শারীরিক যন্ত্রণা নিয়ে হাসিমুখে কাজ করা মুখের কথা নয়। আর সেটা যদি হয় কাঁধের যন্ত্রণা, তা হলে তো জীবনটাই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আরও চাপ যদি বারবার ঘটে হাড়ের স্থানচ্যুতি। কীভাবে মুক্তি মিলবে এই বিষম বেদনা থেকে, কেন হয় বারবার? জানাচ্ছেন অর্থোপেডিক ডা. অভিষেক দাস।
আচমকা কিছু তুলতে গিয়ে খিঁচ ব্যথা লাগাটা এক রকম, কিন্তু কখনও হেঁচকা টানে যদি সরে যায় অঙ্গ তা হলে? শোল্ডার ডিসলোকেশন এমনই এক ব্যাধি। ভোগান্তিও বেশ। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মাহি’ সিনেমার মূল চরিত্র জাহ্নবী কাপুরেরও সিনেমার প্রয়োজনে ক্রিকেট খেলায় দক্ষ হতে গিয়ে এই সমস্যায় কাবু হতে হয়েছে। শুধু বেকায়দায় খেলাধুলা করার ক্ষেত্রেই নয়, যে কোনও ছোট-বড় আঘাতেই এটা হতে পারে। মানবদেহে কাঁধ এমনই একটি অঙ্গ যা একবার স্থানচ্যুত হলে বারবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কাঁধে কোনও প্রকার চোট বা আঘাত লাগার পর যদি কাঁধ ঘোরাতে অসুবিধা হয় তা হলে অবহেলা করবেন না।
কী এই সমস্যা?
আসলে, আমাদের কাঁধে থাকে বল ও সকেট জয়েন্ট। খুব সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বললে একটা বলের মতো জিনিস কাপের উপর মুভ করতে থাকে। যদি এই বলটাই কাপের বাইরে বেরিয়ে যায় সেটাকেই চিকিৎসার পরিভাষায় শোল্ডার ডিসলোকেশন বা কাঁধের স্থানচ্যুতি বলে। এটি অনেকটা বেশি সচল শরীরের বাকি জয়েন্টের থেকে। তাই এখানে চোট সবচেয়ে বেশি লাগে। পুরো সিস্টেমটাকে ঠিক রাখার জন্য চার ধারে একটি কার্টিলেজ বা তরুণাস্থির আবরণ থাকে। এটি ছিঁড়ে গেলেই চোট গুরুতর আকার ধারণ করে। তবে, কাঁধে লাগছে মানেই কিন্তু স্থানচ্যুতি হয়েছে এমন নয়। অনেক সময় কিছু ব্যায়াম বা ওষুধেও ঠিক হয়ে যায়।
বারবার হলে কী করণীয়?
না, এখানে ধারণাটা একটু শোধরানোর আছে। একবার হলে সবার ক্ষেত্রে বারবার নয়। এজ গ্রুপটাকে তিন ভাগে ভাগ করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি। প্রথম যে গ্রুপটাকে ধরা হয় সেটা হল ১৮ থেকে ২০ বছর। এঁদের মধ্যে যেহেতু স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ইচ্ছা বা চেষ্টা খুব বেশি থাকে, অর্থাৎ অস্থিসন্ধির সচলতা এদের সব সময়ই বেশি থাকে বলে এদের একবার কাঁধের স্থানচ্যুতি হলে পরবর্তীকালেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। ঠিক একইভাবে যাঁরা খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কিংবা ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে রয়েছেন তাঁদেরও একই রকম প্রবণতা দেখা যায়। অন্যদিকে, ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের বেশি বয়সিদের মধ্যে শোল্ডার ডিসলোকেশন হলে সে ক্ষেত্রে চিন্তিত হওয়ার বেশি কারণ থাকে না। কারণ এদের ক্ষেত্রে রেস্ট ও সঠিক চিকিৎসায় সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সঙ্গে বিশ্রামও দরকার।
[আরও পড়ুন: অনুমতি না নিয়ে নাম ব্যবহার, প্রযোজকের বিরুদ্ধে আদালতে করণ জোহর]
চিকিৎসা কী?
প্রাথমিকভাবে লেগে গেলে হাত নাড়ানো কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখতে হবে এবং বরফ বা আইসপ্যাক দিয়ে হবে। তারপর এক্স রে করে দেখে নেওয়া দরকার। কাঁধের স্থানচ্যুতি হলে বিশেষ পদ্ধতিতে সেটা জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়। অপারেশন করে সেট করতে কাটাছেঁড়ার কোনও প্রয়োজন হয় না।
যেহেতু সেই সময় রোগী প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব করেন, তাই সেই জায়গাটিকে অবশ করে অথবা অজ্ঞান করে এই বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। যদি বারবার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এম আর আই, স্ক্যান, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদির দরকার পড়ে। প্রয়োজনে পরে ছোট ফুটো করে মাইক্রো সার্জারিরও সাহায্য নেওয়া।
শেষে একটাই কথা বলব যে, ‘প্রিভেনশন ইজ অলওয়েজ বেটার দ্যান কিওর’। তাই ছোট থেকেই সাবধান থাকতে হবে। আচমকা আঘাত যেন কখনও না লাগে খেয়াল রাখতে হবে। ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, পড়ে গেলে ব্যথা লাগলে ফেলে রাখবেন না। আর কোনও ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ কারও দেখে বা ভিডিও দেখে করলে গেলে এমন ব্যথা লাগার সমস্যা রয়েছে, তাই কখনই এমন না করে উপযুক্ত ট্রেনারের কাছে ট্রেনিং নিয়ে তবেই করা ভালো। এখানে কিন্তু ক্যালসিয়াম কিংবা ভিটামিন ডি এর সঙ্গে কোনও যোগসূত্র নেই। কাজেই এরকম মনে করবেন না, ‘আমি খুব ক্যালসিয়াম খাচ্ছি তার মানে আমার কিছু হবে না।’ তাই সাবধানতাই মূল হাতিয়ার।