবা বসিয়েছে বাংলার চাষে। এখনও পর্যন্ত যা হিসাব তাতে ১৮৮০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন শস্য ও সবজির। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তিল, চিনাবাদাম, পান ও সবজি চাষের। বোরো ধান আগেই উঠে গিয়েছে। না হলে এই ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ত বলেই মনে করছেন কৃষি দপ্তরের (Department of Agriculture) আধিকারিকরা। নবান্ন সূত্রের খবর, ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরে পাঠিয়েছে কৃষি দপ্তর। ভোটপর্ব মিটলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন আচরণবিধি উঠে গেলেই দেওয়া শুরু হবে ক্ষতিপূরণ।
রেমালের (Cyclone Remal) মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার থেকেই কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছিল নবান্নে। একাধিক দপ্তর কাজের সুবিধার জন্য আলাদা করে কন্ট্রোল রুম খুলেছে। কৃষিতে এগারো সদস্যের টিম তৈরি করে কন্ট্রোল রুম চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির ব্লক ধরে ধরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরিমাপের নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেই কাজ শুরু করেছেন কৃষি আধিকারিকরা। ‘গ্রাউন্ড টুদিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, রেমালের ধাক্কায় সবমিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ ৫ হাজার ৯৯৬ জন কৃষকের ৭১, ৫৮১ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১৮৮০ কোটি টাকার বেশি।
[আরও পড়ুন: রেমালের দাপট কাটতেই বঙ্গে গুমোট গরম, কবে মিলবে স্বস্তি?]
সুপার সাইক্লোনের ধাক্কায় দক্ষিণবঙ্গের ছয় জেলার চাষাবাদ সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে। নবান্ন সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনায় ২২টি ব্লক, হুগলির ১৮টি ব্লক, হাওড়ার ১৪টি ব্লক, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের ২৫ টি করে ব্লক এবং নদিয়ার ১৮টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবথেকে বেশি মার খেয়েছে হুগলি জেলার চাষবাদ। এই জেলার গঙ্গাতীরবর্তী এলাকায় ৫৭,৯৬৩ হেক্টর চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৮৫২ জন কৃষক। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫২৫ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। এই জেলার ২৫,৮৮৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৭৮ জন চাষি। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৯৮ কোটি টাকা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪২,৮৬৩ জন কৃষকের ৫০২৪ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৮৫ কোটি টাকা। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫২,৮৯৭ জন কৃষকের ৭৮৯৫ হেক্টর জমিতে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা। নবান্নের এক আধিকারিক জানালেন, এই রাজ্যের অনেক ফসলই বাংলা শস্যবিমার অধীনে। বিমা সংস্থা ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কষতে শুরু করেছে।