ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: জঙ্গল রক্ষায় এবার অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করছে বনদপ্তর। কোর এরিয়ায় (Core Area) পাহারার জন্য একরকম পদ্ধতি। বাইরের অংশের জন্য আরেক ধরনের নিরাপত্তার বলয়। কোর এলাকার জন্য SLR, AK-56, AK-47’এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সিদ্ধান্তে দ্রুত সিলমোহর দিতে চলেছে বনদপ্তর। বাইরের অংশের জন্য থাকবে টানা পুলিশি টহল। দফায় দফায় তা বাড়ানো হবে।
জঙ্গলের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি পাথর, প্রতিটি ধাপের গাছ জঙ্গলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জরুরি। একইভাবে প্রয়োজনীয় জঙ্গলের প্রাণীরাও। তাদের জীবনেরও এক নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা রয়েছে। এর মধ্যে যে কোনও একটির অভাব ঘটে গেলেই নষ্ট হতে শুরু করে ইকো-সিস্টেম (Eco System)। বন দপ্তরের কাছে ইতিমধ্যে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ছে। জঙ্গলের ভিতর থেকে রাস্তা বা তার আশপাশে পাথরের ভাগ কমে যাচ্ছে। খুব স্পষ্টভাবে চুরির অভিযোগই সামনে এসেছে। একইভাবে গাছ চুরির খবরও মিলছে বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে। মূলত উত্তরবঙ্গের জঙ্গল বা তার লাগোয়া নদী তীরবর্তী এলাকায় পাথর চুরির ঘটনা বেড়ে চলেছে। আর গাছ চুরির ঘটনা বেড়েছে রাঢ়বঙ্গ থেকে শুরু করে সুন্দরবনের অনেকাংশে। তা ছাড়া এইসব এলাকা থেকেই প্রায়শই পাচারকারীর হামলার খবরও মেলে। আপাতত তাই পাহারাদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে প্রত্যেক পাহারাদারের হাতে তুলে দেওয়া হবে আধুনিক অস্ত্র।
[আরও পড়ুন: জিভের রং উজ্জ্বল হলুদ! বিরল রোগে আক্রান্ত কানাডার ১২ বছরের বালক]
জঙ্গলের ইকো সিস্টেম নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বনদপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, বন্যপ্রাণীরা জঙ্গলে শিকারের খোঁজে বা কোনও বিপদে পড়ে বাঁচতে দৌড়তে থাকে। রাস্তা বা জঙ্গলের ভিতর থেক পাথর তুলে নিলে তাদের ক্ষতি হতে পারে। উদাহরণ হিসাবে বলা হয়েছে, ধরা যাক, একটি বাঘ বা হাতি কিংবা বাইসন দৌড়ে কোথাও যেতে চাইছে। বা কাউকে ধাওয়া করেছে। সেই পথে আচমকা পাথর তুলে নেওয়া হয়ে থাকলে যে গর্ত তৈরি হবে, তাতে পড়ে গিয়ে সেই প্রাণীর ক্ষতি এমনকী জীবনহানিও হতে পারে। কোনও হিংস্র জন্তুর শিকার হওয়া থেকে বাঁচতেও অনেক ক্ষেত্রে ছোট জীবনজন্তু পাথরের আশ্রয়ে লুকোয়। কিংবা দৌড়ের সময় অসমান পথে পাথরের সামনে গিয়ে পড়লে, সেখানেই থমকে দাঁড়াতে পারে হিংস্র জন্তুটি। এমন নানা পরিস্থিতিতে জঙ্গলের পাথর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
[আরও পড়ুন: তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৫০ ডিগ্রি, ‘নকল’ বৃষ্টিতে ভিজল দুবাই! ভিডিও ভাইরাল]
এছাড়া যেসব জঙ্গল থেকে গাছ চুরি হচ্ছে, সেই এলাকা চিহ্নিত করতে গাছে মার্কিং করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে কী গাছ, কোন এলাকা থেকে চুরি যাচ্ছে তা বোঝা যাবে। তার সঙ্গে কাঠ চেরাইয়ের কারখানায় সেসব অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে কিনা, তাও জানা যাবে। এই কাজে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলির কাছে সহায়তা চেয়ে তাদের সঙ্গে যৌথ বন ব্যবস্থাপনা কমিটিও গড়ে দেওয়া হয়েছে। বনদপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও জঙ্গলের দেখভাল করবে। বদলে দপ্তরের তরফে আর্থিক সহায়তাও মিলবে। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, “আমরা উত্তরবঙ্গের জঙ্গল থেকে পাথর চুরির খবর পেয়েছি। তা রুখতেই আমরা আগ্নেয়াস্ত্রের কথা ভেবেছি। জঙ্গল থেকে পাথর সরিয়ে তার ইকো–সিস্টেম নষ্ট করা যাবে না।”