প্রৌঢ়ত্বের এক সাধারণ সমস্যা প্রস্টেটের অসুখ। এই গ্রন্থির ক্যানসারের ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে। প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা যায় না। তাই ৬০ বছর পেরালে নিয়মিত রক্তের পিএসএ বা 'প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন' পরীক্ষা করাতে পরামর্শ দিলেন নারায়ন হৃদায়ালয় হাসপাতালের মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. বিবেক আগরওয়াল।
প্রথম ১০-এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে প্রস্টেট ক্যানসার। ৬০ বছরের ঊর্ধে প্রতি ৮ জন পুরুষের ১ জন প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছেন। সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আগামী কয়েক বছরে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে পরিসংখ্যান জেনে ভয়ের কোনও কারণ নেই। কেননা ঠিক সময়ে চিকিৎসার সাহায্যে এই ক্যানসারকে আটকে দিয়ে দীর্ঘজীবি হওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে উদাহরণ দেওয়া যায় ভারত বিখ্যাত অভিনেতা দিলীপ কুমারের। ৯৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রস্টেট ক্যানসার সহ জীবিত ছিলেন।
৬০ বছর বয়সের পর নির্দিষ্ট সময় অন্তর হেলথ চেক আপের সময় পুরুষদের প্রস্টেট-এর জন্য ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন ও পিএসএ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিৎ। প্রস্টেট গ্ল্যান্ড মূত্রথলির ঠিক নিচে থাকে বলে ব্লাডার আউটলেটে অবস্ট্রাকশন শুরু হয়। ফলে প্রস্রাবের ফ্লো কমে যায়। অন্যদিকে এটি ইউরেথ্রা অর্থাৎ মূত্রনালির চারপাশে ঘিরে থাকায় লোয়ার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সিম্পটম্পস দেখা দেয়। প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের কোষ বাড়তে শুরু করায় ইউরেথ্রার ওপর চাপ পড়ে। অন্যদিকে ব্লাডারের পেশি ক্রমশ অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ইউরিন যাতে ব্লাডারে কোনওমতেই জমতে না পারে, সেই জন্যে শরীরের মেকানিজম কিছুটা পাল্টে গিয়ে ব্লাডারকে বাড়তি সতর্ক করে দেয়। এর ফলে সামান্য ইউরিন জমলেই ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার তা দ্রুত বের করে দিতে চায়। ফলে মানুষটির ঘুম ভেঙ্গে যায় ও বাথরুম দৌড়ন। প্রস্রাবের সময় জ্বালা ও ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় প্রস্রাব আটকে গিয়ে প্রচন্ড কষ্ট হয়। ক্যাথিটারের সাহায্যে ইউরিন বার করে দেওয়া ছাড়া গতি থাকে না। ইউরিনের সঙ্গে রক্ত বেরোতে পারে, একে বলে হিমাচ্যুরিয়া। ব্লাডারে ইউরিন জমে স্টোন হতে পারে। ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। এসবই হল বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেশিয়ার লক্ষণ।
প্রস্টেটের ক্যানসারেও একই সমস্যা
প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলেও প্রায় একই উপসর্গ দেখা যায়। চিকিৎসক (পিএসএ) প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে নিয়ে রোগীর ইন্টারন্যাশনাল প্রস্টেট সিম্পটম স্কোর বা আইপিএসএস দেখে নেন। এই স্কোর দেখে ইউরিন কালচার, রুটিন ইউরিন টেস্ট, ইউরিন ফ্লো-রেট ও রেনাল ফাংশন টেস্ট করা হয়। রক্তের এই পরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্টেট ক্যানসার নির্ণয় করা যায়। বলাই বাহুল্য, শুরুতে সঠিক চিকিৎসা করালে প্রস্টেট ক্যানসার সারান অনেক সহজ। অবশ্য বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে পিএসএ-র মাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু মাত্রা ছাড়ালেই বিপদের আভাস। এক্ষেত্রে ক্যানসার বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
বংশে থাকলে ৪৫ থেকেই সাবধান
যাঁদের বংশে প্রস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস আছে তাঁদের ৪৫ বছর পেরোলেই পিএসএ টেস্ট করান উচিৎ। কেননা তাঁরা হাই রিস্ক গ্রুপে আছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন করার পর পিএসএ পরীক্ষা করতে বলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে যেহেতু বয়স বাড়লে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেবার চল নেই তাই রুটিন টেস্টের সময় রক্তের পিএসএ পরীক্ষা করিয়ে নিলে আর্লি ক্যানসার ডিটেকশনে একদিকে শারীরিক কষ্ট অন্যদিকে খরচের বহর দুই এর হাত থেকে রেহাই মেলে।
প্রস্টেট ক্যানসার ধরা পড়লে অনেক সময় শুধুমাত্র নিয়মিত চেক আপ করে অপেক্ষা করা হয় (ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ)। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক র্যাডিক্যাল প্রস্টেকটমির সাহায্যে প্রস্টেট ক্যানসার সম্পূর্ণ নির্মূল করে দেন। অনেকে ভাবেন বেশি বয়সে ক্যানসার সার্জারি করানো মুশকিল কিন্তু এমন অনেক প্রস্টেট ক্যানসার আক্রান্ত মানুষ আছেন যাঁদের বয়স ৯০ বছর বা আরও বেশি, তাঁদের ক্যানসার সার্জারির পর দিব্যি সুস্থ জীবন যাপন করছেন। ইদানীং রোবোটিক সার্জারির সাহায্য নিয়ে একদিকে ক্যানসার সারানো হচ্ছে অন্যদিকে রক্তপাত যৎসামান্য হওয়ায় রোগী দ্রুত সেরে উঠছেন। প্রয়োজনে রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপির সাহায্য্য নেওয়া হয়।
যোগাযোগ: 8879222875
