টিটুন মল্লিক ও দেবব্রত দাস: পূর্বাভাস সত্যি করে ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে কোথাও হালকা তো কোথাও ভারি বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার চলেছে শিলাবৃষ্টি। শুক্রবারের পর শনিবারও বাঁকুড়ার আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। এই ভরা চৈত্রে অকাল বর্ষণ, সঙ্গে শিলাবৃষ্টির দাপটে দুর্যোগ মাথায় নিয়েই মাঠ থেকে আলু তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছে বাঁকুড়ায়। জলে ভিজে মাঠে আলু বস্তাবন্দি করে চাষিরা দৌড়চ্ছেন হিমঘরগুলির দিকে। বাঁকুড়া জেলার কোতুলপুর, জয়পুর, ইন্দাস, পাত্রসায়ের, সোনামুখী-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় হিমঘরগুলির সামনে আলুর বস্তা বোঝাই গাড়ির লম্বা লাইন। এদিকে শিলাবৃষ্টির জেরে জেলায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। ফলে বোরো ধানের শিস নষ্ট হতে বসেছে। শুধু বোরো চাষ নয়, একই সঙ্গে তরমুজ, সর্ষে, তিল-সহ তৈলবীজের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। খাতড়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক শুভেন্দু হাজরা বলেন, "এই বৃষ্টির জেরে বোরো চাষের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে শিলাবৃষ্টির জন্য বেশ কিছু এলাকায় বড় ধরনের শিস নষ্ট হতে পারে। একই সঙ্গে কিছু এলাকায় তরমুজের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।”

ফাইল ছবি।
সূত্রের খবর, বাঁকুড়ায় এবার মোট ৫৬ হাজার ৬০০ হেক্টরের কাছাকাছি আলুর চাষ হয়েছিল। যার মধ্যে প্রায় কমবেশি ৪৫ শতাংশ আলু উঠে গিয়েছে। তবে বেশ কিছু আলু এখনও মাঠেই পড়ে। চাষিরা দাম বাড়ার আশায় ছিলেন। এবার শুরু থেকেই নতুন আলুর দাম নিয়ে চাষিদের মধ্যে নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রথমদিকে আলুর দাম তলানিতে থাকায় মাঠ থেকে আলু তুলতে অনেক চাষির অনীহা ছিল। পর্যায়ক্রমে দাম একটু একটু করে চড়তে শুরু করেছে। তবে দাম আশানুরূপ না হওয়ায় অপেক্ষায় ছিলেন আলু চাষিদের একাংশ। বেশকিছু এলাকায় অনেকে মাঠ থেকেই ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন আলুর দাম ৮২০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। চাষিদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ফলন ভাল হওয়ার জন্য এই দামে চাষের খরচ উঠে যাবে। তবে লাভ খুব একটা বেশি হবে না। এসবের মধ্যেই আচমকা আবহাওয়া পরিবর্তনে মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে আলু চাষিদের। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাঁকুড়া জেলার আবহাওয়া পরিবর্তিত হতে শুরু করে। ক্রমে বাঁকুড়ার আকাশ ঢেকে যায় কালো মেঘে। এই পরিস্থিতিতে আর দেরি না করে জমি থেকে আলু তুলতে শুরু করে দিয়েছেন আলু চাষিরা। চলতি বছর হিমঘরগুলিতে আলু সংরক্ষণ নিয়ে কড়া নজরদারি রয়েছে।
বাঁকুড়ার রাধানগর গ্রামের আলু চাষি রবীন দত্ত বলেন, "জমিতে জল জমে যাওয়ায় আলু তোলা আরও পিছিয়ে যাবে। তবে খুব বেশি বিলম্ব হলে জমিতেই আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।" এদিন হিমঘরগুলির সামনে আলুর বস্তা ভর্তি সার দেওয়া গাড়ির লাইন পড়ে যায়। বড় চাষিরা ট্রাক, ট্রাক্টর ও ছোট চাষিরা টোটোয় করেও আলু সংরক্ষণের জন্য হিমঘরে নিয়ে আসেন। জেলা হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "একসঙ্গে সব চাষিরা গাড়ি করে চলে নিয়ে আসায় হিমঘরে আলু নামাতে দেরি হচ্ছে। ফলে হিমঘরগুলির সামনে আলু বোঝাই গাড়ির লাইন পড়ে যাচ্ছে। এদিকে, শিলাবৃষ্টির জেরে অনেক জমির বোরো ধানের শীষ ঝরে পড়ে এদিন। খাতড়ার চাষি প্রবীর মাহাতো বলেন, "প্রায় ১০ বিঘা জমিতে এবার তরমুজ চাষ করেছি। শিলাবৃষ্টির জেরে তরমুজের ক্ষতি হয়েছে।" জেলা উপকৃষি অধিকর্তা দেব কুমার সরকার জানালেন, "বাঁকুড়ায় মোট আলু চাষ হয়েছে ৫৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জলদির আলু। ১৭ শতাংশ আলু জমি থেকে তুলে নিয়েছেন কৃষকরা। বাকি যে আলু রয়েছে তা তুলতে সমস্যা হলেও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই তেমন।"