অভিরূপ দাস: কানের গোড়ায় থাপ্পড়। হাওয়ার তোড়ে কানের পর্দা ফর্দাফাই। আগের মতো আর শুনতে পাচ্ছেন না জয়নগরের কণিকা হালদার। কণিকা একাই নন, তাঁর মতো অগুনতি রোগী আসছেন শহরের একাধিক হাসপাতালের ওপিডিতে। এসএসকেএম এর অটোরাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের ওপিডিও তার ব্যতিক্রম নয়। কান পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারছেন আঘাত লাগার কারণেই হারিয়েছে শোনার ক্ষমতা। কীভাবে লাগল আঘাত? আমতা আমতা করছেন মহিলারা।
চিকিৎসকরা বুঝতে পারছেন, গার্হস্থ্য হিংসাই এর নেপথ্যে। শ্বশুরবাড়ির লোকের চড় খেয়েই কানের হাল বেহাল। অদ্ভুত বিষয়, যে সমস্ত মহিলা আসছেন, তাঁদের বাঁ কানের শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়েছে। কেন এমন? সাধারণত ডান হাতের থাপ্পড় বাঁ গালেই পড়ছে। থাপ্পড় খেয়ে শোনার ক্ষমতা হারানো নতুন নয়। সম্প্রতি দিল্লির ভাই পরমানন্দ বিদ্যামন্দিরের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রও কিছু শুনতে পাচ্ছিল না। পরে জানা গেল অঙ্কের শিক্ষকের থাপ্পড় খেয়েই এমন অবস্থা।
[আরও পড়ুন: বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা? সাবধান, একটু গাফিলতি হলেই কিন্তু বিপদ ]
অসাবধানতাবশত এই থাপ্পড় কেড়ে নিচ্ছে শোনার ক্ষমতা। বিশ্ব শ্রবণ ক্ষমতা দিবসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্তা, ছোটদের চড় মারবেন না। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অরিন্দম দাস জানিয়েছেন, শুধু ছোটরা কেন? চড়, থাপ্পড় না মারাই শ্রেয়। মুখের মধ্যে, বা নাকের গহ্বরে বায়ুর যে চাপ থাকে কানের মধ্যেও তাই থাকে। আকস্মিক থাপ্পড়ে সেই ‘এয়ার প্রেশার’ অনেকটাই বেড়ে যায়। সাঁই করে ছুটে আসা থাপ্পড় কানের গহ্বর বা ইয়ার ক্যানালের ভিতর হাওয়ার চাপ বাড়িয়ে দেয়। কানের বাইরের অংশের সঙ্গে ইয়ার ড্রামের সংযোগস্থলকে ইয়ার ক্যানাল বলা হয়। এই ইয়ার ড্রাম অত্যন্ত পাতলা। সজোরে থাপ্পড় মারার ফলে তা ফেটে যায়। ডা. অরিন্দম দাসের কথায়, থাপ্পড় খুব জোরে মারলে ওই ইয়ার ড্রাম ফেটে যায়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে ‘রাবচার’। ‘ইয়ার অটোস্কোপি’ করলে তবেই ধরা পরে ‘পারফোরেটেড ইয়ার ড্রাম’। দ্রুত এমন রোগীকে চিকিৎসকের কাছে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা।
কানের ভিতরের পর্দা টিমপ্যানিক মেমব্রেন নামে পরিচিত। মধ্যকর্ণ থেকে অন্তঃকর্ণের মাঝখানে এই পর্দা বিস্তৃত। এই পর্দা যেমন পাতলা, তেমনই স্পর্শকাতর। যে কোনও শব্দতরঙ্গ কানের পর্দায় কম্পন তৈরি করে। এই কম্পন মধ্যকর্ণের ছোট ছোট হাড়ের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে পৌঁছয়। তার ফলেই আমরা কোনও আওয়াজ শুনতে পাই। পর্দা ফেটে গেলে কম্পন বিঘ্নিত হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন থাপ্পড় খেয়ে সম্পূর্ণ শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়েছেন, এমনটা দেখা যায় না। কারও চল্লিশ, কারও পঞ্চাশ শতাংশ শ্রবণ ক্ষমতা কমে যায়। তবে দ্রুত চিকিৎসা না করলে সারাজীবনের জন্য কমে যায় শ্রবণ ক্ষমতা। কোনওভাবেই আর পর্দা মেরামত করা যায় না। স্রেফ চড়—থাপ্পড় নয়, আতশবাজির বিকট আওয়াজ এমনকী উচ্চ ডেসিবেলের কোনও ‘সাউন্ড’ দীর্ঘক্ষণ কানের সামনে বাজলেও এমনটা হতে পারে। ডা. অরিন্দম দাসের বক্তব্য, একাধিক পার্লারে যে হেয়ার ড্রায়ার মেশিন ঘোরে তার আওয়াজও অত্যন্ত উচ্চমাত্রার। যে কারণে দেখা যায়, পার্লারে যাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করছেন, তাঁদের শ্রবণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। ইয়ার ড্রামে বিন্দুর মতো একটা ফুটো হলেই ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শ্রবণশক্তি কমে।