মোহনবাগান: ২ (কামিংস, আপুইয়া)
জামশেদপুর: ০
দুই পর্ব মিলিয়ে ৩-২ গোলে জয়ী মোহনবাগান।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মায়াবী রাত ফিরল যুবভারতীতে। ঠিক যেন লিগের ওড়িশা ম্যাচের মতো করে। সেখানে ৯৩ মিনিটে গোল করে মোহনবাগানকে লিগ শিল্ড এনে দিয়েছিলেন দিমি পেত্রাতোস। আর সেখান থেকে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লেগের নির্ধারিত সময়ের ম্যাচ তখন প্রায় শেষ মুহূর্ত। ১-০ গোলে জিতে আছে মোহনবাগান। কিন্তু দুই পর্ব মিলিয়ে ফলাফল ২-২। প্রায় ষাট হাজার সবুজ-মেরুন জনতার যুবভারতীতে তখন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। নির্ধারিত সময়ের ম্যাচ গড়াতে চলেছে অতিরিক্ত সময়ে। ঠিক সেই সময়, যেন ঠিক সেই সময়টাই নিজের জন্য বরাদ্দ করে রেখেছিলেন আপুইয়া। চোট কাঁটা উড়িয়ে দলে ফিরেছেন। আর শেষ মুহূর্তে তাঁর পা থেকে ছুটল দূরপাল্লার শট। নাকি রকেটের বেগে শট বলাটাই ভালো দেখাবে! সেই আগুনে শট জালে জড়াতেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেল মোহনবাগানের (Mohun Bagan Super Giant)।
'প্রতিশোধের ম্যাচ'- অনেকটা এরকম ভাবেই আখ্যা দেওয়া হচ্ছিল আইএসএল সেমিফাইনালে মোহনবাগানের সঙ্গে জামশেদপুরের দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচকে। যে দল লিগ পর্যায়ে শীর্ষে ছিল, তারা আচমকাই প্রথম লেগে হেরে যায় জামশেদপুরে। লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগানের আত্মাভিমানে ঘা লাগতেই পারে! আর লড়াইটা তো শুধু মাঠে নয়, 'প্রতিশোধে' আগুন ছিল মাঠের বাইরেও। জেমি-দিমিরা কথা দিয়েছিলেন, তাঁরা 'বদলা' নেবেন। কথা রাখল মোহনবাগান। ৫১ মিনিটে কামিংস গোল করলেন পেনাল্টি থেকে। আর শেষ মুহূর্তে গোলার মতো শটে মোহনবাগানকে ফাইনালে তুললেন আপুইয়া। যুবভারতীতে ২-০ গোলে জামশেদপুরকে উড়িয়ে ফের আইএসএলের ফাইনালে মোহনবাগান (Mohun Bagan Super Giant)। দুই পর্ব মিলিয়ে ফলাফল ৩-২।
এদিন ঝড়ের বেগে শুরু করেছিল মোহনবাগান। অনিরুদ্ধ থাপার সঙ্গে মাঝমাঠে ছিলেন চোট সারিয়ে ফেরা আপুইয়া। আক্রমণভাগে ম্যাকলারেনের পিছনে ছিলেন কামিংস। দুদিকে আশিক কুরুনিয়ান ও লিস্টন কোলাসো। শুরু থেকে শুধুই আক্রমণ, আক্রমণ ও আক্রমণ। কোনও রকমে রক্ষণভাগ সামলাচ্ছিলেন জামশেদপুরের প্রণয় হালদাররা। কার্ডের জন্য স্টিফেন এজে, আশুতোষ মেহতারা ছিলেন না। সেখানে প্রথমার্ধে সবুজ-মেরুন ঝড়ের সামনে পাস মার্ক পেল জামশেদপুরের রক্ষণভাগ।
প্রথমার্ধে এত আক্রমণ আইএসএলের আর কোনও দল কি করতে পেরেছে? নাকি এত ক্রস কোনও ম্যাচ তুলতে পেরেছে? শুরু করা যাক, ২ মিনিটে লিস্টনের ফ্রি-কিক থেকে। তারপর থাপার একটি দূরপাল্লার শট সেভ করেন আলবিনো গোমস। আশিস রাইয়ের শটও কোনও রকমে বাঁচান জামশেদপুরের গোলকিপার। কামিংস বল উড়িয়ে দিলেন বারের উপর দিয়ে। আবার গোললাইন থেকেও বল ক্লিয়ার করেন সৌরভ দাস। তবে প্রথমার্ধের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি মিস করলেন কামিংস। সবই হল, শুধু প্রথমার্ধে গোলটিই হল না। জামশেদপুরও যে আক্রমণে ওঠেনি তা নয়। জর্ডান মারে একা লড়াই করে গেলেন মোহনবাগানের অর্ধে। তাঁর একটি শটও বাঁচান বিশাল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আক্রমণ শানায় জামশেদপুর। আচমকাই দূরপাল্লার শট মারেন জাভি। তার একটু পরেই ফের গোলের সহজ সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। কামিংস, লিস্টন, জেমিরা শুধু জালে বল জড়ানো ছাড়া আর সবই করলেন। অবশেষে 'ডেড লক' ভাঙল ৫১ মিনিটে। কামিংসের কর্নার হাতে লাগে প্রণয়ের। পেনাল্টি নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না রেফারি তেজস নাগভেঙ্করের। আর পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করলেন না কামিংস। ষাট হাজারের যুবভারতী তখন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে। 'রক্তের স্বাদ' পেয়েছে মোহনবাগানের ফুটবলাররাও। একটু পরেই আশিসের ক্রস কোনও মতে ক্লিয়ার করেন জামশেদপুরের ডিফেন্ডার সিরকোভিচ। ম্যাকলারেনের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
মাঝে অবশ্য আক্রমণের ঝাঁজ কিছুটা কমে। বাধ্য হয়ে আশিকের জায়গায় মনবীরকে নামান মোলিনা। এদিকে একের পর এক সুযোগ মিস করা কামিংসের জায়গায় এলেন বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞ সৈনিক দিমি পেত্রাতোস। তাতেও গোল আসছিল না। সেটা যে এরকম নাটকীয়তা নিয়ে আসবে তা কে জানত? ম্যাচের একেবারে শেষবেলায় আপুইয়ার 'গোলাসো'। বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে মারা সেই বল যখন জালে জড়াচ্ছে, তখন বোধহয় কোনও মোহনবাগান সমর্থকই বসে থাকতে পারেননি। লক্ষ লক্ষ সমর্থকের আবেগ, ভালোবাসা জড়িয়ে গেল জামশেদপুরের জালে। যুবভারতীতে ফিরতি লেগে ২-০ গোলে জিতল মোহনবাগান। সব মিলিয়ে ফলাফল ৩-২। এই নিয়ে টানা তৃতীয়বার আইএসএল কাপ ফাইনালে উঠল সবুজ-মেরুন। যেখানে সামনে সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু। ফাইনাল তো যুবভারতীতেই। গতবারের অধরা কাপ স্পর্শ করার সুযোগ ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই শুভাশিসদের সামনে।