নির্মল ধর: একবারেই অজানা-অপরিচিত কোনও এক ঊর্মিলা মাঝি নামের গল্পকারকে আবিষ্কার করলেন পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী৷ আসলে ঊর্মিলা তাঁর গল্পের আইডিয়াটি দিয়েছিলেন ইরস কোম্পানির সোহিনী মুখোপাধ্যায়৷ ইরস-এর লোকজনই হরনাথকে অ্যাপ্রোচ করেন৷ অনেকদিন ছবির জগৎ থেকে সরে আছেন হরনাথ৷ সেই ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ থেকে একের পর এক হিট ছবির পরিচালক আজকের পরিবেশে কেমন যেন ‘মিসফিট’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন৷ প্রসেনজিৎকে নায়ক নিয়ে তাঁর আগের ছবি ‘চলো পাল্টাই’-ও দর্শকের হৃদয়ভেদ করতে পারেনি, যদিও বিষয়ভাবনায় অন্যরকম দায়বদ্ধতার পরিচয় রেখেছিলেন৷
প্রোডাকশন কোম্পানির কাছ থেকে ডাক পেয়ে এবং গল্পটা শুনে থেকেই আবার ছবি বানানোর সাড়া পান৷ চিত্রনাট্য লেখান প্রমিত ও অংশুমান নামের দু’জন তরুণকে দিয়ে৷ হরনাথের কথায়– ‘চিত্রনাট্যই তো ছবির খড়ের কাঠামো৷ সেটা ঠিকমতো বানানো না হলে ছবির ঠাকুর গড়াই যায় না৷ আমার অভিজ্ঞতার কিছু ইন-পুটও অবশ্য ওঁদের দিয়েছি৷ ছবির ক্লাইমেক্স সিনের আইডিয়াটা আমার’৷ এতদিন নীরব থাকার পর ঊর্মিলার গল্পে কী পেলেন যে এই গল্পটাই পছন্দ হল? হরনাথের কথায়– ‘ছবিটা প্রেম নিয়ে, আজকের তরুণ-তরুণীর প্রেম! কিন্তু গল্পে কতগুলি সুন্দর টুইস্ট ও টার্ন আছে৷ পূর্বজন্মের একটা ব্যাপার আছে৷ না, গ্যাদগেদে নাটুকে কিছু নয়৷ টুইস্টগুলি বেশ মজার৷ আছে ভূমিকম্পের পরিবেশ৷ এই যে কিছুদিন আগে নেপালে এক ভয়ংকর ভূমিকম্প হয়ে গেল! সেটাকে মাথায় রেখেই আমার গল্পের পটভূমি করেছি দার্জিলিং৷”
সেখানে ট্রেকিং করতে গিয়েই নায়ক রুদ্র ভূমিকম্পের থাবায় পড়ে৷ ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আহত রুদ্রকে উদ্ধার করার সময় সামরিক বাহিনী উদ্ধার করে আরও এক তরুণীর দেহ যার হাতে ধরা ছিল রুদ্রর হাত৷ ঘটনার আকস্মিকতায় সেই তরুণী স্মৃতিভ্রষ্ট৷ সে কিছুই মনে করতে পারে না– অতীত, বর্তমান কোনওটাই নয়৷ তবে রুদ্র এটুকু মনে করতে পারে যে কে যেন দুর্ঘটনার শেষ মুহূর্তে তাঁকে হাত ধরে টেনেছিল৷ সেও মেয়েটিকে চেনে না৷ রুদ্রর বর্তমান প্রেমিকা রিয়া এই ঘটনায় চমকে যায়৷ ভুল বোঝাবুঝি হয় দু’জনার মধ্যে৷
যেহেতু কমার্শিয়াল ফরম্যাটের গল্প সুতরাং নায়ক-নায়িকার ভুল বোঝাবুঝি মেটাতেই হবে! মিটিয়েছেনও৷ এই রহস্যময়ীর চরিত্র এবং একজন নেগেটিভ চরিত্রের শিল্পী অগ্নি– এঁদের নিয়েই নাটকের কিছু প্যাঁচ থাকছে৷ সেটা হরনাথের কথায় ছবির ইউএসপি৷ আর ছবির বড় সেলিং পয়েন্ট হবে টেকনিক্যাল কিছু কাজ৷ ড্রোন ক্যামেরাও ব্যবহার করেছেন দার্জিলিং-এর লোকেশনে৷ আসল ভূমিকম্প দেখানোর জন্য তিনি নেপালের ঘটনার কিছু রিয়্যাল ফুটেজ যেমন ব্যবহার করছেন, তেমনি কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্য নিয়ে বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমায় প্রথম এমন ‘ধ্বংসে’র ছবি দেখাচ্ছেন বিশ্বস্ত ভঙ্গিতে৷
বয়সে অভিজ্ঞ ও প্রবীণ হয়েও হরনাথ চক্রবর্তী আস্থা রেখেছেন নতুন প্রজন্মের উপর, দুই চিত্রনাট্যকার প্রমিত-অংশুমান যেমন তরুণ, ছবির সঙ্গীত পরিচালক দেব সেনকেও অনেকটাই ‘নতুন’ বলা যায়৷ হরনাথ বললেন, ‘পুরনো দিনের ফ্লেভারের সঙ্গে আজকের টিউনকে পাঞ্চ করে সত্যিই এক অভিনব সুর দিয়েছেন দেব৷’ জানা গেল একটা সাপুড়ে গানও আছে৷ একবারেই অন্য এক ঘরানার৷
তাঁর সব থেকে সাহসী কাজ হল তিনটি প্রধান চরিত্রেই প্রায় অজানা নতুন শিল্পী নেওয়া৷ এঁরা হলেন গৌরব (রুদ্র), মেঘনা (রিয়া) এবং সৌরভ চক্রবর্তী (অগ্নি)৷ এঁদের নিয়ে কাজের প্রসঙ্গে হরনাথের মত– ‘দুর্দান্ত কাজ করেছে এটা শুধু বলছি৷ বাকিটা দর্শকের উপর৷ একটা সময় সকলেই নতুন থাকে! কাজ করতে করতে সিজনড হয়৷’ এঁদের তিনজন সম্পর্কেই হরনাথ বললেন– ‘দে শুড গো টু প্লেসেস!’
এক সময় দক্ষিণী ছবির কপি করেছেন এই হরনাথ, হিটও দিয়েছেন পরপর৷ প্রসঙ্গটা তুলতেই বললেন, ‘আমরা যেসব দক্ষিণী গল্প নিয়ে ছবি করেছি সেগুলিকে বাংলার জল-হাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করেছি৷ এখনকার মতো কপি-পেস্ট নয়৷ দক্ষিণী নায়কের বাঁ চোখ দিয়ে জল পড়লে, বাংলাতেও সেটাই করা হয়৷ ওখানে ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয় দিনের বেলা৷ বাংলাতেও তেমনটি করা হচ্ছে৷ সেটা কখনও আমি করিনি৷
বাংলার রুচি-সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়েছি ঘটনা ও চরিত্রকে৷ এখন তো আসল ছবিতে নায়ক নীল জামা পরলে, বাংলার নায়ককেও সেটাই পরানো হয়৷ এটা চলে না, চলছে না৷’ এবং সেই কারণেই হরনাথের আবার নিটোল গল্পে ফিরে তৈরি ‘অমর প্রেম’৷
The post আধুনিক অমর প্রেমের গল্প নিয়ে ফিরে এলেন হরনাথ চক্রবর্তী appeared first on Sangbad Pratidin.