প্রসূন বিশ্বাস: অনুশীলন শেষ করে যুবভারতীর ট্রেনিং গ্রাউন্ড থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠতে গিয়ে কামিংস দেখলেন কয়েকশো সমর্থক তাঁকে দেখে ‘কামিংস... কামিংস’ চিৎকার করছেন। অজি তারকা সেদিকে যেতে চাইছিলেন। কিন্ত ওই শ’খানেক মানুষের মধ্যে যেতে বারণ করলেন নিরাপত্তা কর্মীরা। শনিবার সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ফাইনাল। যদি চোট লাগে! কামিংস গেলেন না, কিন্তু দু’হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে আকাশের দিকে করে যে চিৎকারটা করে দু’বার ‘জয় মোহনবাগান (Mohun Bagan) ’ বললেন, জবাবে ওই শ’খানেক সমর্থকের ‘জয় মোহনবাগান’ ধ্বনি যেন আকাশ কাঁপিয়ে দিল।

ঠিক তখনই পাশের মাঠে সদ্য অনুশীলনে নামছিলেন সুনীল ছেত্রীরা। তাঁরাও বোধহয় শুনতে পেরেছেন সেই ধ্বনি। আকাশে তখন আসন্ন চৈত্র পূর্ণিমার বৃত্তাকার চাঁদ প্রস্তুত হচ্ছে শনিবারের জন্য। সেই চাঁদের ম্লান আলোয় চিকচিক করে উঠছে যুবভারতীতে উপস্থিত শয়ে শয়ে মোহনবাগান (Mohun Bagan) সমর্থকের প্রত্যাশাভরা মুখ। শনিবার অতীতকে ছাপিয়ে গিয়ে নতুন ইতিহাস লিখবেন শুভাশিসরা, মোহনবাগান ফুটবলারদের প্রতি সেই আস্থা দেখাচ্ছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। ইতিমধ্যেই যুবভারতীর প্রত্যেকটা গেটের বাইরে চ্যাম্পিয়ন ২০২৫ লেখা মোহনবাগান জার্সি বিক্রির চাহিদা চোখে পড়ার মতো। টিকিটের চাহিদার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। অনলাইনে তো নেই। এমনকী টিকিট রিডেম্পশন করতে আসা ফুটবলপ্রেমীরাও কমপক্ষে দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়ে গিয়েছেন। শনিবার গ্যালারি উপচে পড়বে নিঃসন্দেহে।
মোহনবাগান জনতার সবথেকে যে বিষয়ে আগ্রহ তা হল, মনবীর সিংয়ের চোট কেমন আছে? বৃহস্পতিবারই মনবীর পুরোদমে অনুশীলন করেছিলেন। এদিনও তার অন্যথা হল না। ফাইনালের আগের দিনের মহড়াতে মোলিনা সেট-পিসের উপর জোর দিলেন। দুই দিক থেকে একের পর এক ক্রস করিয়ে গেলেন মনবীর-লিস্টনদের দিয়ে। কামিংসরা ফিনিস করলেন। অনুশীলনে জেমি ম্যাকলারেন ছিলেন যথেষ্টই সিরিয়াস। মোহনবাগানের ফাইনালের সম্ভাব্য দলে চার রক্ষণের ফুটবলার হিসাবে থাকতে পারেন শুভাশিস, আলবার্তো, টম ও আশিস। মাঝমাঠে মনবীর, অনিরুধ, আপুইয়া ও লিস্টন। সামনে কামিংস ও ম্যাকলারেন।
গতবারের ফাইনালে হারটা আর মাথায় রাখেননি শুভাশিসরা। বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে নামার আগে মোহনবাগান অধিনায়ক বলছেন, “আমরা সবসময় ফাইনালে নামার আগে আত্মবিশ্বাসী। আমরা পরপর তিনবার ফাইনাল খেলতে নামব। শনিবার কারা ভালো খেলবে সেটাই দেখার। এই ম্যাচে যত সম্ভব ভুল কম করে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।” ঘরের মাঠে পূর্ণ গ্যালারির সামনে খেলা নিয়ে আরও বলছেন, “ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে খেলতে ভালো লাগে। ওদের সঙ্গে খেলাটা আমি সবসময়ই উপভোগ করি।”
মোহনবাগানের অন্যতম শক্তি গোলকিপার বিশাল কাইথ। এই মরশুমে ১৫টা ক্লিনশিট রেখেছেন তিনি। সুনীল ছেত্রীর মতো স্ট্রাইকারকে আটকানো তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে শনিবার। এই মরশুমে ইতিমধ্যেই ১৪টি গোল করে ফেলেছেন সুনীল। যদিও আলাদা করে সুনীলকে আটকানো নয়, গোটা বেঙ্গালুরুকে নিয়ে পরিকল্পনা করছেন জোসে মোলিনা। তবে মোহনবাগান কোচ চাইবেন, নব্বই মিনিটেই ম্যাচ শেষ করতে। যদি না হয় টাইব্রেকারে বিশাল-ভরসা তো আছেই।