অনেকদিন ধরে মুখের ভিতরটা জ্বালা করছে! হালকা ব্যথা! একেবারেই এড়িয়ে যাবেন না সমস্যা। আলসার কিন্তু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যেতে পারে। সাবধান করলেন ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন ডা. সৃজন মুখোপাধ্যায় (Dr. Srijon Mukherjee)। কথা বলেছেন সুমিত রায়।
মুখগহ্বর, খুবই স্পর্শকাতর স্থান। সারাদিন নানা প্রকার খাবারের প্রবেশ ঘটছে। টক-ঝাল-মিষ্টি অথবা তামাক-অ্যালকোহল জাতীয় খাবারের অনবরত চর্বণ। তার উপর আবার ঠান্ডা-গরমের প্রবেশ। মাঝেমধ্যে দাঁতের কামড় তো লেগেই থাকে। আসলে মুখের ভিতরে হাই ফ্লাক্স এরিয়া রয়েছে, এখানে কোষগুলি দ্রুত মারা যায় ও নতুন কোষ জন্মায়। তাই মুখের ভিতরে অস্বস্তি এবং ক্ষত মোটামুটি স্বাভাবিক ব্যাপার হিসাবেই দেখা হয়। কিন্তু কখনও কখনও এই ধরনের ক্ষত বেশ ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তখন কিন্তু বিষয়টা তিল থেকে তাল হওয়ার মতো। ছোট ঘা ক্যানসার পর্যন্ত যেতে পারে। মুখের ক্ষতের কারণ অনেক।
ট্রমা ইন্ডিউসড আলসার (Trauma induced ulcer)- দাঁত, জিভ বা গাল কামড়ে ফেললে যে ধরনের ক্ষত বা আলসার হয়।
অ্যাপথাস (Aphthous ulcer)- বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলেরই এই সমস্যা হতে পারে। এতে মুখের ভিতরে লাল ফোস্কা ফেটে যাওয়ার মতো একটা ক্ষত দেখা যায়, ব্যথা হয় যা ৭-১০ দিন থাকে। মাত্র ১০% অ্যাপথাস হয় ভিটামিনের অভাবে, তাই মুখের সব আলসারে ভিটামিন খাওয়া ভালো। ফেরিটিন বা আয়রনের স্বল্পতা থেকেও কিছু কিছু আলসার হতে পারে। এর গুরুত্ব বেশি। রক্তাল্পতার জন্য মুখে আলসার চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখলে ক্যানসার হতে পারে।
ওষুধের সাইড এফেক্ট- অনেকেরই কিছু ওষুধ খাওয়ার পর পরই মুখে ঘা দেখা দেয়। এটা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে হয়। হতে পারে ‘স্টিভেন জাংশন সিনড্রোম’। এতে মুখ থেকে ঠোঁট পর্যন্ত আলসার ছড়ায়। তখন স্টেরয়েড দিয়ে রোগীকে চিকিৎসা করতে হয়।
কিডনি বা লিভারের রোগ- ইউরেমিক আলসার (Uremic ulcer), কিডনির অসুখ থাকলে তাদের দেখা দেয়।
ট্রম্যাটিক আলসার (Traumatic Ulcer)- ভাঙা দাঁতের খোঁচা বারবার লাগতে লাগতে মুখের ভিতরে একই জায়গায় ক্রনিক আলসার হয়ে যায়। যা থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
কেমিক্যাল বার্ন (Chemical burn)- অনেকের খুব ভুল ধারণা রয়েছে যে, দাঁতে ব্যথা হলে ওষুধ না খেয়ে গালের কাছে রেখে দিলে নাকি ব্যথা কমবে তাড়াতাড়ি। কেউ কেউ আবার চুনও লাগায়। এতে মুখে আলসার হয়ে যায়। যাকে কেমিক্যাল বার্ন বলা হয়।
লাইকেন প্লেনাস (Lichen planus)- এটাও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি জনিত এক ধরনের মুখের আলসার। ওষুধ দ্বারা এর চিকিৎসা সম্ভব নয়। খুব ব্যথা-যন্ত্রণা হলে তখন লক্ষণ দেখে চিকিৎসা করা হয়। তবে সমস্যা ফেলে রাখা ঠিক নয়।
ওরাল ক্যানসার (Oral Cancer)- ক্যানসারও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথমে মুখের আলসার হিসেবেই দেখা দেয়। কখনও আবার আলসার না হয়ে, লিউকোপলেকিয়া (সাদা দাগ) বা স্পেকল্ড লিউকোপলেকিয়া (সাদা দাগের মধ্যে ছোট ছোট লাল দাগ) বা এরিথ্রোপ্লেকিয়া (লাল দাগ) রূপে দেখা দেয়। যা মুখ গহ্বরে, জিভে, গালে, ঠোঁটের ভিতরে, টাগরায়, গলায় চোখে পড়ে। সবসময় এই লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে দাগ দেখা গেলে তা ফেলে না রেখে চিকিৎসা করা জরুরি।
[আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার সংসদে ভারতীয় সিনেমার প্রতিনিধি রানি-করণ, কী বলবেন সেখানে?]
চিকিৎসা:Health
ভিটামিন খেলেই মুখের আলসার ঠিক হয়ে যাবে তা কিন্তু সবসময় নয়। কিছু সীমিত চিকিৎসা করতে হবে, আর পাশাপাশি কতদিন বাদে বাদে হচ্ছে যন্ত্রণা, কতটা জায়গায় তার ব্যাপ্তি এবং কতদিন থাকছে সেগুলি খেয়াল রাখতে হবে। রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক হলে আলসার অনেকটাই সেরে যায়। অনেক ক্ষেত্রে শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি থাকলে অথবা লিভার বা কিডনির সমস্যা থাকলে সেক্ষেত্রে ওষুধ দ্বারা তা ঠিক করলে আলসারও ঠিক হয়ে যায়।
ক্যানসার জনিত আলসারে প্রি-ক্যানসারাস স্টেজে অপারেশন করাতে পারলে সবচেয়ে ভালো। ক্যানসার গলার লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে গেলে অপারেশনের পর রেডিয়েশন দিতে হয়।
মেনে চলুন:
মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার চেষ্টা করুন, সঠিকভাবে ব্রাশ করা জরুরি।
তামাক জাতীয় দ্রব্য বা সুপারি মুখের শত্রু।
সপ্তাহে একবার মুখের সেলফ এগজামিনেশন করুন।
মুখে কোনও ক্ষত যদি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ফেলে না রেখে মুখের ওরাল সার্জন বা ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের পরামর্শ নিন।
দু’সপ্তাহের বেশি আলসার থাকলে সাবধান হন, নানা চিকিৎসকের কাছে ঘুরে জরুরি সময় নষ্ট না করে প্রথমেই সঠিক চিকিৎসকের কাছে যান। মুখের অধিকাংশ আলসার ক্যানসার নয়।