ব্রাজিল: ১ (আগুস্তো)
বেলজিয়াম: ২ (ফার্নান্দিনহো-আত্মঘাতী, ডি ব্রুইন)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপের আগে থেকে সেলেকাওদের যে অপ্রতিরোধ্য বিজয়রথ ছুটতে শুরু করেছিল, তার রাশ টেনে দিল এগারোটি কালো ঘাড়ো। ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়ে ফুটবল ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় শুরু করল বেলজিয়াম।
বিশ্বকাপ তুমি কার? ‘বলা খুব মুশকিল।’ বিশ্বকাপ বলতে পারলে হয়তো এমন কথাই শোনা যেত তার মুখে। কারণ এবারের বিশ্বকাপে যে একের পর এক অঘটন ঘটে চলেছে। ফেভরিট হিসেবে যে কাউকেই এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। আবার কোনও দলকে আন্ডারডগ তকমা দেওয়ার ভুলও করা যাবে না। অঘটনের জালে জড়িয়ে একে একে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেনের মতো তথাকথিত বড় দলগুলি। হারাধনের ছেলেদের মধ্যে ঐতিহ্যশালী দল হিসেবে একটি ছেলেই বেঁচে ছিল। এদিন পাওয়ার ফুটবলের চাপে শেষ সেই ব্রাজিলও। তাল কাটল সাম্বা ছন্দের। অতএব এবার বিশ্বকাপ যদি কোনও নতুন দলকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পায়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
[বিশ্বকাপে অব্যাহত ফরাসি বিপ্লব, মুসলেরার ভুলেই স্বপ্নভঙ্গ উরুগুয়ের]
কালো ঘোড়া। কাজান এরিনায় বেশ টগবগিয়েই দৌড় শুরু করে এদিন। নিজেদের শক্তির বিষয়ে বেশ ভালই ওয়াকিবহাল তারা। প্রতি আক্রমণে বারবার কামাল করেছে মার্টিনেজের দল। এবারও তাকেই কাজে লাগাল। লুকাকু সোলো রানে ডি ব্রুইনের কাছে বল পৌঁছে দিলেন। আর সেখান থেকেই দুর্দান্ত একটি গোল। তখনই যেন ইঙ্গিত মিলেছিল, ম্যাচের ভাগ্য কোন দিকে গড়াচ্ছে। বড় দলের বিরুদ্ধে যেভাবে নার্ভ ধরে রেখে খেললেন মার্টিনেজের ছেলেরা, তা দেখে অনুপ্রেরণা পাবে বাকি দলগুলিও।
এসকোবারের আত্মঘাতী গোলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল কলম্বিয়াকে। ক্ষুব্ধ দেশবাসীর হাতে গুলিবিদ্ধ হতে হয়েছিল তাঁকে। সে ইতিহাস অন্ধকারের। কাম্য ছিল না। কিন্তু ফার্নান্দিনহো আজ নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন তো? রাতে ঘুমাতে পারবেন তো তিনি? সাসপেনশনের গেড়োয় পড়ে ক্যাসেমিরোকে বাদ পড়তে হয়েছে দল থেকে। তাই ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছিল ফার্নান্দিনহোর। মাঠে নামার আগে থেকেই হুঙ্কার দিচ্ছিলেন। ক্যাসেমিরোর অভাব পূরণ করে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে হল উলটোটা। অভাব তো দূর, তাঁর আত্মঘাতী গোলে শুরুতেই অক্সিজেন পেয়ে গেলেন হ্যাজার্ডরা। আত্মবিশ্বাসী দল তখন টগবগিয়ে এগিয়ে চলেছে নয়া ইতিহাস রচনা করতে।
[জানেন, মাঠে স্রেফ গড়াগড়ি দিয়েই কতটা সময় কাটিয়েছেন নেইমার?]
এই ব্রাজিলই কি মেক্সিকোর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত একটা পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল? সার্বিয়াকে পরাস্ত করে দলগত দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছিলেন এই তারকারাই? বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে প্রথমার্থ দেখার পর অন্তত এসব প্রশ্নই মনে ঘোরাফেরা করবে। কারণ তিতের ছেলেদের এদিনের খেলার সঙ্গে সেসবের কোনও সামঞ্জস্যই নেই। উইলিয়ান, জেসুসরা শুধু দর্শক হয়েই রয়ে গেলেন। বক্সের কাছে বারবার স্কিল প্রদর্শন করতে গিয়ে খেলার গতিই স্লথ করে দিলেন নেইমার। আর তাতেই সুন্দরভাবে ডিফেন্স সাজানোর সময় পেয়ে গেল বেলজিয়াম। যেটুকু পরিশ্রম করলেন, একা মার্সেলোই। তবে বল বাড়িয়ে তিনিই যে তা রিসিভ করবেন, এমনটা তো সম্ভব নয়। তাই
ফিনিশিংয়ের অভাবটা প্রকট হয়ে উঠল। দ্বিতীয়ার্ধে লাগাতার আক্রমণ শেষে খোলে গোলমুখ। কুটিনহোর পাস থেকে দারুণ হেডারে গোল করে খেলায় উত্তেজনা ফেরালেন আগুস্তো। কিন্তু এদিনটাই যেন ব্রাজিলের ছিল না। নাহলে নেইমার, কুটিনহোরা এত সহজ সুযোগ মিস করতেন না।
এ বিশ্বকাপ যেমন একে একে কেড়ে নিল হেভিওয়েটদের, চিরাচরিত হট ফেভরিটদের, ঠিক তেমনই জন্ম দিল নতুন তারকাদের। খোঁজ দিল ফুটবল মানচিত্রে শক্তিশালী দেশের। তাই শুধুই যন্ত্রণা নয়, এ বিশ্বকাপ উজ্জ্বল আগামীর বার্তাও দিচ্ছে জোর গলায়। তাই তো নামজাদারা বিশ্বকাপের রং ফিকে করে দিলেও ফুটবলপ্রেমীরা রাত জাগবেন ফ্রান্স ও বেলজিয়াম লড়াই দেখতে। ফুটবলের নয়া কাহিনির সাক্ষী হতে।
The post নিজেদের দোষেই ডুবল ব্রাজিল, পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে শেষ চারে বেলজিয়াম appeared first on Sangbad Pratidin.