দুলাল দে, মুম্বই: আচ্ছা আইএসএল কি হবে? হলে কবে হবে? এফএসডিএল কি আইএসএলের জন্য বিডে অংশগ্রহণ করবে? তার মধ্যে আবার ৫ নভেম্বরের জায়গায় বিড পেপার জমা দেওয়ার জন্য দু’দিন পিছিয়ে ৭ নভেম্বর করে ডেডলাইন বেঁধে দিল ফেডারেশনের টেন্ডার কমিটি। হঠাৎ এরকম কেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল?
এরকম হাজারও একটা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে। তাই সকলের আগ্রহ নিরসনের জন্য সরাসরি বলে দেওয়া যাক, এই মরশুমের ইন্ডিয়ান সুপার লিগ করার জন্য তৈরি রয়েছে এফএসডিএল। প্রতি বছর যে দলটা নিয়ে আইএসএল পরিচালনা করা হয়, সেই দলের প্রত্যেক সদস্য, ভেন্ডার প্রত্যেককে আইএসএল শুরুর জন্য স্ট্যান্ডবাই করে রাখা আছে। কিন্তু আইএলএলের দায়িত্ব তখন নেবে এফএসডিএল, যখন সেটা নিজেদের শর্তে করতে পারবে।
আইএসএল করার জন্য প্রতি বছর ৩৭.৫ কোটি টাকা দেবে এফএসডিএল। এর বাইরে আইএসএল চালানোর জন্য প্রতি বছর ১৫০-২০০ কোটি টাকা খরচ করবে এফএসডিএল। রেলিগেশন-প্রমোশন মেনে নিয়ে নিজেদের তৈরি করা ফ্যাঞ্চাইজি দলগুলির অস্তিত্ব সংকটের মুখে ফেলে দেবে এফএসডিএল। আর আইএসএলে চালাবে গভর্নিং কাউন্সিল। যেখানে টাকা পয়সা থেকে পুরোটাই আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থাকবে শুধুমাত্র এফএসডিএলের, কিন্তু গভর্নিং কাউন্সিলে যে কোনও সিদ্ধান্তর মিটিংয়ে এফএসডিএলের প্রতিনিধি থাকবে মাত্র ‘এক’ জন। অন্যান্য ইস্যু ছেড়ে দিন। শুধুমাত্র এই ইস্যুটাতে এসেই আইএসএলের জন্য বিডে অংশ নেওয়া এফএসডিএলের জন্য প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছে। ফেডারেশন যে বিড পেপার জমা দেওয়ার জন্য আরও দু’দিন অতিরিক্ত সময় নিল, তা কোনওমতেই এফএসডিএলের অনুরোধের জন্য নয়। শোনা যাচ্ছে, অন্য একটি কোম্পানি বিড করার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আরও দু’দিন সময় চেয়েছে ফেডারেশনের কাছে। আর তাই ৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিড করার ডেডলাইন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। টেন্ডার কমিটির শর্তগুলিতে বিড করার জন্য খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও আইএসএল করার জন্য সবরকমের প্রস্তুতি কিন্তু নিয়ে রেখেছে এফএসডিএল।
আইএসএল করতে চায় বলেই টেন্ডারের শর্তগুলি দেখে প্রায় ২০০টির মতো প্রশ্নের ব্যাখ্যা চেয়েছিল এফএসডিএল। তাতে টেন্ডার কমিটি যে উত্তর দিয়েছে, তাতে তিনটে যে মূল প্রশ্ন তুলেছিল এফএসডিএল, তা হল গভর্নিং কাউন্সিল, বার্ষিক ৩৭.৫ কোটি টাকা এবং রেলিগেশন। এই তিনটি পয়েন্টেই কোনও নড়চড় করেনি আইএসএলের টেন্ডার কমিটি। ফলে বর্তমানের টেন্ডার শর্তে আইএসএলের টেন্ডারের জন্য এফএসডিএলের বিড করা আপাতত বেশ অসম্ভব মনে হচ্ছে। অন্য কোনও কোম্পানী যদি বিড করে টেন্ডার জিতে যায়, তাহলেও কবে আইএসএল শুরু হবে বলা এই মুহূর্তে কঠিন ব্যাপার। আর কোনওভাবে আইএসএলের নিয়ে এফএসডিএলের সঙ্গে যদি শেষ পর্যন্ত ফেডারেশনের চুক্তি সম্পাদিত হয়, তাহলেও জানুয়ারির শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুর আগে এই মরশুমের আইএসএল করা প্রায় অসম্ভব।
আইএসএল চালানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এফএসডিএল যেহেতু সব দিক থেকে তৈরি হয়ে রয়েছে, তাই নভেম্বরের শেষের দিকেও যদি আইনি দিক খতিয়ে দেখে এফএসএল ডিএলের হাতে কোনওভাবে আইএসএল চালানোর দায়িত্ব আসে, তাহলেও জানুয়ারির শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকের আগে শুরু করা প্রায় অসম্ভব। যেহেতু এই মরশুমে সব কিছুই ঘেঁটে রয়েছে, তাই এই মরশুমকে হয়তো স্পেশ্যাল কেস হিসেবে সিঙ্গল লেগে ‘মে’ পর্যন্ত আইএসএল করে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে তার আগে আইএসএলের দায়িত্ব পেতে হবে এফএসডিএলকে। আর সেটা স্বাধীন ভাবে।
গভর্নিং কাউন্সিলের জায়গায় কেন আইএসএল স্বাধীনভাবে এফএসডিএল চায়, তার একটা উদাহরণ দিলেই পুরো ব্যাপারটা বোধগম্য হবে। একবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এফএসডি গোয়ার সঙ্গে ম্যাচ ছিল এটিকে’র। গোয়া বিমান বন্দরের সমস্যার জন্য এফসি গোয়ার কলকাতায় উড়ে আসাই সম্ভব ছিল না। শেষে রিলায়েন্স নিজেদের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে স্পেশ্যাল ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে এফসি গোয়াকে উড়িয়ে এনে রাত ১০টার সময় যুবভারতীতে ম্যাচের আয়োজন করে। যা করেছিল, সব নিজেদের সিদ্ধান্তে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এরকম কিছু সমস্যা তৈরি হলে, সব কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনা করে অনুমতি নিতে হবে দিল্লির গভর্নিং কাউন্সিলের। যে আলোচনায় ৬ জনের কমিটিতে একটি মাত্র ভোট থাকবে এফএসডিএলের। অর্থাৎ ক্রীড়াসূচি, সম্প্রচার থেকে শুরু করে ভেন্যু তৈরি, সব কিছু নিয়ে আগে যেরকম স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে পারত এফএসডিএল, গভর্নিং কাউন্সিলের সিদ্ধান্তর জন্য বসে থাকলে, এই মরশুমে আইএসএলটা কি ঠিক সময়ে শুরু হতে পারবে? এরকম নানা ভাবনাচিন্তা ঘোরাফেরা করছে। আর সেই কারণেই আইএসএল নিয়ে জটা পাকিয়ে রয়েছে।
তবে পাল্টা একটা কথাও শোনা যাচ্ছে, যার জন্য না কি বিড পেপার জমা দেওয়ার ডেডলাইন দু’দিন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অসমর্থিত সূত্রে খবর, কলকাতার শ্রাচি স্পোর্টস জার্মানির ‘স্পোর্টস ফাইভ’ কোম্পানির সঙ্গে একটা কনসোর্টিয়াম তৈরি করে আইএসএলের জন্য বিড করতে পারে। কিছুদিন আগে বিএসএলের জন্য জার্মান ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে শ্রাচি স্পোর্টস। এবার তাই জার্মান কোম্পানি ‘স্পোর্টস ফাইভ’-এর সঙ্গী হয়ে আইএসএলে ঢুকতে চাইছে তারা। তবে স্পোর্টস ফাইভ আর শ্রাচির এই সংযুক্তি সরকারিভাবে পূর্ণতা পায়নি এখনও। আর তাই ডেডলাইন আরও দু’দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা না হলে কিন্তু বিড থেকে আইএসএলের টেন্ডার পাশ হওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
