সুকুমার সরকার, ঢাকা: এবার ভারত-বাংলাদেশ (India-Bangladesh) মৈত্রী পাইপলাইন থেকে জ্বালানি তেল চুরি! গ্রেপ্তার ৪ চোর। মৈত্রী তেল পাইপলাইনের ১১৭ কিলোমিটার শেষ হয়েছে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ফেরোশাডাঙা চক ইসবপুর গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১৭ কিলোমিটার সংকেতখুঁটি থেকে ৪০ গজ দূরে প্রায় ৬ ফুট গর্ত করে পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে তেল চুরির জন্য বিকল্প লাইন তৈরি করা হয়। তবে পাইপলাইনে সেন্সর (Sensor) থাকায় তেল চুরির সময়ই ধরা পড়ে যায় চার চোর।
শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপিএল) পার্বতীপুর রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রবীর হীরা। তিনি জানান, শুক্রবার ভোরে পার্বতীপুর আরটি অফিসে পাইপলাইনের লিকেজ সংকেত বেজে ওঠে। পরে প্রকল্পের ভারতীয় অফিসের শিলিগুড়ি (Siliguri) মার্কেটিং টার্মিনালে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে জানানো হয়, ১১৭ কিলোমিটার সংকেতখুঁটির কাছে পাইপ লিকেজ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে পার্বতীপুর আরটি অফিসের লোকজন চক ইসবপুরে ডিজেলের (Diesel) গন্ধ পান এবং ঘটনাস্থলে আলগা মাটি দেখতে পান। পরে মাটি খুঁড়ে তেলের পাইপে ছিদ্র দেখে তেল চুরির চেষ্টার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে চারজনকে গ্রেপ্তার করে চিরিরবন্দর থানা-পুলিশ। শুক্রবার রাতে পার্বতীপুর আইবিএফপিএলের আরটি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ওই চারজনসহ পাঁচজনের নামে তেল চুরির একটি মামলা করেছেন।
[আরও পড়ুন: NRS কাণ্ডের ছায়া, শিলিগুড়িতে খাবারে বিষ মিশিয়ে ১৪টি কুকুরছানাকে ‘খুন’]
মামলায় আসামি করা হয়েছে পার্বতীপুর আইবিএফপিএল আরটি অফিসের লাইনম্যান জাহাঙ্গির আলম, মহম্মদ ফেরদৌস, মানিক শাহ, ও জমির মালিক সাশকান্দর এলাকার নজমুল হক ও আমিনুল ইসলামকে। এই ঘটনায় পলাতক লাইনম্যান মহম্মদ ফেরদৌস। ঘটনাস্থলের উত্তরে ৪০০ গজের মধ্যে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের সঙ্গে লাগোয়া সোনাপুকুর এলাকায় রিসিপ্ট টার্মিনালের সাব অফিস। পাইপলাইনে ছিদ্র করা অংশ মেরামতের কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। পার্বতীপুর আরটির ব্যবস্থাপক প্রবীর হীরা বলেন, ”তেল চোরেরা ১০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের মূল পাইপে (৪ মিলি) ছিদ্র করে দুটি ক্লাম সেট করেছিল। সেই ছিদ্রের সঙ্গে দেড় ফিট লম্বা জিআই পাইপ সেট করা হয়। সেটির মাথায় বলভাল্ব লাগিয়ে তাতে চাবি সেট করে দিয়েছিল। যাতে তেল বের করার পর সেই চাবি আটকে দেওয়া যায়। ইতিমধ্যে ছিদ্রটি বন্ধ করে তা মেরামত করা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘ও শুধু মোদিকে আর ইটালিকে ভালোবাসে’, এবার ওয়েইসির তির রাহুলকে]
ভারত থেকে সরাসরি পাইপলাইনে তেল আমদানির জন্য এই পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পার্বতীপুরে জ্বালানি তেল (ডিজেল) এনে পার্বতীপুর ডিপোর ট্যাঙ্কে মজুত করা হয়। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন পেট্রল পাম্পে সরবরাহ করা হয়। ১৩১.৫৭ কিলোমিটার পাইপলাইনটি শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা হয়ে পার্বতীপুরের আরটি পর্যন্ত সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ অংশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার ও ভারতীয় অংশে ৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশে বিভিন্ন মাইলেজে ২৭ জন লাইনম্যান এবং ৫টি এসভি স্টেশনে ১৫ জন অপারেটর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। পার্বতীপুর আরটি কার্যালয়ের একজন আধিকারিক জানান, সাধারণ মানুষের পক্ষে তেল চুরি করা তো দূরের কথা বিষয়টি চিন্তাতেও আসার কথা নয়। এর সঙ্গে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কেউ যুক্ত আছে। যেহেতু মূল তেলের পাইপের দুই পাশে সোয়া ইঞ্চি ব্যাসার্ধের সেন্সরযুক্ত দুটি পাইপ লাগানো আছে, সে জন্য ঘটনার শুরুতেই বিষয়টি জানা গিয়েছে।