স্টাফ রিপোর্টার: টেনিস বিশ্বের এই মুহূর্তে এক নম্বর যিনি, ইতালির সেই জানিক সিনার একটা জিনিস করবেন বলে ঠিক করে ফেলেছেন। তা হল, বৃহস্পতিবার স্পেনকে যদি ইউরো- (Euro Cup 2024) যুদ্ধে হারায় ইতালি, তা হলে তিনি একটা চিঠি লিখবেন! লিখবেন বিশ্বের দু’নম্বর টেনিস তারকাকে, কার্লোস আলকারাজকে, যিনি স্পেন-জাত। ‘‘ইতালি যদি হারায় স্পেনকে, আমি তো ঠিক করে ফেলেছি একটা চিঠি লিখব আলকারাজকে। আমার প্রিয় বন্ধু ও। কিন্তু তবু লিখব।’’ সহাস্য এক সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছেন সিনার।
আদ্যোপাদান্ত ফুটবল-পাগল হলে কী হবে, জার্মানি ইউরোয় যেতে পারেননি সিনার। এটিপি ৫০০ টুর্নামেন্ট খেলতে তিনি এখন ব্যস্ত। কিন্তু লুসিয়ানো স্পালেত্তির ইতালি কী করছে, কেমন খেলছে, খোঁজখবর রাখতে ভুলছেন না। সিনার বলছিলেন, ‘‘আমি ফুটবল ভালোবাসি। ছোটবেলায় তো খেলতামও। যতই ব্যস্ততা থাক না কেন, ইউরোয় ইতালির একটা খেলাও আমি মিস করব না। আর ঠিক করেছি, জাতীয় দলের খেলা আমি একা বসে দেখব। কারণ, আমি একটু বেশি আবেগপ্রবণ ফুটবল নিয়ে। তাই একা দেখাটাই আমার পক্ষে ভালো।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল, সিনার শেষ পর্যন্ত আলকারাজকে চিঠিটা লিখতে পারবেন কি? স্পেনকে ইতালি আদৌ হারাতে পারবে কি? আলবেনিয়াকে গত শনিবার যতই প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিক ইতালি, গত ইউরোজয়ীদের খেলা ফুটবল সমালোচকদের হৃদয় ভরাতে পারেনি বিশেষ। বরং এখনও অনেকে সন্দিহান, আজুরিরা এবারের ইউরোয় শেষ পর্যন্ত যেতে পারবে কতটা? তার উপর স্পেন। স্পেনের ‘ফুটবল স্কুল’। যা বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে চলছে। চলে, বর্তমানে একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত। সে স্কুলের ফুটবল-দর্শন মেনে লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়াকে প্রথম ম্যাচে তিন গোলে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে স্পেন। লা রোখার যে ‘ফুটবল স্কুল’কে সমঝে চলছেন ইতালি কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি স্বয়ং!
[আরও পড়ুন: ‘সব ফাঁস করে দেব’, বরখাস্ত হয়েই ফেডারেশন কর্তাদের গোপন কথা প্রকাশ্যে আনার হুমকি স্টিমাচের]
‘‘স্পেন এখন আর নিছক ফুটবল খেলে না। ওরা ফুটবল স্কুলে পরিণত হয়েছে,’’ বুধবার প্রাক্ ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গিয়েছেন স্পালেত্তি। ‘‘বছরের পর বছর ধরে স্পেন একই ঘরানার ফুটবল খেলে গিয়েছে। মনে রাখবে, একই দর্শন যুগের পর যুগ ধরে রাখতে গেলে যথেষ্ট সাহস লাগে। আর স্পেনের সেই ফুটবল স্কুলের সঙ্গে লড়তে গেলে আমাদেরও নিজস্ব ফুটবল স্কুলকে বিশ্বাস করতে হবে। বন্য জেদ নিয়ে স্পেনকে দেখাতে হবে যে, আমাদের ফুটবল স্কুলও খুব কম যায় না। স্পেন টিমটা খুবই ভালো। ওদের ভালো প্লেয়ার রয়েছে। লড়াকু চরিত্র রয়েছে। ওরা আক্রমণ করতে আমরা কী ভাবে তার পাল্টা দিই, সেটা দেখার,’’ একটানা গড়গড়িয়ে বলে যান ইতালি কোচ।
ক্রোয়েশিয়া বনাম স্পেন ম্যাচটা মন দিয়ে দেখেছেন স্পালেত্তি। দেখেছেন, ক্রোয়েশিয়ার কোন ফাঁকফোঁকর গলে বারবার আক্রমণ শানিয়েছে স্পেন। ‘‘স্পেনকে সামান্যতম জায়গা দিলেও চলবে না আমাদের। আমাদের সেই ফুটবলটা খেলতে হবে, যা এই পর্যায়ে এসে খেলা দরকার। আবারও বলছি, আমাদের ফুটবলের যে নিজস্ব ঘরানা রয়েছে, সেটাকে বার করে আনতে হবে,’’ বলে দিয়েছেন ইতালি কোচ। ইতালির ‘নিজস্ব ঘরানা’ কাকে বলে, সেটা জানে ফুটবল বিশ্ব। ইতালীয় রক্ষণ যে ভাঙা কতটা দুঃসহ, বারবার তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ‘কাতানেচিও’ সিস্টেম তো ভুবনবিখ্যাত। কিন্তু অতীতে পাওলো মালদিনি, আলেসান্দ্রো নেস্তা, ফাবিও কানাভারো, কিয়েলিনি, বোনুচ্চির মতো বরেণ্য ডিফেন্ডার খেলেছেন ইতালির হয়ে। স্পালেত্তির টিমে এখন সেখানে বাস্তোনি-ডিমার্কোদের মতো ডিফেন্ডার। সম্ভব তা দিয়ে স্পেনকে থামানো?
[আরও পড়ুন: আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুপার এইট অভিযান শুরু ভারতের, খেলতে পারেন কুলদীপ]
‘‘বললাম তো, আমরা নিজেদের ঘরানা পেশ করিনি বলে দিন শেষে মন খারাপ করতে চাই না। দরকারে জামাকাপড় নোংরা করতে তৈরি আমরা,’’ তির্যক হেসে বলে দিয়েছেন স্পালেত্তি। ‘‘আমি জানি এটা আমার কেরিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আর কী জানেন, জীবনে কখনও না কখনও পরিবারের কাউকে না কাউকে আমাদের নিজেদের গল্প বলার থাকে। বয়স তো আমাদের সবারই হবে একদিন, তাই না?’’
কী দাঁড়াল?
স্পেন খেলবে, নিজেদের পাসিং ফুটবলই খেলবে আজ। কিন্তু ইতালি তাদের চিরাচরিত ‘ব্র্যান্ড অফ ফুটবল’ পেশ করলে কিন্তু গোল পেতে গলদঘর্ম হবে মোরাতা-লামিন ইয়ামালদের।