অমিতলাল সিং দেও, মানবাজার: মিলনকালে বনদপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিল জোড়া নেকড়ে! পুরুলিয়ার বনাঞ্চলে বনদপ্ততরের ক্যামেরায় এই প্রথম নেকড়ের ছবি ধরা পড়ায় দারুণ খুশি কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। ওই বনবিভাগের বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের ওই বিটের রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নেকড়ে ক্যামেরাবন্দি হয়। ওই বনবিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বান্দোয়ানে ট্র্যাপ ক্যামেরায় নেকড়ের ছবি পাওয়া গিয়েছে। এর থেকেই প্রমাণ হয়, এলাকার মানুষের সচেতনতায় বন ও বন্যপ্রাণ বাড়ছে।”
শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত, হিংস্র ধূসর লাল পশম যুক্ত এই নেকড়ে। শিকারে রীতিমতো ‘এমবুশ’ করার মতো দীর্ঘক্ষণ ধরে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। শিকারের প্রজাতি অনুযায়ী রণকৌশল পালটায় এই ধূর্ত বন্যপ্রাণ। কখনও একা। আবার কখনও দলবদ্ধ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে হরিণ,খরগোশের উপর। কম পরিশ্রমে দলে থাকা ক্লান্ত শিকারকে চটজলদি শনাক্ত করে কৌশলে তাকে দল থেকে বাইরে নিয়ে এসে শিকারে দক্ষ এই ভারতীয় নেকড়ে বা উলফ।
[আরও পড়ুন: টুইটার থেকে উধাও হবে নীল পাখি! বিপুল পরিবর্তনের ইঙ্গিত মাস্কের]
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ শ্রেণিতে ১ নম্বরে থাকা এই নেকড়ে বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। তবে অতীতে অযোধ্যা পাহাড়ে এই বন্যপ্রাণের ব্যাপক হারে অস্তিত্ব ছিল। ওই পাহাড় এলাকায় জঙ্গল ক্রমশ সাফ হতে থাকায় নেকড়ের মতো এই হিংস্র বণ্যপ্রাণ একেবারেই কমে গিয়েছে। বনদপ্তরের তথ্য বলছে, পুরুষ নেকড়ের ওজন ১৯ থেকে ২৫ কেজি হয়। সেই তুলনায় মাদির ওজন ১৭ থেকে ২২ কেজি। এরা মূলত ছোট ছোট এলাকায় ৬ থেকে ৮ টি করে একটি দলে থাকে। দিনের বেলা জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ের খাঁজে এরা থাকলেও সন্ধ্যার পর মূলত শিকারের খোঁজে ঘুরতে থাকে। সেই ক্ষেত্রে জঙ্গলে শিকার না মিললে তারা গ্রামেও হানা দেয়।
কংসাবতী দক্ষিণ বিভাগের এক আধিকারিক জানান, কয়েক মাস আগে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা দলমা রেঞ্জের রাইকা পাহাড়ের কোলে রাহামদা গ্রামে বেশ কয়েকটি ছাগলের মৃত্যু হয়। শিকারের ধরন দেখে সেই সময়ই বনদপ্তর অনুমান করে ওই হামলা নেকড়ের। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার জন্য রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলের একাধিক স্থানে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসায় বনদপ্তর। কিন্তু সেই সময় ওই ক্যামেরায় কোনও বন্যপ্রাণের ছবি ধরা পড়েনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি বনকর্মীরা।
সম্প্রতি ফের ২৫০০ হেক্টর জঙ্গল ঘেরা রাইকা পাহাড়ে চারটি ক্যামেরা বসানো হয়। আর তাতেই ধরা পড়ে এই জোড়া নেকড়ে। সঙ্গে ময়ূর। বনদপ্তরের অনুমান, নেকড়ে দুটোর মধ্যে একটি পুরুষ ও একটি মাদী। পুরুলিয়ার জঙ্গলে এর আগে বনদপ্তরের ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে হাতি, ময়ূর, হায়না, বন্যশুকর, প্যাঙ্গোলিন, সজারু, শ্লথ বিয়ার এমনকী লেপার্ডও। আর এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল নেকড়েও। ফলে উল্লসিত বন আধিকারিকরা।