কৃশানু মজুমদার: শুধু ফুলই ফোটাল না, সবুজ গালিচায় রীতিমতো ঝড় তুলে ইউরোর প্রি কোয়ার্টারে স্পেন (Spain)। গতবারের ইউরোপসেরা ইটালির (Italy) বিরুদ্ধে পাস ও স্কিলের মালা গেঁথে বুলফাইটিংয়ের দেশ তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ফুটবল বিশ্ব মুগ্ধ, বিস্মিত স্পেনের চোখ ধাঁধানো নতুন স্টাইল, টেকনিকের জাদুতে।
এককালের তারকা জাভি, ইনিয়েস্তাদের ব্যাটন এখন উইলিয়ামস জুনিয়র, লামিনে ইয়ামালদের হাতে। তবে শুধু ব্যাটন বদলই হয়নি, পুরানোদের টেকনিক, স্টাইল ছেড়ে একদমই নতুন পথে হাঁটছেন ইয়ামালরা।
[আরও পড়ুন: আফগানদের বিরুদ্ধে নয়া নজির সূর্যর, অর্ধেক ম্যাচ খেলেই ছুঁলেন ‘বিরাট’ রেকর্ড]
এক প্রজন্ম অতীত। নতুন প্রজন্ম কাঁপাচ্ছে ইউরোর ময়দান। পৃথিবীর ইতিহাসেও এমনটাই হয়। একটা প্রজন্মের উত্থান ঘটে একই সঙ্গে। আবার একই সঙ্গে তাঁরা সরেও যান। যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা ভরাট করতে চলে আসে নতুন প্রজন্ম।
অ্যারাগোনেস-দেল বস্কির তিকিতাকা পদ্ধতির থেকেও বর্তমান কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের পদ্ধতি, কৌশল এবং ফুটবল আরও বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। জাতীয় দলের এমন নজরকাড়া খেলা দেখে মোহনবাগানের প্রাক্তন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস (Antonio Lopez Habas) ফিরে যাচ্ছেন আইএসএলে তাঁর প্রথম দিকের কোচিং পর্বে। অভিজ্ঞ কোচ বলছেন, ''আমার কোচিং স্টাইলের সঙ্গে স্পেনের বর্তমান দলের খেলার স্টাইলের বেশ মিল খুঁজে পাচ্ছি।''
আইএসএলের অন্যতম সফল কোচ হাবাস। গতবার তাঁর কোচিংয়ে সবুজ-মেরুন লিগ শিল্ড জিতেছিল। আইএসএল ফাইনালে পৌঁছেও শেষমেশ রানার্স হয়ে থাকতে হয়। সেই হাবাস বলছেন, ''পেদ্রিদের খেলা দেখে আইএসএলে আমার প্রথম ও দ্বিতীয় মরশুমের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এখন স্পেন ঠিক যে পদ্ধতিতে খেলছে আমিও ঠিক একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলাম। ১-৪-২-৩-১ পদ্ধতিতে দল সাজিয়েছিলাম সেবার।'' লুইস দে লা ফুয়েন্তের দলের অগ্রভাগে মোরাতা। ঠিক সেরকমই ফিকরুকে প্রথম আইএসএলে ব্যবহার করেছিলেন হাবাস। পরের বার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দেশের হেল্ডার পস্তিগা।
ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতও (Carles Cuadrat) জাতীয় দলের পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ্বসিত। জাভি-ইনিয়েস্তা-বুস্কেটসদের মন ভোলানো ফুটবল দেখেছেন তিনি। এখন ইয়ামালদের দৃষ্টিনন্দন ফুটবলে মন্ত্রমুগ্ধ। কুয়াদ্রাত বলছেন, ''নতুন ভাবে দেখছি তরুণ প্রজন্মের ফুটবল।''
যত দেখছেন, ততই মুগ্ধ হচ্ছেন। দে লা ফুয়েন্তের জাতীয় দলের সদস্য দানি ওলমো ইস্টবেঙ্গল কোচের স্নেহধন্য। একসময়ে কুয়াদ্রাতের সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন দানির বাবা মিকেল ওলমো। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে ইউরো অভিযান শুরু করেছে স্পেন। সেই ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে নেমেছিলেন দানি ওলমো। ইটালির বিরুদ্ধে অবশ্য দেখা যায়নি ওলমোকে।
স্পেনের জাতীয় দলের ফুটবলার দানি ওলমো ও তাঁর বাবা মিকেলের সঙ্গে লাল-হলুদ কোচ কুয়াদ্রাত।
পরের ম্যাচগুলোয় তাঁকে আবার দেখা যেতেই পারে। নস্ট্যালজিক কুয়াদ্রাত বলছেন, ''দানিকে আমি বহুদিন ধরে দেখছি। বার্সেলোনা, ডায়নামো জাগ্রেব, আর বি লিপজিগের হয়ে খেলতে দেখেছি ওকে। এখন জাতীয় দলের হয়ে দানির খেলা দেখছি।'' লিপজিগের হয়ে জার্মান কাপ জিতেছিলেন ওলমো। সেই ম্যাচ দেখতে জার্মানি উড়ে গিয়েছিলেন কুয়াদ্রাত।
ফুটবল শুধু এগারোজনের সংঘবদ্ধ যাপনই নয়, ফুটবল এমন এক চেতনা-দর্শন যা সমাজের পাশে থাকার শিক্ষাও দেয়। কুয়াদ্রাত জানালেন, প্রতি গ্রীষ্মে দানি-মিকেলদের ফুটবল ক্যাম্পাসে যান তিনি। অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত শিশুদের পাশে দাঁড়ান ওঁরা। সেই মহাযজ্ঞে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন কুয়াদ্রাত। ক্যাম্পাস থেকে যত ডোনেশন, অর্থ আসে, সব ঢেলে দেন ওই বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাতে। জীবনেরই আরেক নাম হয়ে ওঠে ফুটবল!
ঠিক যেমন ইউরোর মঞ্চে স্পেন এখন তুলে ধরছে জীবনেরই আরেক ছবি। একঝাঁক তরুণ-ডানপিটে সৃজনশীল ফুটবলারদের নিয়ে এগিয়ে চলার বার্তা দিয়ে যাচ্ছে লা ফুয়েন্তের স্পেন।