সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মঙ্গলবার মিউনিখে দুই দেশের ফুটবল যুদ্ধের আগে আবহটা বেশ উত্তপ্ত। ম্যাচটা স্পেনের কাছে নিছক একটা সেমিফাইনাল নয়, বরং সম্মানের যুদ্ধের। প্রতিশোধের। স্পেন শিবিরে চল্লিশ বছর আগের সেই স্মৃতি বারবারই ফিরে আসছে। সেবার ইউরো ফাইনালে দু’গোলে হারতে হয়েছিল ফ্রান্সের কাছে। অবশ্য শুধু সে’বারের কথাই বা বলছি কেন। হালফিলে আরও একটা ফাইনালে স্পেনকে স্রেফ ফালাফালা করে দিয়েছিল ফ্রান্স। নেশনস কাপ ফাইনালে তিন গোল দিয়েছিলেন করিম বেঞ্জেমেরা।
এবার অবশ্য পরিস্থিতি পুরো আলাদা। পুরো ইউরো (Euro Cup 2024) জুড়ে দুরন্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে স্পেন। দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন ওলমো, মোরাতারা। উল্টোদিকে ফ্রান্সকে এখনও পর্যন্ত চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত ফিল্ড গোল করতে পারেনি ফ্রান্স। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে টেনশনের স্রোত বইয়ে জিতেছে দেশঁর টিম। দলের সবচেয়ে বড় ভরসা কিলিয়ন এমবাপে এখনও পর্যন্ত নিষ্প্রভ। নাকের চোট সমস্যা ভালরকম ভোগাচ্ছে তাঁকে। সাম্প্রতিক ফর্ম বিচার্য হলে মঙ্গলবার মিউনিখে স্পেন অবশ্যই ফেভারিট। কিন্তু তাতেও স্বস্তি কোথায়! বরং ম্যাচের আগের দিন স্পেন অধিনায়ক আলভারো মোরাতা যেরকম ক্ষোভ প্রকাশ করে গেলেন, সেটা স্পেন (Spain) সমর্থকদের উষ্মা বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ইউরোর পর রীতিমতো দেশ ছাড়ার হুঙ্কার দিয়ে গেলেন মোরাতা। বলে দিলেন, দেশ তাঁকে এতটুকু সম্মান দেয় না।
[আরও পড়ুন: কল্যাণ চৌবেকে মিথ্যাবাদী তকমা, ফেডারেশন সভাপতির পদত্যাগ দাবি বরখাস্ত সচিব সাজির]
ঘটনার সূত্রপাত কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানি ম্যাচে। স্পেন মিডিয়ার একটা অংশ মোরাতাকে নিয়ে ভুলভাল রিপোর্ট বের করে। বলা হয়, হলুদ কার্ড দেখার জন্য সেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না তিনি। এমনকী সাইডলাইনে মোরাতাকে কাঁদতে দেখে বলাবলি হয়, দলের জন্য তিনি একটুও চিন্তিত নন। মোরাতা কাঁদছেন নিজের জন্য। যা শোনার পর ফেটে পড়েন মোরাতা। এমনিতেই তিনি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছাড়বেন বলে একপ্রকার ঠিক করেই ফেলেছেন। বলে দিয়েছেন, স্পেনে তাঁর উপর র্যাগিং চলে। সেমিফাইনাল যুদ্ধের আগে আরও বিস্ফোরক মোরাতা। বলে দিলেন, ‘‘লোকেরা বলছিল আমি হলুদ কার্ড দেখেছি বলে কাঁদছিলাম। কী অদ্ভুত সব কথাবার্তা। আমি কাঁদছিলাম আমি দেশের জন্য। আমি দলের অধিনায়ক। দেশের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য থাকে। আর ভাবুন এর জন্য আমার সমালোচন চলছে। আমি সর্বস্ব দিয়ে ইউরো জেতার চেষ্টা করব। এটাই দেশের হয়ে সম্ভবত আমার শেষ টুর্নামেন্ট হতে চলেছে। স্পেনের হয়ে খেলাটা আমার জন্য কখনওই সহজ ছিল না। সবসময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বাড়ি থেকে বেরোলেই সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। আমার পাঁচ বছরের বাচ্চাও বুঝতে পারে না, কেন তাঁর বাবার বিরুদ্ধে সবসময় এরকম ব্যবহার করা হয়। স্পেনে আমার জন্য কোনও সম্মান নেই। এর থেকে অনেক সহজ হল অন্য কোনও দেশের হয়ে খেলা।’’ইউরো সেমিফাইনালের আগে অধিনায়কের এমন আক্ষেপ দলের খেলার মধ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে বলেই ফুটবলমহল মনে করছে।
অবশ্য স্বস্তি ফ্রান্সেও (France) বা কোথায়! ফ্রান্সের পুরো টিমও নিজ দেশের মিডিয়ার উপর চরম ক্ষিপ্ত। প্র্যাকটিসে পেনাল্টি শুট আউট প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন কোচ দিদিয়ের দেশঁ। আর তাঁদের দেশেরই এক মিডিয়া প্র্যাকটিসের পুরো ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে কারা কারা পেনাল্টি মারছেন, তার একটা তালিকাও দিয়ে দেওয়া হয়। দলের স্ট্র্যাটেজি এভাবে সোশ্যাল মিডিয়া তুলে দেওয়ায় চরম ক্ষিপ্ত ফ্রান্স শিবির। গ্রিজম্যান রীতিমতো ফুটতে থাকেন। ব্যঙ্গাত্মকভাবে তিনি লেখেন, ‘তথ্য দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।’ কিন্তু টিমের অন্দরমহলে দেশজ মিডিয়া একটা তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বলাবলি চলছে, ফ্রান্স যদি সেমিফাইনাল জিতে যায়, তাহলে তাদের দেশের মিডিয়াকে বয়কটও করতে পারে। এরকম একটা মহারণের আগে মাঠের বাইরের অশান্তি নিয়ে দুটো টিমই একেবারে বিপর্যস্ত।