স্টাফ রিপোর্টার: ভারতীয় ফুটবলে ভালো বাঙালি স্ট্রাইকারের অভাব দেখা গিয়েছে সেই দীপেন্দু বিশ্বাসরা অবসর নিয়ে নেওয়ার পর থেকেই। জাতীয় দলেও এখানকার ফুটবলারদের উপস্থিতি হাতে গোনা। কখনও কখনও এমন পরিস্থিতিও হয়ে যায়, দেখা যায় বাঙালি কোনও ফুটবলারই দলে নেই! এই দোলাচলের মধ্যেও কোনও কোনও প্রতিভাকে ঘিরে আশার আলো দেখে কলকাতা ময়দান। তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে বাংলা। এমনই এক প্রতিভা কল্যাণীর আদিবাসীপাড়ার বছর চোদ্দোর ফুটবলার দিশম রাজ হাঁসদা।
সম্ভাবনাময় ফুটবলার হিসাবে পরিচিত দিশম ইতিমধ্যেই সুযোগ পেয়েছে এআইএফএফ-ফিফা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার এই কিশোরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখার অন্যতম কারণ শুধুমাত্র এই সুযোগ তৈরি করে নেওয়া নয়। গত মরশুমে বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমির হয়ে দূরন্ত পারফর্ম করাও আরেকটি কারণ। গতবার অনূর্ধ্ব-১৫ আই লিগে ১০ ম্যাচে ৭ গোল করেছে। তখন দিশমের বয়স ছিল ১৩ বছর। এআইএফএফ-ফিফা অ্যাকাডেমির ট্রায়ালে আসা পাঁচশোরও বেশি খুদে ফুটবলারদের মধ্যে বাছাই করা একুশ জনের দলে সুযোগ পেয়েছে দিশম।
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এই ফুটবলারকে। একই সঙ্গে তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমির কোচ, কর্তা, সাপোর্ট স্টাফদেরও। ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, "মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমির অনূর্ধ্ব-১৪ দলের স্ট্রাইকার দিশম রাজ হাঁসদা সম্প্রতি হায়দরাবাদে এআইএফএফ-ফিফা অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেয়েছে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৫ আই লিগে স্ট্রাইকার হিসাবে ১০ ম্যাচে ৭ গোল করেছে। তার এই সাফল্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য জানাই শুভেচ্ছা। একই সঙ্গে বিএফএ-র সঙ্গে যুক্ত সকল কোচ, স্টাফ, সাপোর্ট স্টাফ ও আধিকারিককে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।"
কল্যাণীর আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল বীর সিধু নগরের বাসিন্দা ছোট্ট দিশম ফুটবল শুরু করেছিল সাড়ে ছয় বছর বয়সে কল্যাণী পুরসভার ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। সেখান থেকে ছয় বছর অনুশীলন করার মাঝেই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল অনূর্ধ্ব-১২ জেলা লিগে। জেলা কোচের চোখে পড়ে যাওয়ার পর তাঁরই পরামর্শে বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ট্রায়ালে দিশমকে নিয়ে আসেন তাঁর বাবা বৈদ্যনাথ হাঁসদা। পেশায় স্কুল শিক্ষক বৈদ্যনাথ বলেন, "ছোটবেলা থেকেই ও ফুটবলের ভক্ত। এবার বড় জায়গায় সুযোগ পেয়েছে। আশা করব এভাবেই ও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাবে একদিন।"
বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার আগে কল্যাণী মিউনিসিপ্যাল অ্যাকাডেমি থেকে দিশম অনুশীলন করতে চলে এসেছিল স্থানীয় শারজম বীর ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। এই অ্যাকাডেমির কোচিং করানো সাগ্রাম মান্ডি, বুধিরাম টুডু, লালমোহন হাঁসদারা ময়দানের চেনা মুখ। সাগ্রাম আবার দিশমদের পাশের পাড়ারই বাসিন্দা। দিশম নিজে স্ট্রাইকার আর বাঁ পায়ের ফুটবলার হওয়ায় তাঁর আদর্শ লিওনেল মেসি। তবে ভারতীয়দের মধ্যে সুনীল ছেত্রীও প্রিয় তার। এতবড় সুযোগ পাওয়ার পর দিশম বলছিল, "আমি ভবিষ্যতে দুই প্রধানে শুধু নয়, জাতীয় দলেও খেলতে চাই। সুনীল ছেত্রীর মতো ধারাবাহিকভাবে গোল করতে।" এমন একটা সময় এই আদিবাসী ফুটবলার জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছে, যখন জাতীয় দলে স্থানীয় ফুটবলারদের আতশকাচ দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে। ওর স্বপ্ন সফল হলে লাভবান হবে বাংলার ফুটবলই।
