সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোনায় মোড়া ইতিহাস যেন আরও উজ্জ্বল। শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় যুবভারতীতে হাজার ষাটেক ভক্তের উদ্বেলিত উচ্ছ্বাসে মোহনবাগান (Mohun Bagan) সেই কীর্তি গড়ল যা এর আগে আইএসএলের আর কোনও দল পারেনি। ঘরের মাঠে আইএসএল ফাইনাল (ISL 2025 Final) এর আগে আর কোনও দল জেতেনি। অতীতে এফসি গোয়া, কেরালা ব্লাস্টার্স, বেঙ্গালুরু এফসি হেরেছে। গতবার একই ফল হয়েছে মোহনবাগানেরও। ফেভারিট হয়েও ঘরের মাঠে মুম্বই সিটি এফসির কাছে হারতে হয়েছিল শুভাশিস বসুদের। এবার সেই ইতিহাস বদলানোর চ্যালেঞ্জ ছিল মোহনবাগানের সামনে। বলা বাহুল্য, জোসে মোলিনার ছেলেরা 'আরাম সে' সেই চ্যালেঞ্জ উতরে গেলেন।

'আরাম সে' লেখা হল বটে, কিন্তু শনিবাসরীয় যুবভারতীর লড়াইটা একেবারেই সহজ ছিল না। বিশেষ করে প্রথমার্ধে যেভাবে বেঙ্গালুরু দাপট দেখালো, তাতে অনেক সবুজ-মেরুন ভক্তেরই রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। একটা সময় মনে হচ্ছিল, শেষপর্যন্ত হয়তো যুবভারতীর ওই উৎসাহী জনতাকে মলিন মুখেই ফিরতে হবে। সেই আশঙ্কা প্রবল হয় ৪৯ মিনিটে আলবার্তোর আত্মঘাতী গোলের পর। কিন্তু এক গোলে পিছিয়ে গিয়েও মোলিনার ছেলেরা হতাশ হননি। বরং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মরিয়া লড়াই শুরু করেছেন।
সেই লড়াইয়ে বেঞ্চ থেকে কোচ মোলিনা নিজেও অনেকটা অবদান রেখেছেন। গোল হজম করার পরই সাহাল এবং আশিক কুরুনিয়নকে নামানো তাঁর মাস্টারস্ট্রোক। আশিকরা নামতেই খেলা বদলে গেল। প্রথমার্ধে যে মোহনবাগান আক্রমণভাগে সেভাবে দাগই কাটতে পারেনি, সেই দলই গোল হজম করার পর মুহুর্মুহু আক্রমণ শুরু করে। যার ফল মিলল ৭২ মিনিটে। মোহনবাগানের চাপেই বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করে ফেলেন বেঙ্গালুরু ডিফেন্ডার।
ফাইনালের দুই গোলদাতা। ছবি: শুভাশিস রায়
ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। দল এক গোলে পিছিয়ে। গ্যালারিতে ষাট হাজার দর্শকের প্রত্যাশা। এহেন পাহাড়প্রমাণ চাপে পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করাটাও সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু তাঁর নামটাও জেসন কামিংস। প্রবল চাপের মুখেও তিনি গোল করার কাজটি করেন 'আরাম সে'। পেনাল্টি স্পট থেকে গোলটাও করলেন সেই 'আরাম সে'ই। ফলে সমতা ফেরালো মোহনবাগান। তার পর যেটা হল, সেটাকে পোশাকি ভাষায় ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক বলা চলে। কিন্তু নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল না পাওয়ায় একটা খচখচানি বাড়ছিল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মধ্যে। সেটা ৯৬ মিনিটের মাথায় কাটিয়ে দিলেন আর এক অজি স্ট্রাইকার জেমি ম্যাকলারেন। যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সানার পা থেকে লুজ বলটা ছিনিয়ে নিয়ে গুরপ্রীতের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়ালেন তিনি, সেটা তাঁর মতো বিশ্বমানের স্ট্রাইকারের পক্ষেই সম্ভব।
ফাইনালের (ISL 2025 Final) মেগা ম্যাচে যে দুই অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার গোল করে মোহনবাগানকে জেতালেন, গোটা মরশুম তাঁদেরও কম সমালোচনা শুনতে হয়নি। ম্যাকলারেনকে যে প্রত্যাশা নিয়ে সবুজ-মেরুন শিবির এনেছিল সেটা হয়তো তিনি পুরোপুরি পূরণ করতে পারেননি। আবার কামিংসের ফর্ম নিয়েও গোটা মরশুম বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু মোক্ষম সময়ে দুই অজি স্ট্রাইকারই বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা ঠিক কোন স্তরের ফুটবলার।