অমিত সিংদেও,মানবাজার: নিঝুম রাতে শ্বেত বস্ত্র গায়ে জড়িয়ে পঞ্চায়েতের আম গাছে ঝুলছে কে ? অলৌকিক কিছু ? নাকি চুরির উদ্দেশ্যে কেউ এসেছে? ওই দৃশ্য দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলেও দায়িত্ব পালনে পিছু হঠেননি পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানায় কর্মরত দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। টর্চ জ্বালিয়ে ৬ ফুট লম্বা লাঠি হাতে রীতিমত দৌড়ে পৌঁছলেন কুঁচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে। লাঠি উঁচিয়ে মারধর করার উপক্রমও হলেন তারা। কিন্তু যার পিছু নেওয়া, সে এক পলকেই অদৃশ্য! বেশ খানিকক্ষণ এদিক ওদিকে খুঁজেও ওই শ্বেত বস্ত্র পরিহিত কারও দেখা মিলল না। সিভিকদের দৌঁড়ের সেই দৃশ্য থেকে গিয়েছে পঞ্চায়েতের দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে।
ঘটনার কথা চাউর হতেই কেউ বলছেন ভূত! আবার কারও কথায় ব্রহ্মদৈত্য! তবে অলৌকিক যে কিছু তা তাদের কথায় নিশ্চিত। আর এই গা ছমছম করা ভয়ার্ত পরিস্থিতিতে এখন গ্রামে যজ্ঞ করার কথা ভাবছে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। সিপিএমের কুঁচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বৈদ্যনাথ সিং বলেন,”সব কিছুই শোনা ঘটনা। ওই রাতের পর থেকেই প্রায় সবার মুখে মুখে ওই দৃশ্যের কথা ফিরছে। আর তাতেই একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেক সময় পঞ্চায়েতের কাজে কর্মীদের রাত পর্যন্ত থাকতে হয়। তাই আমরা যজ্ঞ-শান্তি করার কথা ভাবছি।” তবে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা শাখার সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, “এমন ঘটনার কথা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে ভূত-প্রেত বা ব্রহ্মদৈত্য বলে কিছু হয় না। এগুলো মানুষের দেখার বা শোনার ভ্রম মাত্র। প্রয়োজনে ওই এলাকায় গিয়ে সচেতনতার প্রচার চালাবো আমরা।”
[আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষের পর জঙ্গলমহলে কুড়মিদের ক্ষোভের মুখে রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, উঠল স্লোগান]
দক্ষিণ পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের কুঁচিয়া রাজ্য পুলিশের খাতায় একদা মাও উপদ্রুত। ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার সীমানা ঘেঁষা এই এলাকা আগে ছিল মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল। তবে রাজ্যে পালা বদলের পর বান্দোয়ান থেকে চওড়া পাকা রাস্তা কুঁচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গা ঘেঁসে চলে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের গালুডি। যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ হওয়ার ফলে নানান দোকান হয়েছে কুঁচিয়া মোড়ে। ঠিক পঞ্চায়েত কার্যালয়ের উল্টোদিকেই রয়েছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম করে প্রতিদিন ওই ব্যাংকের কাছে মোতায়েন থাকে বান্দোয়ান থানার দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার। রবিবার রাত থেকে সেখানে ডিউটি করছিলেন কুঁচিয়া ও ভোমরাগোড়া গ্রামের বাসিন্দা সিভিক ভলান্টিয়ার জলধর মাহাতো ও লাল্টু পরামানিক। আর ওই রাতে তাঁদের সঙ্গেই ঘটে যায় এই হাড়হিম করা ঘটনা!