shono
Advertisement
Aparichito Review

থ্রিলার, রহস্যের বুনোটে কতটা জমল 'অপরিচিত'? পড়ুন রিভিউ

এই ছবির অন্যতম ইউএসপি অভিনয়।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 01:57 PM Jan 12, 2025Updated: 07:36 PM Jan 12, 2025

শম্পালী মৌলিক: ভালোবাসার শাস্তি মৃত‌্যু! কানে বাজে সংলাপটা, ছবি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও। এই অসম্ভব অন‌্যায় দৃষ্টান্ত যুগে যুগে। আপন সম্পর্কের ফাঁকফোকর দিয়ে একটু একটু করে চুইয়ে ঢুকে পড়ে তেমনই তীব্র হিংস্রতা। তখন চেনা মানুষটাকেই অচেনা লাগে। আবার কোনও মানুষকে দেখলেই মনে হয় এ তো পূর্বপরিচিত। অলিখিত বিশ্বাস কাজ করতে শুরু করে মনে মনে। কে পরিচিত, আর কে অপরিচিত এমন হেয়ালি বিছিয়ে রয়েছে জয়দীপ মুখোপাধ‌্যায়ের 'অপরিচিত' ছবি জুড়ে।

Advertisement

অচেনাকে বিশ্বাস করব কি? আর যদি চেনা লোকই বিশ্বাস ভাঙে? তাহলে কাকে বিশ্বাস করা যায়? এই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ছবি যত এগোয়। থ্রিলার ছবির মধ‌্যে রহস‌্যের জাল বুনেছেন পরিচালক। লন্ডনেই পুরো ছবির শুটিং, সেখানকার আবহাওয়া, সবুজ পরিবেশ, ইংরেজিভাষী লোকজন সব মিলিয়ে টানটান থ্রিলারের পরিবেশ তৈরি করেছে। গল্পের কেন্দ্রে রঞ্জন ঘোষাল (ঋত্বিক চক্রবর্তী) যে অল্ডারশটে একটা লাইব্রেরি চালায়। একদিন রাত্রে দুর্ঘটনার শিকার হয় সে। পুলিশ তাকে রাস্তার ধার থেকে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করে। জানা যায় মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তাকে। যার ফলে আংশিক স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে তার।
কনফিউসড অবস্থায় খানিকটা। সাম্প্রতিককালের কোনও কিছুই মনে নেই তার এই ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরির ফলে। এমনকী নিজের স্ত্রী রিয়াকেও মনে করতে পারছে না, বাড়ির ঠিকানাও ভুলে যায়। আরও মুশকিল হয়, অ‌্যাকসিডেন্টের পর তার স্ত্রীকেও খুঁজে পাওয়া যায় না কিছুদিন। লন্ডন পুলিশের পদস্থ অফিসার অভীক দত্তর (অনির্বাণ চক্রবর্তী) ওপর দায়িত্ব পড়ে এই ঘটনার তদন্তের। অভীক রঞ্জনকে ভরসা দেয় এবং তাকে খুনের চেষ্টা কে করল তার অন্বেষণে নামে। রঞ্জনের পার্শিয়াল মেমরি লস-এর মাঝে ভালো হয় যেটা, স্ত্রী রিয়াকে (ইশা সাহা) খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু রঞ্জন নিশ্চিত হতে পারে না, এই কি রিয়া! ফলে নিখোঁজ বউকে কাছে ফিরে পেয়েও দ্বিধায় থাকে সে। রিয়াই তাকে হত‌্যা করতে চেয়েছে? বাড়ি ফেরে কিন্তু লোকটাকে ক্রমাগত সন্দেহের কাঁটা বিঁধতে থাকে।তার জন‌্য স্ত্রী কতটা নিরাপদ। আর আছে এক হুডি পরা অনুসরণকারী (সাহেব ভট্টাচার্য)। ক্রমশ রহস‌্য ঘনায়। রঞ্জন ভরসা করতে শুরু করে অ্যাসিস্টেন্ট কৃতিকাকে (ইসাডোরা বেকন)।

অন‌্যদিকে অবিশ্বাস যেমন যেকোনও সম্পর্কের ভিত আলগা করে, তাই হতে থাকে। প্রথমার্ধের পর কাহিনি গতি পায়। পদ্মনাভ দাশগুপ্তর চিত্রনাট‌্যে ছবিটা দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে বেশি উপভোগ‌্য। তবে পুরে ছবিটাই টানটান। বুদ্ধিমান দর্শক হয়তো ক্লাইম‌্যাক্স আগেই আন্দাজ করতে পারবেন। তবু ছবিটা শেষ অবধি ছাড়া যায় না। তার অন‌্যতম কারণ তুখড় অভিনয়। ঋত্বিক চক্রবর্তী, ইশা সাহা, অনির্বাণ চক্রবর্তী তিনজনেই দুরন্ত। অসহায়, সন্দেহ-বাতিকগ্রস্ত রঞ্জনের চরিত্রে ঋত্বিক তার ভয়-জড়তা সবটুকু তুলে এনেছেন মাপ মতো। শঙ্কিত, যত্নশীল, বুদ্ধিদীপ্ত স্ত্রীর ভূমিকায় ইশা বেশ ভালো। এই ছবিতে কোঁকড়া চুলে তাঁর অন‌্যরকম লুক, যখনই পর্দায় এসেছেন চোখ সরানো যায় না। তাঁর উপস্থিতির লাবণ‌্যর বিপ্রতীপে গিয়ে সংশয়দীর্ণ ঋত্বিকের দূরত্ব ধরে রাখার মুহূর্তগুলো অদ্ভুত সুন্দর। অনির্বাণ চক্রবর্তী স্থির, নাছোড়, বিরক্ত পুলিশ অফিসার হিসেবে চরিত্রের দৃঢ়তা তুলে এনেছেন আগাগোড়া স্বাভাবিক অভিনয়ে। অরণ‌্যর চরিত্রের স্বল্প পরিসরে সাহেব ভট্টাচার্য ঠিকঠাক। তাঁর চরিত্রটাকে আরেকটু এক্সপ্লোর করা যেত। অনেকদিন পর প্রিয়া কার্ফাকে বড়পর্দায় দেখলাম। অভীকের স্ত্রীর চরিত্রে তিনি যথাযথ। ছোট্ট চরিত্রেই কমলেশ্বর মুখোপাধ‌্যায় বুঝিয়ে দিলেন তিনি জাত অভিনেতা। তবে ছবির চিত্রনাট‌্য প্রথমার্ধে শ্লথ, রহস‌্যের বুনোট আরও জমাট হতে পারত। কিছু খামতি থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধ অবশ‌্য পুষিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে এই থ্রিলারের ধাঁচ পরিচিত হলেও বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল অত‌্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পদ্মনাভ দাশগুপ্তর চিত্রনাট‌্যে ছবিটা দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে বেশি উপভোগ‌্য। তবে পুরে ছবিটাই টানটান
  • । বুদ্ধিমান দর্শক হয়তো ক্লাইম‌্যাক্স আগেই আন্দাজ করতে পারবেন। তবু ছবিটা শেষ অবধি ছাড়া যায় না।
  • তার কারণ তুখড় অভিনয়। ঋত্বিক চক্রবর্তী, ইশা সাহা, অনির্বাণ চক্রবর্তী তিনজনেই দুরন্ত।
Advertisement