বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য ও ধনরাজ তামাং: সিকিমের পর ভারি তুষারপাতে বিপর্যস্ত দার্জিলিংয়ের সান্দাকফু। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হালকা বৃষ্টির সঙ্গে ভারী তুষারপাত শুরু হয়। প্রায় তিন ফুট বরফের আস্তরণে ঢাকা পড়ে সড়ক। বাড়ে অক্সিজেনের সমস্যা। আটকে পড়েছেন চল্লিশজনের বেশি পর্যটক। এসএসবি এবং সিংহল ল্যান্ড রোভার সংস্থার কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে মানেভঞ্জনে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে। ভারী তুষারপাতের জন্য রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সান্দাকফুর হোটেল এবং হোমস্টেগুলোতে দোল পূর্ণিমা পর্যন্ত সমস্ত বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
‘সিংগালিলা ল্যান্ডওভার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক চন্দন প্রধান বলেন, “চৌরি চক থেকে সান্দকফু পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ আছে। টুম্বলিং টংলুতে তুলনায় কম তুষারপাত হচ্ছে। সান্দাকফুতে দোল পর্যন্ত সমস্ত বুকিং বাতিল করা হয়েছে। পর্যটকরা পোখারি পর্যন্ত যেতে পারবেন। এদিকে সমতলেও চলছে ঝড়বৃষ্টি। আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জেলাগুলোয় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের ‘হলুদ’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত এই আবহাওয়া জারি থাকতে পারে। বরুণ দেবের এমন ভ্রুকুটিতে লোকসভা ভোট প্রচারে অনেকটাই বিপাকে রাজনৈতিক দলগুলো। বৃষ্টি পেয়ে চাষিরা পাট চাষের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়েছেন। চা বাগানেও বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। তাই ভোট প্রচারের কোনও সভায় ভিড় জমছে না। তার উপর বৃষ্টির জন্য কাটছাঁট করতে হচ্ছে অনেক কর্মসূচি। কখন রোদের দেখা মিলবে সেই অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে প্রার্থীদেরও।
[আরও পড়ুন: বিবাহিত মহিলাকে নিয়ে পালানোর শাস্তি! যুবককে জুতো চাটিয়ে মূত্রপান করানো হল মধ্যপ্রদেশে]
দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচারে এখনও প্রার্থী বলতে তৃণমূলের গোপাল লামা (Gopal Lama)। অন্য দলগুলো জেলা, ব্লক থেকে বুথস্তরে প্রস্তুতি বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সমস্যায় প্রত্যেকে। পাহাড়ে বৃষ্টি, তুষারপাত, তীব্র ঠান্ডা ও কুয়াশা ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতা কর্মীদের প্রচারে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামা জানান, ঠিক মতো জনসংযোগের কাজ করা যাচ্ছে না। তবে সমস্যা হলেও মানিয়ে নিতে হচ্ছে। বিজেপির মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মন বলেন, “বৃষ্টির দরকার ছিল। চা বাগান ও পাট চাষিরা খুবই উপকৃত হয়েছে। তবে ভোট প্রচারের প্রস্তুতিতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এখনও হাতে সময় আছে।” সমতলে সভা ডাকলে দলীয় কর্মী ও নেতাদের অনেকেই বৃষ্টির জন্য হাজির হতে পারছেন না।
বুধবার বিজেপির পাঁচ বিধানসভার প্রস্তুতি বৈঠক ছিল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে অনেকেই গড়হাজির ছিলেন। একই সমস্যার জন্য সিপিএমের তরফে ঘরোয়া বৈঠকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি ও কৃষি কাজে ব্যস্ততার জন্য সভার আয়োজন করলে এই মূহুর্তে খুব বেশি ভিড় জমানো সম্ভব হবে না। উলটে মানুষের বিরক্তি বাড়তে পারে। ওই কারণে বাড়িতে বাড়িতে প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটাও করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টি চলবে। শুধু তাই নয়। শনিবার বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বাড়তে পারে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলায় মাঝারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। থাকবে হালকা ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। রবিবার দুই দিনাজপুর, মালদহ ছাড়া উত্তরের সব জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রবল। সোমবার আট জেলাতেই বৃষ্টি হতে পারে। সমতলে বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ের উঁচু এলাকায় তুষারপাত বাড়বে। স্বভাবতই ভোট প্রচারে সমস্যা বাড়তে চলেছে।