সুকুমার সরকার, ঢাকা: দাবানলে জ্বলছে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকা। তাকে ঘিরে একেবারে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব! শনিবার বিকেলে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের গহীন বনে আগুন লাগার খবর জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন আধিকারিক কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম। তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এরই মাঝে অন্তত ২ কিলোমিটার এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়ার লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন নেভাতে বন বিভাগ, দমকল কর্মী, স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় যোগ দিয়েছে কোস্ট গার্ড, বিমান ও নৌ বাহিনীর পৃথক দল।
ঘটনাস্থলে বন বিভাগের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট, নৌবাহিনী, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনগণ অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করছেন। নিজস্ব চিত্র।
অগ্নিকাণ্ডে ইতিমধ্যে প্রায় ১০ একর বনভূমি (Forest) পুড়ে গিয়েছে। আগুন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চারদিকে ‘ফায়ার লেন’ তৈরি করা হয়েছে। বনের ভিতর মধু সংগ্রহে যাওয়া মউলদের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুরুতেই নৌবাহিনীর মোংলা ঘাঁটির লেফটেনেন্ট কমান্ডার আরফাতুল আরেফিনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি ফায়ার ফাইটিং টিম আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়েন। এর পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পাশের ভোলা নদী থেকে জল ওঠানোর জন্য পাইপ সংযোগ দেন। তবে নদীতে জোয়ার না থাকায় জল সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। দমকলের (Fire Tender) বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও শরণখোলার পাঁচটি ইউনিট রবিবার সকাল সাতটা থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। স্থানীয় দুই শতাধিক সাধারণ মানুষও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নিয়েছে।
[আরও পড়ুন: আচমকা ‘বেঁচে’ উঠল মৃত কিশোর! কাটোয়া হাসপাতালে ধুন্ধুমার]
এদিকে আগুন নেভাতে কাছাকাছি জলের উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে জল আনতে হচ্ছে। আগুন পুরোপুরি না নির্বাপণ পর্যন্ত তারা কাজ করবে। আগুনের গতি-প্রকৃতি বুঝতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চারপাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। গত মাসের শেষ দিকে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা বাংলাদেশের (Bangladesh) শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ে বনের অন্তত ১৫টি স্থানে আগুন দিয়ে গাছপালা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভূমিদস্যুরা জমি দখল করতে এই কাণ্ড ঘটায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড। নিজস্ব চিত্র।
শুধু গাছগাছালি নয়, এর ফলে বন্যপ্রাণীদেরও মৃত্যু ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণাগুণ। গত দুই সপ্তাহের উপর সেই আগুনে কয়েকটি পাহাড়ি বন পুড়ে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে চলছে এই বন পোড়ানো। মাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে গাছও জন্ম নেয় না। ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের আওতায় বনভূমি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮৮০ একর। এর মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে শাল, গজারি-সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সমৃদ্ধ বন রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা, প্রতিবাদে পথে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা]
প্রতি বছরের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্যে সড়কপথ থাকায় খুব সহজেই দুষ্কৃতীরা রাতে আবার কখনও দিনেও বনে আগুন দিয়ে যায়। শুকনো পাতায় মুহূর্তের মধ্যেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যারা এই কাজ করছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনিভাবে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বছরের পর বছর চলছে বন পোড়ানোর ঘটনা। এবার ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বিট এলাকায় পাহাড়ের চারটি স্থানে বড় অগ্নিকাণ্ডে পুড়িয়ে দেওয়া হল।