শাহাজাদ হোসেন, ফরাক্কা: মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার মূল সমস্যা গঙ্গা ভাঙ্গন। দেবীকে সন্তুষ্ট করলেই ভাঙন সমস্যা মিটবে, এই আশায় মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের জমিদার বাড়িতে দেবীদুর্গার সঙ্গে শুরু হয় গঙ্গাপুজো। ধুলিয়ানের সেই জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো এবছর পদার্পণ করল ২৫৯ বর্ষে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি।
ধুলিয়ান জমিদার বাড়ির দুর্গা (Durga Puja 2021) ‘বাইশ পুতুলের পুজো’ বলেই সকলের কাছে পরিচিত। এখানে দেবীর মাথার উপর শিব বিরাজমান। তাঁর উপরে থাকেন দেবী গঙ্গা। দেবীর বামদিকে থাকেন বিজয়া, নরসিংহ। শিবের ডানদিকে ভিরিঙ্গি, বামে নন্দী। একপাশে থাকেন রাম, লক্ষ্ণণ ও মকরবাহন। অপরদিকে বিষবাহণ। সঙ্গে অসুর, সিংহ, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। রথের দিন প্রাচীন রীতি মেনে জমিদার রায়বাড়িতে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। এবারও তার অন্যথা হয়নি।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ফেলে দেওয়া ওষুধের স্ট্রিপ দিয়ে প্রতিমা নির্মাণ, তাক লাগালেন বাংলার বধূ]
বর্তমানে মু্র্শিদাবাদে পুজো হলেও এই পুজোর শুরু হয়েছিল মালদহ (Malda) জেলার দেওনাপুরে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে রাঘবেন্দ্র রায় ছিলেন জমিদার। পরবর্তীকালে বারবার গঙ্গা ভাঙ্গন ও বন্যায় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয় জমিদার পরিবারকে। বাধ্য হয়ে ১৮২৫ সালে কাঞ্চনতলা বা ধুলিয়ানে জমিদার বাড়ি নির্মাণ করা হয়। এই রায় বাড়ির পুজোয় এখনও পূর্ব পূরুষের রীতি অনুযায়ী চলে আসছে। এগারোজন দেবী ও এগারোজন দেবতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে হয় পুজো। কৃষ্ণ নবমীতে ঘট ভরে পুজো শুরু করা হয়। দশমীর দিন রীতিমেনে বাড়ির মূল দরজা বহিরাগতদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জমিদার বাড়ির পুরুষেরা ঢাক বাজান। মহিলারা দেবীকে বরণ করে সিঁদুর খেলায় মাতেন। দেবীকে কাঁধে করে আজও নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গার ঘাটে। এখনও আয়োজন করা হয় বাইচ প্রতিযোগিতার। এক সময় ধুলিয়ান জমিদার বাড়ির বাইশ পুতুলের পুজো দেখতে ঝাড়খণ্ড থেকে গরুর গাড়িতে মানুষ আসতেন। রীতিসব পালন হলেও আজ আর ভিনরাজ্যের মানুষ আসেন না, স্রেফ এতটুকুই বদলেছে। উল্লেখ্য, সত্যজিৎ রায় বিখ্যাত ছবি ‘জলসাঘর’ ও ‘দেবী’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল জমিদার বাড়ি ছাড়াও ধুলিয়ান জমিদার বাড়িতে করেছিলেন।