ফাইব্রয়েড, এখন খুব বেড়েছে। সোজা কথায় যা জরায়ুর টিউমার। যদিও ক্যানসার নয়। তবে এর চিকিৎসা দরকার। ওষুধে কাজ না হলে অপারেশন প্রয়োজন। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে ওষুধেই গায়েব হয় ফাইব্রয়েড। আশার কথা শোনলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথির প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. অশোককুমার দাস।
বর্তমানে বহু মহিলা জরায়ু ফাইব্রয়েড বা ক্যানসারবিহীন টিউমার এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। জরায়ুর কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধির জন্য এই রোগের সৃষ্টি। তবে এটা ক্যানসারজনিত রোগ নয় এবং এই অসুখ ক্যানসারে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে। এই রোগের সঠিক কারণ এখনও অজানা। তবে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণের তারতম্য এই রোগের অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা হয়। তাছাড়া পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই রোগের অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলি বা রিস্ক ফ্যাক্টর হল স্থূলতা বা ওবেসিটি, কম বয়সে প্রথম মাসিক শুরু হওয়া, ভিটামিন ডি-র অভাব এবং যাদের মধ্যে এখনও গর্ভাবস্থার কোনও ঘটনা ঘটেনি।
লক্ষণ ও উপসর্গ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর বাইরে থেকে কোনও লক্ষণ থাকে না। অন্য কোনও কারণে পেটের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় ধরা পড়ে। কখনও কখনও লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায়, তবে তা নির্ভর করে টিউমারের সাইজ, সংখ্যা ও অবস্থানের উপর। সেগুলি হল –
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব
স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মাসিক বা সাতদিনের বেশি, সঙ্গে তলপেটে যন্ত্রণা
তলপেটে ফোলা অনুভূতি
কোমর ব্যথা বা কোমর, তলপেট সংলগ্ন (পেলভিক এরিয়া) স্থানে চাপবোধ
কোষ্ঠকাঠিন্য
ঘনঘন প্রস্রাব করার ইচ্ছা
যৌন মিলনের সময় যন্ত্রণা
গর্ভধারণে অক্ষমতা বা বন্ধ্যত্ব
অতিরিক্ত রক্তস্রাবের জন্য রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া এবং তৎজনিত শারীরিক সমস্যা যেমন অতিরিক্ত দুর্বলতা, ঝিমুনি, সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট ইত্যাদি
এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের কারণ নির্ণয় করা খুবই জরুরি।
[আরও পড়ুন: মাথায় ফুটছে ঘাসফুল-পদ্ম! ভোট বাজারে নয়া চুলের ছাঁটে ভাইরাল হাওড়ার স্টাইলিস্ট]
কোন পথে চিকিৎসা করবেন?
তলপেটের আল্ট্রাসাউন্ড করলে এই টিউমারের সংখ্যা, সাইজ ও অবস্থান সহজেই ধরা পড়ে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তাল্পতা নির্ণয় করা হয়। পরীক্ষার পরে রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ সারানো যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মাসিকের রক্তস্রাবের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব স্বাভাবিক হয় এবং দীর্ঘদিন চিকিৎসার মাধ্যমে জরায়ুর টিউমারের সাইজ কমতে কমতে অবশেষে মিলিয়ে যায়। হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা চলাকালীন পেটের আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসার অগ্রগতি বোঝা যায়। যাঁরা রক্তাল্পতায় ভোগেন তাঁদের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন - কাঁচকলা, থোড়, পালংশাক, মোচা, ডিম, মাংস, মাংসের মেটে, ছোলা, ছোলার ছাতু, খেজুর, আখের গুড়, প্রভৃতি খাওয়া আবশ্যক। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তাল্পতার পরিমাপ করাও প্রয়োজন।
হোমিওপ্যাথিতে অপারেশনের প্রয়োজন নেই
হোমিওপ্যাথিক মতে এই রোগের কারণ সাইকোটিক মায়াজম। হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণ সাদৃশ্য মতে চিকিৎসা করা হয়। তাই কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই যেটা সরাসরি কাজ করে এই সমস্যা নিরাময়ে। রোগীর মানসিক এবং শারীরিক লক্ষণ সমষ্টির উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্বাচন করা হয়। তাই একই রোগের আক্রান্ত বিভিন্ন রোগীর বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োজন হয়। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচনে এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি যা অসুখটিকে গোড়া থেকে নির্মূল করে।
তাই সঠিক হোমিওপ্যাথিক ওষুধের নির্বাচনের মাধ্যমে এই অসুখ অপারেশন ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সারানো সম্ভব। তবে যদি টিউমারের সাইজ খুব বড় হয় এবং অতিরিক্ত রক্তস্রাব হয়, হোমিও চিকিৎসায় যদি না কমে, যদি রোগীর রক্তাল্পতা বাড়তে থাকে তবে অস্ত্রোপচারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সেই জন্য এই রোগের প্রথম অবস্থায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ একান্ত কাম্য।
ফোন - ৯৮৩০৪৯৩৮৯১