অর্ণব আইচ: ‘আমরা দুস্থ। স্বামী ছেড়ে গিয়েছে। অসুস্থ মেয়ে শয্যাশায়ী। ছেলের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দু’টো খাবারও ভাল করে জোটে না।’
দুই মহিলার কাকুতি মিনতিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন দিল্লির যুবক। পরিবারের অবস্থা দেখতে তাদের বাড়িতেও যেতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভিনরাজ্যের যুবক জানতেন না যে, জায়গাটি সোনাগাছি ও ওই দুই মহিলা আসলে যৌনকর্মী। যুবক বুঝতেও পারেননি যে, তিনি তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন।
ভুলিয়ে ভালিয়ে যুবককে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে চলল লুটপাট। তাঁর মোবাইল কেড়ে নিয়ে ই ওয়ালেটের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা লুট করল যৌনকর্মীদের ওই চক্র। এই ব্যাপারে যুবক বড়তলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যার নামে ওই ই-ওয়ালেট, পুলিশ তাকে শনাক্ত করে। শনিবার রাতে উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটে তল্লাশি চালিয়ে গোপাল মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। টাকার লোভে সে যৌনকর্মীদের চক্রে যোগ দেয়। এর কিছুদিন আগে সোনাগাছির একটি ঘরের ভিতর আটকে রেখে একইভাবে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে এক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে গ্রেপ্তার হয় কয়েকজন যৌনকর্মী। একই পদ্ধতিতে ফের সোনাগাছিতে লুটপাট হওয়ায় বিষয়টির উপর পুলিশও গুরুত্ব দিচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ব্যাংক জালিয়াতির অভিযোগ, সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার ভিডিওকন কর্তা বেণুগোপাল ধূত]
পুলিশ জানিয়েছে, গত ২০ ডিসেম্বর দিল্লির ওই যুবক মেট্রো করে এসে নামেন শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনে। স্টেশনেই তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় দুই মহিলা। তারা নিজেদের দুঃস্থ বলে পরিচয় দিয়ে তাদের পরিবারের সবাই কতটা খারাপ অবস্থায় আছে, তার বর্ণনা দিতে শুরু করে। তারা বলে, এভাবেই সদয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে তারা মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছে। কোনওভাবে করছে গ্রাসাচ্ছাদন। প্রথমে যুবক তাদের বিশ্বাস করতে চাননি। তখনই দুই মহিলা সত্যতা যাচাই করার প্রস্তাব দেয়। যুবককে বলে, তাদের সঙ্গে গিয়ে বাড়ির অবস্থা দেখতে। যুবক সাহায্য করতে রাজি হয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে সোনাগাছির দিকে পা বাড়ান।
দুপুরে একলহমায় বুঝতেও পারেননি যে, সেটি যৌনপল্লি। তাঁকে একটি বাড়ির ভিতর নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে লুটপাট করা হয় তাঁর মানিব্যাগ ও মোবাইল। মানিব্যাগে বেশি টাকা ছিল না। তাঁকে হুমকি দিয়ে যৌনকর্মীরা বলে, তাঁর বাড়িতে ফোন করে বলা হবে যে, তিনি যৌনপল্লিতে এসে টাকা দেননি। এই বলে তাঁকে পুলিশের কাছে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগও করা হবে বলে হুমকি দেয় যৌনকর্মীরা। তাঁকে বাধ্য করা হয় ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা দিতে।
[আরও পড়ুন: চার্চে সেলফি তোলার সময় অগ্নিকাণ্ড, বালিকাকে বাঁচাতে গিয়ে জখম কসবা থানার পুলিশকর্মী]
লুটপাটের পর বাইরে বের করে দেওয়া হলে যুবক বড়তলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ই-ওয়ালেট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই শুরু হয় তদন্ত। অ্যাকাউন্টের মালিক গোপাল মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করার পর রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতকে জেরা করে যৌনকর্মীদের ‘গ্যাং’-এর অন্যদের শনাক্ত করে ধরার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।