শিলাজিৎ সরকার: ক্রীড়াবিশ্বে 'লিঙ্গসত্ত্বা' বড়ই বিতর্কিত বিষয়। ভারতের অ্যাথলিট দ্যুতি চাঁদ থেকে মার্কিন সাঁতারু লিয়া থমাস তালিকা বেশ লম্বা। অবশ্য দিনশেষে দ্যুতি-লিয়া বা তাঁদের মতো বহু অ্যাথলিট মাঠে নামার সুযোগ পান। কিন্তু রূপান্তরকামীরা? তাঁরা এমনিতেই সমাজ প্রান্তিক। আর খেলাধুলোর মাঠে তাঁদের উপস্থিতিও শূন্য। পুরুষ বা মহিলা কোনও বিভাগে ঠাই হয় না যে তাঁদের।
অবশেষে সেই ধারা বদলে পদক্ষেপ করল জামশেদপুর এফসি। আইএসএলের এই ক্লাবটি জামশেদপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় তৃণমূলস্তরে ফুটবলের উন্নতিতে নানা কাজ করেছে। বিভিন্ন বয়সের ছেলে ও মেয়ে ফুটবলারদের নিয়ে একাধিক লিগ চালায় তারা। এবার তাদের উদ্যোগে শুরু হল 'ট্রান্সজেন্ডার লিগ'। ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাতটা দল রয়েছে এই লিগে। প্রতি দলে রয়েছেন দশজন। সব মিলিয়ে ফুটবলারের সংখ্যা ৭০। ফাইভ-এ-সাইড ফরমাটে সব দল একে অপরের মুখোমুখি হবে তিন বার। তারপর বিজয়ী নির্বাচন। প্রথম বছর লিগে অংশ নিচ্ছে জামশেদপুর এফটি, চাইবাসা এফসি, চক্রধরপুর এফসি, নোয়ামুণ্ডি এফসি, সরাইকেলা এফসি, কোলহান টাইগার এফসি এবং জামশেদপুর ইন্দ্রনগর এফসি। রবিবার থেকে শুরু হল লিগ। প্রতি রবিবার লিগের ম্যাচ হবে।
এমন লিগের পরিকল্পনার নেপথ্যে জামশেদপুর এফসি-র যুব ফুটবল উন্নয়ন বিভাগের প্রধান কুন্দন চন্দ্র। ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্তা ক্লাবের শুরু থেকেই এই দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে জামশেদপুর তো বটেই, গোটা ঝাড়খণ্ডের ফুটবল মানচিত্র হাতের তালুর মতো চেনেন তিনি। সেই সূত্রেই জানতে পারেন, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় রূপান্তরকাম ফুটবলারের সংখ্যা একেবার কম নয়। জামশেদপুরে লিগের প্রস্তুতি নেওয়ার ফাঁকে ফোনে কুন্দন বলছিলেন, "আমরা এখানে বিভিন্ন লিগ চালাই। ছেলে ও মেয়েদের বয়সভিত্তিক লিগের পাশাপাশি তাদের মা-বাবাদের জন্য প্রতিযোগিতা হয়। সেভাবেই জানতে পারি রূপান্তরকামীদের ফুটবল খেলার বিষয়টি। ওঁরা বারবার বলত, 'আমাদেরও খেলার সুযোগ দিন'। তাই ওঁদের জন্য কিছু করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।"
তবে প্রথমে পূর্ণাঙ্গ লিগের ভাবনা ছিল না জামশেদপুর এফসি-র। কুন্দন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ক্লাবের সিইও মুকুল চৌধুরিকে। তিনি সবুজ সংকেত দিতেই শুরু হয় কাজ। কুন্দনের কথায়, "সিইও রাজি হওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করি। প্রথমে ভেবেছিলাম, জামশেদপুর এলাকার কয়েকজন রূপান্তরকামী ফুটবলারকে খেলার সুযোগ দেব। পরে দেখলাম রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এমন ফুটবলার আছেন। এরপর তাঁদের নিয়ে লিগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।" এবার শুধু রূপান্তকামীদের নিয়ে হলেও আগামীতে লিঙ্গসত্তার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগ করার পরিকল্পনাও রয়েছে আয়োজকদের।
জামশেদপুর এফসি-র এমন উদ্যোগে খুশির হাওয়া আলিয়া, পিয়ারি হেসা, পূজা সয়ের মতো রূপান্তরকাম ফুটবলারদের মধ্যে। এদিন জামশেদপুরে ম্যাচ খেলে আলিয়া বলছিলেন, "এর আগে এমন কোনও সুযোগ পাইনি। এটা বড় বিষয় আমাদের জন্য। আশা করব, এভাবে সারা দেশে অন্য খেলাতেও রূপান্তরকামীদের যুক্ত করা হবে। সেটা হলে আমরাও এগিয়ে যেতে পারব।" জামশেদপুর এফসি-র দেখানো পথে অন্য খেলাতেও পুরো আকাশ পাবেন, আশায় আলিয়ারা।
