সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাবিজ, কবজ নয়। কিন্তু তাবিজ-কবজের মতোই হাতে রাখা যাবে। লাভ একটাই। এই ‘বস্তু’ যতদিন বাহুতে থাকবে, মহিলা ততদিন গর্ভবতী হবেন না। আবার দম্পতি যদি সন্তান চান, তখন ওই বস্তুটি স্রেফ খুলে নিলেই হবে। স্বাভাবিক নিয়মেই গর্ভবতী হবেন তিনি। অনেকটা যেন ম্যাজিক স্টিক!
এ পর্যন্ত শুনে ভাবছেন তো, ব্যাপারটা ঠিক কী? খোলসা করেই বলা যাক। জন্ম নিয়ন্ত্রণের নয়া কৌশল ‘ইমপ্ল্যান্ট’ চালু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। ৪ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২ মিলিমিটার ব্যাসের ‘ইমপ্ল্যান্ট’ বাহুতে ত্বকের নিচে রাখলে অন্তত তিন বছরের জন্য গর্ভবতী হবেন না কোনও মহিলা। এই ইমপ্ল্যান্ট জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নিঃসরন আটকে দেয়। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, দ্রুতই ব্যবহারকারীকে আধার কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। অর্থাৎ দেশের কত শতাংশ দম্পতি 'ইমপ্ল্যান্ট' ব্যবহার করছেন, তাও এই সুযোগে বুঝে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ ন’টি রাজ্যের একইসঙ্গে চালু হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, একটি ডাচ কোম্পানির সঙ্গে জুটি বেঁধেছে কেন্দ্র। ডিসিজিআই (ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অফ ইন্ডিয়া) সবুজ সংকেত দেওয়ার পরই চালু হচ্ছে। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই গর্ভ নিরোধক ইমপ্ল্যান্টের। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস, ন্যাশ্যনাল ও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে দম্পতিদের স্বেচ্ছামূলক সম্মতিতে ইমপ্ল্যান্ট বিলির কাজ শুরু হবে। রাজ্য সরকার চাইছে, কম বয়সে মেয়েদের সন্তান ধারণ বন্ধ করতে। আর সেই জন্যই এই নয়া কৌশল নিখরচায় চালু হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক রাজ্যকে ৯ লক্ষ ইমপ্ল্যান্ট সরবরাহ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের নোডাল অফিসার ডা. অসীম দাস মালাকারের কথায়, ‘‘ইমপ্ল্যান্টের মূল উদ্দেশ্য কম বয়সে মাতৃত্ব বন্ধ করা। আবার প্রথম সন্তানের থেকে দ্বিতীয় সন্তানের বয়সের ব্যবধান অন্তত ২-৩ বছর রাখা। ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারের ফলে শিশুর স্তন্যপানে কোনও সমস্যা হবে না।’’ এখন প্রশ্ন কীভাবে কাজ করবে ইমপ্ল্যান্ট? উত্তরে স্বাস্থ্যদপ্তরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ইমপ্ল্যান্ট ত্বকের নিচে প্রবেশের পরই সক্রিয় হয়। জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ করবে। জরায়ু পিচ্ছিল হবে না, ফলে শুক্রানু প্রবেশে বাধা পাবে। স্বাভাবিকভাবে গর্ভবতী হবে না মহিলা। আবার দম্পতি যদি সন্তানের জন্য আগ্রহী হন, তবে ইমপ্ল্যান্ট খুলে নিলেই শরীর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। একমাসের মধ্যে অন্তঃস্বত্তা হবেন মহিলা। মূলত ১৫-৪০ বছরের যে কোনও মহিলা ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করতে পারবেন।'' তবে স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র দম্পতিকেই নিখরচায় ইমপ্ল্যান্ট দেওয়া হবে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের নানাবিধ পদ্ধতি চালু হয়েছে দেশে। কপার টি থেকে ‘অন্তরা’ ইঞ্জেকশন পর্যন্ত চালু রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে স্বাস্থ্যদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বসছে, বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় ‘অন্তরা’ ইঞ্জেকশন। কিন্তু সমস্যা হল, সন্তানের জন্মের ৪২ দিন বা ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত এই ইঞ্জেকশন নেওয়া যায় না। ইমপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে অবশ্য সেই সমস্যা নেই। ভবিষ্যৎ বলবে, ইমপ্ল্যান্ট কতটা জনপ্রিয়।