অর্ক দে, বর্ধমান: জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ শেষ হতে চললেও পূর্ব বর্ধমান জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেকটাই কম। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত ৫০ শতাংশেরও কম বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমন ধানের চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। জেলার অনেক এলাকাতে জলের অভাবে চাষিরা এখনও বীজতলা তৈরি করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যানেলগুলিতে জল ছাড়া নিয়ে ২৩ জুলাই বৈঠক রয়েছে। ডিভিসির জলাধার গুলিতে কি পরিমাণে জল রয়েছে তার উপরেই নির্ভর করছে এবছর চাষের জন্য কতটা জল দেওয়া হবে।
কিন্তু, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে জেলায় কতটা জমিতে আমন ধান করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। শুধুমাত্র ক্যানেলের জলের ভরসায় চাষ হবে না বলে মনে করছেন চাষিরা।
জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ জুলাই পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী পূর্ব বর্ধমান জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪৮.৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সবথেকে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে পূর্বস্থলী ১ ও কেতুগ্রাম ১ ব্লকে। বছরের এই সময়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে ২৭৩ মিলিমিটার। অর্থাৎ, অন্যান্য বছরে তুলনায় এ বছর এখনও পর্যন্ত ৫০ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘আম-আমসত্ত্ব দুইই পাব’, মমতার ‘আশা’য় জল ঢেলে কটাক্ষ মালদহের দুই বিরোধী সাংসদের]
এই পরিস্থিতিতে বীজতলা তৈরি করা থেকে ধান রোয়া পর্যন্ত সমস্ত কাজই পিছিয়ে যাবে বলে মনে করছেন চাষিরা। পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগর এলাকার এক চাষি খলিউর রহমান জানান,বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিরা বীজতলা তৈরি করার সাহস করেননি। কারণ বীজতলার একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ধানের চারা রোপন করতে হবে। নাহলে চারা বড় হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে এখনও পর্যন্ত চাষ দেওয়া যায়নি। বীজতলা তৈরি করতে দেরি হলে চাষও দেরি হবে। অন্যদিকে বর্ধমানের রায়না এলাকার এক চাষি দিলীপ ঘোষ জানান, "স্বাভাবিকের তুলনায় এবছর অনেকটাই বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই চাষিরা ভরসা করে বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। এছাড়া জমিতে চাষ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমন চাষের উপর নির্ভর করেন অধিকাংশ চাষি। ক্যানেলের জল কি পরিমাণে পাওয়া যাবে তা এখনও জানা যায়নি। তাই কেবলমাত্র ক্যানেল জলে কতটা চাষ হবে তা বোঝা যাচ্ছে না।"
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে ২ লক্ষ ৩২ হাজার একর জমিতে সেচের জল পাওয়া যায়। এছাড়া, গভীর নলকূপ বা সাবমার্শিবেল জলের মাধ্যমে প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার জমিতে চাষ হতে পারে। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেখেই আমন দানের চাষ শুরু হয়। পূর্ব বর্ধমান জেলায় তাই হাতে এখনও এক মাসের কাছাকাছি সময় রয়েছে। এর পরেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলে চাষিদের ক্যানেল এর জলের মাধ্যমে চাষের উপরেই ভরসা করতে হবে। এছাড়া সময় অনেকটা পিছিয়ে যাওয়ার কারণে চাষিদের বিকল্প ব্যবস্থার সহায়তা নিতে হবে। এক্ষেত্রে দ্রুত ফলনশীল ধান বীজের চারা রোপণ করতে হবে।
[আরও পড়ুন: অগ্নিমূল্য আনাজপাতি, আর্থিক সমীক্ষায় নির্মলা বলছেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে’]
জেলা কৃষি উপাধিকর্তা নুকূলচন্দ্র মাইতি জানান, "ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরেই সেচের জন্য কি পরিমান জল দেওয়া হবে তা জানা যাবে। দ্রুত সেচের জল দেওয়ার ব্যবস্থা করবে জেলা প্রশাসন। এই সেচের জলে বীজতলা তৈরি করতে পারবেন চাষিরা। এছাড়া ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় রয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হলে চাষীদের আমন ধান চাষ করতে কোন সমস্যা হবে না। "