দুলাল দে, মারগাঁও: আইএসএলের টেন্ডার প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ২০০টির মতো প্রশ্নমালা তৈরি করে টেন্ডার কমিটির কাছে পাঠায় এফএসডিএল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকদিন অপেক্ষার পর এফএসডিএলের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে টেন্ডার কমিটি। এই উত্তরগুলি পাওয়ার পর এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এফএসডিএল কি সত্যিই আইএসএলের বিডে অংশগ্রহণ করবে? এই প্রতিবেদন যখন লিখছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আইএসএলের বিডে অংশ নেয়নি এফএসডিএল। হাতে আর মাত্র তিনটি দিন। এরমধ্যে সত্যিই কি আইএসএলের টেন্ডারে অংশ নেবে এফএসডিএল?
এফএসডিএলে যে প্রশ্নগুলি মূলত ছিল, সেগুলিকেই নস্যাৎ করে দিয়েছে আইএসএলের টেন্ডার কমিটি। যেমন বছরে ৩৭.৫ কোটি দেওয়ার প্রসঙ্গে জানিয়েছে, সেটা দিতেই হবে। অবনমন নিয়ে এফএসডিএল প্রশ্ন তুললে সেই প্রসঙ্গেও টেন্ডার কমিটি তাদের উত্তরে জানিয়ে দিয়েছে, শীর্ষ আদালত নির্দেশে দিয়েছে, দেশের এক নম্বর লিগে চ্যাম্পিয়নশিপ এবং রেলিগেশন দু'টোই থাকবে। ফলে আইএসএলে তা রাখতে টেন্ডার কমিটি বাধ্য। এরপর ভিএআর থেকে টেলিকাস্ট রাইটস-বিভিন্ন ইস্যুতে এফএসডিএলকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী ক্ষেত্রে গভর্নিং কাউন্সিল বসে সিদ্ধান্ত নেবে। যে গভর্নিং কাউন্সিলে ফেডারেশনের পক্ষে থাকবেন দু'জন প্রতিনিধি। ব্রডকাস্টারের পক্ষে একজন। ক্লাবেদের পক্ষে একজন এবং কোম্পানির পক্ষে একজন। এছাড়া ক্রীড়াসূচি থেকে আরও নানা ব্যাপারে এফএসডিএলের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে টেন্ডার কমিটি। যে উত্তরগুলি স্বাভাবিকভাবেই এফএসডিএলের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। কিন্তু এটাও ঠিক ভারতীয় ফুটবলে থাকতেই এসেছে এফএসডিএল। এখনও ভারতীয় ফুটবলে আর্থিক বিনিয়োগে ভীষণভাবে আগ্রহী তারা। যে কারণে, আইএসএল চালানোর জন্য যে ডিপার্টমেন্টগুলি ছিল, সব ডিপার্টমেন্ট এখনও বহাল রয়েছে। শোনা যাচ্ছে ক্রীড়াসূচিও তৈরি করা আছে। কিন্তু সম্পূর্ণ স্বার্থের বিরোধী অবস্থানে গিয়েও তারা বিনিয়োগ করবে এমনটাও নয়। ফলে ৫ নভেম্বরে টেন্ডারের আবেদনপত্র খোলা হলে, তাতে বিডার হিসেবে এফএসডিএলের নাম থাকবে কি না, এ ব্যাপারে ফেডারেশন কর্তারাও এখনও নিশ্চিত নন। এফএসডিএল নিয়ে এতটা আলোচনার কারণ, আইএসএলের টেন্ডার নিয়ে এখনও পর্যন্ত অন্য আবেদনকারীদের মধ্যে সেভাবে কোনও আগ্রহ দেখা যায়নি। এফএসডিএল যেরকম টেন্ডারের খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রচুর প্রশ্ন করেছে, অন্য কোম্পানিগুলির সেরকম কোনও বিশেষ প্রশ্ন নেই।
জার্মানির কোম্পানি সুপার সাবের দিকেও তাকিয়ে রয়েছে অনেকে। এই কোম্পানিতে আগে দীপক সিং ছিলেন। যিনি সাফের মার্কেটিং দেখতেন। তিনি অবশ্য এখন আর নেই। ফেডারেশনের একটা অংশের বক্তব্য হল, ৫ তারিখ পর্যন্ত দেখাই যাক না কি হয়। তারপরই আইএসএলের ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এর আগেও তো এফএসডিএল ছিল না। তখন কি ভারতে ফুটবল হয়নি? এফএসডিএলের আগে 'জি স্পোর্টস' ছিল। কিন্তু ভারতীয় ফুটবল নিয়ে তারা এতটাই বিরক্ত ছিল যে, শেষের দিকে কোনও ম্যাচও সম্প্রচার করত না। এই ইস্যুতে তখন আই লিগের ক্লাবগুলির সঙ্গে প্রায়ই বিরোধ লেগে থাকত ফেডারেশনের। এক সময় বিরক্ত হয়ে ভারতীয় ফুটবল থেকে হাত তুলে নেয় 'জি'। তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে ভারতীয় ফুটবলের দায়িত্ব নেয় রিলায়েন্স।
ফেডারেশন কর্তাদের যা মনোভাব, তাতে ৫ নভেম্বরে যদি দেখা যায়, আইএসএলের টেন্ডারে কেউ আবেদন করেনি, তখন আদালতকে না জানিয়ে ফেডারেশন নিজেরাই নতুন কোনও প্রতিযোগিতার ব্যাপারে ক্লাবগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারে। তাতে অবশ্য ক্লাবগুলির বক্তব্য হল, এই প্রতিযোগিতা চালাতে টাকা দেবে কে? ব্রডকাস্টিং পার্টনার কে হবে? এরকম নানা প্রশ্ন রয়েছে। আবার এরকমও হতে পারে, টেন্ডারে কেউ অংশ না নিলে সরাসরি এফএসডিএলের সঙ্গেই ফের আলোচনায় বসতে পারে ফেডারেশন। তখন টেন্ডারের শর্তর বাইরে গিয়েই আলোচনা চালাতে হতে পারে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আইএসএল নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।
