অভিরূপ দাস: রেস্তরাঁর ধনেগুড়ো, হলুদগুড়োয় বিষাক্ত রঙ! যা খেলে হতে পারে ক্যানসারের মতো অসুখ। বোধনের আগে শহরের একাধিক রেস্তরাঁ পরিদর্শন করে তাজ্জব কলকাতা পুরসভা। দুর্গাপুজো উপলক্ষে শহরের ছোট-বড়-মাঝারি রেস্তরাঁগুলোয় এখন ঠাসা ভিড়। পুজোর এই ক’টা দিন হোটেল, রেস্তরাঁতেই লাঞ্চ, ডিনার সারেন অনেকে। সে সব খাবারের মান কেমন? স্বাস্থ্য সচেতন মশলাপাতি ব্যবহার করছেন রেস্তরাঁ মালিকরা? তা জরিপ করতেই ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের নেতৃত্বে মহানগরের পথে নেমেছিল কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ।
সম্প্রতি কাঁকুড়গাছি, বেনিয়াপুকুরের ডা. সুন্দরী মোহন অ্যাভিনিউ, সাউথ সিটি মল এলাকায় টহল দেয় কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের টিম। তিন জায়গার মোট ৪০টি রেস্তরাঁয় হানা দিয়ে ৬৭ রকম খাবার তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকরা।
কী পাওয়া গিয়েছে সেখানে? কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে খবর, কোথাও রেস্তরাঁর ধনে গুড়োয় পাওয়া গিয়েছে মেটানিল ইয়েলো, কোথাও লঙ্কাগুড়োয় ক্ষতিকর লাল রঙ, কোথাও আবার নকল হলুদ গুঁড়ো দিয়েই চলছে রান্না। যে ক্ষতিকর রঙগুলি ব্যবহার হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম মেটানিল ইয়েলো। যা ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাজারে হলুদের যা দাম তার চেয়ে সস্তায় পাওয়া যায় এই সিন্থেটিক রঙ। তা মেশালে খাবার হলুদও হয় অনেক বেশি। পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকরা মনে করছেন, বিক্রেতারা অত্যধিক লাভের লক্ষে এই সিন্থেটিক রঙ মিশিয়েই খাবার রঙচঙে করছেন।
সাধারণ জনতার প্রশ্ন একটাই। খাবার খেতে গিয়ে কিভাবে বুঝবো তাতে কৃত্রিম রঙ রয়েছে? যদিও ল্যাবরেটরিতে তা প্রমাণ করা অত্যন্ত সহজ। কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিক ডা. তরুণ সাফুই জানিয়েছেন, যে খাবারে মেটানিল ইয়েলো মেশানো তা টেস্ট টিউবে নিয়ে, কয়েক ফোটা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিয়ে ভালো করে ঝাঁকালেই সঙ্গে সঙ্গে তা গোলাপি রঙ ধারণ করবে। ল্যাবরেটরিতে ছাড়াও ক্ষতিকর মেটানিল ইয়েলো ধরা সম্ভব। খাঁটি হলুদগুড়ো এক চামচ এক গ্লাস জলে ফেললে হলুদ গুড়ো নিচে থিতিয়ে পড়বে। জল হালকা হলুদ রঙ রঙ ধারণ করবে। সেখানে মেটানিল ইয়েলো এক গ্লাস জলে ফেললে দ্রুত জল কড়া হলুদ রঙ নেবে। এদিন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, সমস্ত রেস্তরাঁ মালিকদের বলা হয়েছে, রান্না করতে সস্তার ক্ষতিকারক মশলা নয়। শুধুমাত্র ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার লাইসেন্স রয়েছে এমন সংস্থার মশলাপাতি দিয়েই রান্না করতে হবে। প্রতিটি দোকান মালিককে বলা হয়েছে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রান্না করতে হবে।