শুভঙ্কর বসু: হাওড়া (Howrah) ও বালি (Ballly) পুরসভার পৃথকীকরণ নিয়ে কাটল জট। অবশেষে আটকে থাকা বিলে সই করলেন রাজ্যপাল। ফলে আগামী বছর রাজ্যের অন্য়ান্য পুরসভাগুলির সঙ্গে এই দুই পুরসভাতেও ভোটের ক্ষেত্রে আর বাধা রইল না। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta HC) এই তথ্য জানান রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। আগামী ২২ জানুয়ারি রাজ্যের ৬টি পুরনিগমে ভোট। তার মধ্যে হাওড়ার নামও নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ছিল। যদিও বৃহস্পতিবার আদালতে এই তালিকা পেশের সময়ও হাওড়ায় ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় ছিল। শুক্রবার রাজ্যপাল সই করে দেওয়ায় তা কেটে গেল।
নাগরিক পরিষেবা আরও উন্নত করার স্বার্থে হাওড়া থেকে বালি পুরসভাকে আলাদা করা উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar) সেই বিলে প্রথমে স্বাক্ষর করেননি। বরং আরও তথ্য চান তিনি। হাওড়া পুরসভা বিলে সই না করার পক্ষে তাঁর যুক্তি ছিল, “এ সংক্রান্ত যে তথ্য বিধানসভার কাছ থেকে চাওয়া হয়েছিল তা পাইনি।” সমন্বয় রেখে কাজ করার ক্ষেত্রে অভাব থাকছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগে সরবও হয়েছিলেন ধনকড়। এ বিষয় আলোচনার জন্য় একাধিকবার তিনি রাজভবনে তলব করেছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে। তারপরও জট কাটছিল না।
[আরও পড়ুন: পাহাড়ের রাজনীতিতে নয়া মোড়, তৃণমূলে যোগ দিলেন মোর্চা নেতা বিনয় তামাং]
তবে কলকাতা পুরভোটের পর সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে রাজ্যপাল বিলে স্বাক্ষর করে দেন। তাঁর আশা ছিল, সমস্ত পুরসভাগুলিতে একসঙ্গো ভোট হবে। কিন্তু রাজ্য ও নির্বাচন কমিশন আগে কলকাতা পুরসভার ভোট সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তারপর দ্রুতই মেয়াদ উত্তীর্ণ বাকি পুরসভাগুলিতেও নির্বাচনের জন্য তৎপর হয় সরকার ও নির্বাচন কমিশন। আলোচনাক্রমেই ২২ জানুয়ারি ও ২৭ ফেব্রুয়ারি – দু’দফায় ভোটের দিনক্ষণ স্থির হয়। এতে সন্তুষ্ট রাজ্যপাল। আটকে থাকা পুরবিলে সই করায় নির্বাচনের পথ মসৃণ হল।
[আরও পড়ুন: ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপিতে, রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন সহ-সভাপতি]
আগে বালি পুরসভায় ৩৫টি ওয়ার্ড ছিল। হাওড়া পুর নিগমের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পর বালিতে ওয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬টি। ফের বালি আলাদা একটি পুরসভা হলে আগের মতোই ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৮৮৩ সালে প্রথম বালি পুরসভা গঠিত হয়। ১৯৬২ সালে একে হাওড়া পুরনিগমের সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা বলা হলেও সেসময় তা হয়নি। অবশেষে ২০১৫ সালে তা হয়। হাওড়া পুর নিগম এলাকায় ৫০টি ওয়ার্ড আগেই ছিল। বালিকে সংযুক্ত করে হাওড়ায় মোট ৬৬টি ওয়ার্ড হয়। তবে হাওড়া পুরনিগমের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পর বালির রাস্তাঘাট ও পানীয় জল সংক্রান্ত নাগরিক পরিষেবার যথেষ্ট উন্নতি হয়।
এদিকে, কলকাতার পুরভোট নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় নজিরবিহীন নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। কলকাতার ভোটের হিংসা অশান্তি এবং পুননির্বাচনের দাবিতে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল। শুক্রবার একত্রে মামলাগুলি শুনানির পর প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানিয়েছে, কলকাতা পুরভোটে ব্যবহৃত সব সিসিটিভি সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু তাই নয়, সংরক্ষণ করতে হবে প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়েরি, ভোটারদের সই ও হাতের ছাপ। সংরক্ষণ করতে হবে ইভিএম-এর কন্ট্রোল ইউনিট এবং ইভিএম-এর ভোটিং রেকর্ড। এছাড়াও পুরভোটে অশান্তি হয়েছে কি না, তাও জানতে চেয়ে রিপোর্ট তলব করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। একইসঙ্গে রাজ্যে আগামী নির্বাচন গুলিতে সব বুথে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসিটিভি বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ভোটগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন হাই কোর্ট।আদালত জানিয়েছে, প্রয়োজনে কলকাতার ভোটে ব্যবহৃত ক্যামেরা অডিট করতে হবে। এছাড়া মামলাকারীদের উদ্দেশে আদালতের নির্দেশ, পরবর্তী শুনানির মধ্যেই অভিযোগের সপক্ষে তথ্য-সহ হলফনামা জমা দিতে হবে। মামলায় পরবর্তী শুনানি ৬ জানুয়ারি।