স্টাফ রিপোর্টার: ঝাপসা নয়, অস্ত্রোপচার চলাকালীনই পেটের ভিতর ঝকঝকে ছবি দেখতে পাবেন চিকিৎসক। বেসরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালের মতো বাংলার জেলা হাসপাতালেও বসল ফোর কে ল্যাপরোস্কোপিক সিস্টেম। সাধারণ ল্যাপরোস্কোপিক সিস্টেমের তুলনায় যার দাম তিনগুণ। শুক্রবার প্রথম এম আর বাঙুর হাসপাতালে এই সিস্টেম ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করলেন সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ মাখনলাল সাহা।
কী এই ফোর কে ল্যাপারোস্কোপিক সিস্টেম? ল্যাপরোস্কোপিক অস্ত্রোপচারে পেট কাটতে হয় না। কাটাছেঁড়া, রক্তক্ষরণও কম হয়। পেটে ছোট ফুটো করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় নল। নলের মাথায় থাকে লেন্স। সেই লেন্সের মাধ্যমে পেটের ভিতরের ছবি স্ক্রিনে দেখতে পান চিকিৎসক। তা দেখেই হয় অস্ত্রোপচার। নতুন ফোর কে ল্যাপারোস্কোপিক সিস্টেমে ৩৮৪০ বাই ২১৬০ পিক্সেল রেজোলিউশনে পেটের ভিতরের ছবি দেখতে পাবেন শল্য চিকিৎসক। এম আর বাঙুর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ মাখনলাল সাহা জানিয়েছেন, নয়া যন্ত্রে রোগীর পেটের ভিতরের হাই ডেফিনেশন ইমেজ দেখা যাবে। ফলে জেলা হাসপাতালেও বেসরকারি মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের মতো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অস্ত্রোপচারও করতে পারবেন চিকিৎসকরা।
এতদিন জেলা হাসপাতালে স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনেশন ছবি দেখে অস্ত্রোপচার চলত। যার রেজোলিউশন ৭২০ বাই ৪৮০ মেগাপিক্সেল। শুক্রবার এম আর বাঙুর হাসপাতালে প্রথম অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার হল ৩৭ বছরের এক যুবকের। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা মহম্মদ নূর আলম ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। তাঁর অন্ননালি বা ইসোফেগাসে জটিল সমস্যা ছিল। মুখ আর খাদ্যনালির সংযোগস্থল হচ্ছে ইসোফেগাস। এর সমস্যার জন্য যা খেতেন, তাই বমি হয়ে যেত মহম্মদ নুর আলমের। বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে নূর জানতে পারেন, অস্ত্রোপচারে খরচ বিপুল। বিনামূল্যে তাঁর অস্ত্রোপচারের নেপথ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের নয়া যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
ফোর কে ল্যাপরোস্কোপিক সিস্টেম ব্যবহার করে শুক্রবার তাঁর ‘হেলার কার্ডিওমায়োটমি উইথ ডোরস ফানডপলিকেশন’ অস্ত্রোপচার করলেন ডাঃ মাখনলাল সাহা, ডাঃ রনিত রায়। এই অস্ত্রোপচার করতে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ কয়েক লক্ষ টাকা। সরকারিতে তাই হল বিনামূল্যে। ডাঃ মাখনলাল সাহা জানিয়েছেন, সাধারণ ল্যাপরোস্কোপিক সিস্টেমের যা দাম, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি দাম নয়া এই সিস্টেমের। রোগীর পেটের ভিতরের ছবি স্পষ্ট দেখা যাওয়ায় রেক্টাল ক্যানসার, গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার, জটিল হার্নিয়ার অস্ত্রোপচারও এবার সহজেই হবে জেলা হাসপাতালে।