shono
Advertisement

গাছে পাতা কই! পর্ষদের ঘোষণায় বিপাকে চা চাষিরা

ভালো চা পাতা উৎপাদনের জন্য কড়া রোদ, লম্বা দিন ভীষণ প্রয়োজন।
Published By: Paramita PaulPosted: 08:27 PM Feb 06, 2025Updated: 08:34 PM Feb 06, 2025

অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: মরশুম শুরুর দিনক্ষণ এক সপ্তাহ এগিয়ে করা হয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি। অথচ গাছে পাতা নেই। চা চাষিদের অভিযোগ, শীতে বৃষ্টি না-মেলায় মার্চের আগে পাতা তোলা সম্ভব হবে না। এবারও কমতে পারে উৎপাদন। প্রথমে ভারতীয় চা পর্ষদের ঘোষণা ছিল, এবার চা পাতা তোলা শুরু হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ৩১ জানুয়ারি নতুন বিজ্ঞপ্তিতে পর্ষদের তরফে জানানো হয়, চা-পাতা তোলার নির্ঘন্ট এগিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। তবে মরশুম শুরুর দিন এক সপ্তাহ এগিয়ে আনা হলেও হাসি নেই উত্তরের পঞ্চাশ হাজার চা চাষির মুখে।
উলটে তাঁদের দাবি, দিন এগিয়ে আনা হলেও বেশিরভাগ বাগানে নতুন পাতার দেখা নেই। যে সামান্য কিছু বাগানে পাতা এসেছে, বৃষ্টির অভাবে সেটার গুণগত মান খুবই খারাপ হবে। অথচ মরশুমের শুরুতে অর্থাৎ 'ফার্স্ট ফ্ল্যাশ'-এ সবচেয়ে ভালো মানের চা উৎপাদন হয়ে থাকে। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, "চা পর্ষদ ক্ষুদ্র চা চাষিদের সমস্যা বিবেচনায় না এনে চা পাতা তোলার দিন ধার্য করেছে। শীতে বৃষ্টি না-মেলায় এবার বেশিরভাগ চা-বাগানে এখনও ভালো পাতা আসেনি। মার্চের আগে সেটা মিলবেও না। তাই দিন এগোনোয় কোনও লাভ হবে না।"

Advertisement

ক্ষুদ্র চা চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই গত মরশুমে চা পর্ষদ পাতা তোলা এবং চা তৈরির সময়সীমা এগিয়ে আনায় রাজ্যে ১৫ শতাংশ কম চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালে রাজ্যে ৪৩৩.৫৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০২৪ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ৩৬৯.১৭ মিলিয়ন কেজি। এর কারণ গত বছর ডিসেম্বর মাসে চা উৎপাদনের কাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। অথচ ২০২৩ সালে ডিসেম্বর মাসেই ৪ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক রজত কার্জি বলেন, "গত বছর ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ফ্ল্যাশ মার খেয়েছে। অতিবর্ষণের জন্য বর্ষাকালীন উৎপাদন উদ্বেগজনক ভাবে কমেছে। এবার শীতে এখনও বৃষ্টি নেই। পাতা না হলে মরশুম পিছিয়ে যেতে বাধ্য।”

টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডুয়ার্স ও তরাইয়ে প্রতিবছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু দুবছর ধরে সেটা হচ্ছে না। ২০২৩ সালে শীতের মরশুমে বৃষ্টির অভাবে প্রয়োজনীয় কাঁচা চা পাতা না মেলায় বেশিরভাগ বটলিফ কারখানার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরে একই পরিস্থিতি ছিল। আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখে চা বলয়ে শঙ্কা জেগেছে, এবারও একই সমস্যা হতে পারে। চা বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে চা গাছ ছেঁটে দেওয়ার কাজ চলে। এরপর বৃষ্টির ছোঁয়া মিলতে দু'টি পাতার কুশি চলে আসে। এবার জানুয়ারি মাসের শুরুতেও গত বছরের মতো বৃষ্টির দেখা মেলেনি। কৃত্রিমভাবে সেচের ব্যবস্থা করে গাছ বাঁচিয়ে রাখা গেলেও পাতা নেই।

চা চাষিরা জানান, ভালো চা পাতা উৎপাদনের জন্য কড়া রোদ, লম্বা দিন ভীষণ প্রয়োজন। সেটা মিলছে না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কুয়াশাচ্ছন্ন দিনরাত। এই আবহাওয়া চা শিল্পের পক্ষে ক্ষতিকর। এরপর তাপমাত্রা বাড়লে রেড স্পাইডার, লুপার, লাল পোকা, গ্রিন ফ্লাই অর্থাৎ সবুজ মাছি, চা মশার উপদ্রব বাড়বে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, সাধারণত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে চা পাতা তোলার কাজ শুরু হয়। দু'মাস পাতা তোলার কাজ চলে। কিন্তু এবার কী হবে কেউ বুঝতে পারছে না। কারণ, গাছের বৃদ্ধির জন্য যে রোদ ও বৃষ্টি প্রয়োজন, সেটা মিলছে না। অথচ চা চাষিরা ফার্স্ট ফ্লাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ, এই সময় যে পাতা হয় সেটার কেজি প্রতি দাম ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা থাকে। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সতীশ মিক্রকা জানান, গত বছর মরশুমের শুরুতে কারখানা খুলে পাতার জন্য বসে থাকতে হয়েছে। এবারও একই পরিস্থিতি দাঁড়াবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মরশুম শুরুর দিনক্ষণ এক সপ্তাহ এগিয়ে করা হয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি।
  • চা চাষিদের অভিযোগ, শীতে বৃষ্টি না-মেলায় মার্চের আগে পাতা তোলা সম্ভব হবে না।
  • এবারও কমতে পারে উৎপাদন।
Advertisement