সুকুমার সরকার, ঢাকা: পিলপিল করে ঢুকছে ওরা। নাফ নদীতে এখন যেন পিঁপড়ের মতো লম্বা লাইন। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত বাংলাদেশে।
রবিবার ভোর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর। মাঝখানে কিছুদিন রোহিঙ্গাদের আসার স্রোত কমলেও গত দুই দিনে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বেড়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেই চলেছে। তবে মাঝখানে তা কিছুটা কমতে শুরু করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু, রবিবার থেকে রোহিঙ্গারা নতুন করে আসতে শুরু করেছে। আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বেড়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
[যুদ্ধে নয়, আলোচনাতেই মিটবে রোহিঙ্গা সমস্যা: হাসিনা]
কীভাবে বাড়ছে অনুপ্রবেশ? সূত্রের দাবি, রোহিঙ্গাদের আপাতত নো-ম্যানসল্যান্ডে আশ্রয় দিয়েছে বিজিবি। এর আগে পাঁচ লক্ষ ৩৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গা-সহ মোট অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ৮২ হাজার। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের এ ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই রোহিঙ্গার সংখ্যা ছয় লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন। রোহিঙ্গারা বলছে, রাখাইনে নতুন করে তাণ্ডব চালাচ্ছে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। যে মুসলিম রোহিঙ্গারা এখনও রাখাইনে রয়ে গিয়েছে, তাদের বিশেষ কার্ড নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ তা নিতে অস্বীকার করলে মেরে ফেলা হচ্ছে। তাই ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার ধুম বেড়েছে। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথমে যে সহানুভূতি দেখা গিয়েছিল তা ক্রমেই কমছে বাংলাদেশের। এখন তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত এরা থেকে যায় কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা।
রাষ্ট্রসংঘের হিসাব, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে ৫ লক্ষ ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা। প্রতিদিনই দলে দলে এবং বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে।অনুপ্রবেশকারীদের দাবি, রাখাইনে আর বড় জোর আড়াই থেকে তিন লক্ষ রোহিঙ্গা থাকতে পারে। চিন্তা বাড়াচ্ছে মায়ানমার আর রাখাইনকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা ময়ু পর্বতমালার বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে থাকা লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তারা চরম দুর্দশার মধ্যে আছে বলেই খবর। তাই সুযোগ পেলে তারাও সীমান্ত অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা। সেক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়াটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের।
[হিংসার বলি বাবা-মা, অথৈ জলে ১১ হাজার রোহিঙ্গা শিশু]