আমলকি আমাদের কাছে সুপরিচিত, তা সে কবিগুরুর গানে হোক বা আমাদের খাদ্য তালিকায়। ভেষজ এই ফলের বিস্তার অপরিসীম, তাই একে মাদার অফ ফ্রুটও বলা হয়ে থাকে। বিস্তারিত জানালেন ডায়েটিশিয়ান রাখি চট্টোপাধ্যায়।
আমলকি কেন এত উপকারী?
এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল, ১০০ গ্রাম আমলকিতে ভিটামিন 'সি'-র পরিমাণ প্রায় ৬০০-৭০০ মিলিগ্রাম, যা পেয়ারা বা আভোগাডোর থেকে অনেকটাই বেশি। এছাড়াও প্রচুর আন্টি অক্সিড্যান্টের উপস্থিতি একে করেছে আরও মূল্যবান।
আমলকির পুষ্টিগুণ:
সর্দি-কাশির উপসর্গ থেকে মুক্তি দেয়: সিজন চেঞ্জের সময়ে আমলকির ব্যবহার আওনাকে সারা বছর সর্দি কাশি থেকে দূরে রাখতে পারে। ভিটামিন 'সি' ও অ্যান্টি অক্সিড্যান্টগুলি শ্বাসনালির স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
কোলেস্টেরল কমাতে: শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যাল বার করতে সাহায্য করে বলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা হ্রাস পায় এবং মেটাবলিজম বাড়ে, যা পরোক্ষভাবে ভালো কোলেস্টেরল HDL বাড়াতে সাহায্য করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: ভালো পরিমাণে ফাইবারের উপস্থিতি থাকে এবং উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিড্যান্টগুলি শরীর থেকে ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে বলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গাট হেলথ: উপকারী অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ও সলিউবল ফাইবার থাকার জন্য গাট ভালো রাখারও প্রয়োজন আছে। নিজে অ্যাসিডিক হলেও স্টমাকের PH নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ইমিউনিটি: এতে ভিটামিন 'সি'-র পাশাপাশি ভিটামিন 'এ'-ও থাকে (১০০ গ্রামে প্রায় ২৯০ আই ইউ) যা চোখ, ত্বক ও চুলের কোনওরকম ইনফেকশন থেকে রক্ষা করেl
চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য: আমলকিতে উপস্থিত ভিটামিন 'সি' ও 'এ', ত্বকের কোলাজেন তৈরির পদ্ধতিতে সাহায্য করে, ফলে নিয়মিত গ্রহণে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
ওরাল আলসার: যাঁদের মুখে বা জিভে বার বার আলসারের প্রবণতা দেখা যায় তাঁরা প্রত্যেক দিন যদি আমলকি চিবিয়ে খান তবে ভিটামিন 'সি' ও উপস্থিত ফ্লাভোনওয়েড আলসারের সম্ভাবনা কমায়।
বেশি খাওয়া ক্ষতিকর :
ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় খুব বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে ডায়রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া মুখের মধ্যে বা জিভে ও প্রদাহ হতে পারে।
কীভাবে খাবেন?
তাজা আমলকি খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। সকালে খালিপেটে এক কুচি কাঁচা আমলকি গরম জলের সঙ্গে বা এক চা চামচ আমলকির জুস এক গ্লাস উষ্ণ গরম জলের সঙ্গে - এভাবেই খেতে বলা হয়। শুকনো আমলকির ভিটামিন 'সি'-র পরিমাণ অনেকটাই কমে যায় এবং এতে নুন যোগ করা হলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। যাদের হাই ব্লাড প্রেশারের সমস্যা আছে তারা এই নুন যুক্ত শুকনো আমলকি না খেয়ে ফ্রেশ আমলকিই ডায়েটে রাখবেন। যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে তাঁরা আমলকি এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি থাকে।