shono
Advertisement

Breaking News

সেলুনের ব্লেড, রেজারে ঘাপটি মেরে রয়েছে হেপাটাইটিস বি, সি! সতর্ক থাকার নির্দেশ চিকিৎসকের

সেলুনে দাড়ি কামানোর অবসরে শরীরে হানা দিতেই পারে বি/সি ভাইরাস।
Posted: 09:14 PM Sep 25, 2023Updated: 09:14 PM Sep 25, 2023

স্টাফ রিপোর্টার: খেতেই ইচ্ছে করে না গৌতমবাবুর। আসলে খাবারে অরুচি, ক্লান্তি আর গাঁটে গাঁটে ব্যথা বেড়েই চলছিল গৌতম সেনগুপ্তর ৷ ওজনও কমছিল৷ শেষে রক্তপরীক্ষায় ধরা পড়ল, হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত তিনি৷ চিকিৎসক ও রোগী, কেউই বুঝে উঠতে পারেননি, কোথা থেকে হল সংক্রমণটা৷

Advertisement

উদাহরণ ২: বছর ৫০-এর পার্থ সিনহার আবার কোনও উপসর্গই ছিল না৷ ফলে চিকিৎসকের দ্বারস্থও হননি কোনও দিন। আচমকা রোজ বমি আর পেটব্যথা শুরু ।

যখন ডাক্তার দেখালেন, বোঝা গেল, ততদিনে তিনি লিভার সিরোসিসের শিকার৷ রক্তপরীক্ষায় বোঝা গিয়েছিল, বহু আগেই হেপাটাইটিস সি ভাইরাস থাবা বসিয়েছে তাঁর পেটে৷ কিন্ত্ত কোথা থেকে এল এমন মারণ জীবাণু? ভেবে কূলকিনারা পাননি তিনি৷

[আরও পড়ুন: ফিট থাকতে রোজকার ডায়েটে থাকুক বাজরা, কীভাবে খাবেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞর মত]

রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস৷ রক্ত সঞ্চালন ও সিরিঞ্জে করে ড্রাগ নেওয়ার অভ্যাসই সংক্রমণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ৷ কিন্ত্ত ওঁরা কখনও রক্ত নেননি৷ বিড়ি-সিগারেট ছুঁয়ে দেখেন না। ড্রাগের আসক্তিও নেই৷ তাও কী করে গৌতম-পার্থর রক্তে এল এই ভাইরাস? বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেনই, ৬০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবে জানাই যায় না, সংক্রমণটা হল কোথা থেকে৷ রোগীর সঙ্গে বিস্তর কথাবার্তার পর চিকিৎসকদের যদিও সন্দেহ, সেলুন থেকেই নির্ঘাত ওঁদের শরীরে কোন ফাঁকে ঢুকে গিয়েছে ওই ভাইরাস৷ এবং তা রেজার অথবা সেভিং ব্রাশের মাধ্যমেই৷ কেননা, এইচআইভি-র মতো নিছক ব্লেড বদলে মুক্তি নেই হেপাটাইটিস বি/সি-র জীবাণু থেকে৷ তাই চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, সেলুনে দাড়ি কামানোর অবসরে শরীরে অতর্কিতে হানা দিতেই পারে বি/সি ভাইরাস। বিশিষ্ট লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ চৌধুরি বলেন, ‘‘সেলুন থেকে দেদার ছড়ায় হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস৷ এ নিয়ে বিদেশে সমীক্ষা-গবেষণাও রয়েছে৷’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজির এক চিকিৎসক সাবধান করছেন, এইচআইভি-র তুলনায় হেপাটাইটিস সি ১০ গুণ বেশি ও হেপাটাইটিস বি ১০০ গুণ বেশি সংক্রামক৷ এই অনুপাত স্বাভাবিক অঙ্কের নিয়মেই সেলুনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ৷

সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘ছোট সেলুনে পরিছন্নতা কম। অনেক ক্ষেত্রে ব্লেড বদল হয় না। এই নিয়ে তেমন প্রচার না-হওয়ায় এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিংবা সেলুন, কারও কোনও ধারণা তৈরি হয়নি৷’ তাঁর সঙ্গে একমত প্রবীণ গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজিস্ট মহেশ গোয়েঙ্কাও৷ তাঁর মতে, নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং সংক্রমণের আগেই হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি৷ মহেশের অভিজ্ঞতা, দুই সংক্রমণই বেড়ে চলেছে কলকাতায়৷ মোট জনসংখ্যার ৪% হেপাটাইটিস বি এবং ০.৮% সি ভাইরাসের শিকার৷

কীভাবে সেলুন থেকে ছড়ায় এই সংক্রমণ? মেডিক্যালের এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘রক্তের কণা ব্লেডের পাশাপাশি রেজার ও ব্রাশেও লেগে থাকে৷ সংক্রমিত ব্যক্তির রক্তকণা ব্লেডের পাশাপাশি রেজার ও ব্রাশেও লেগে থাকে৷ কিন্ত্ত এইচআইভির জীবাণু যেহেতু শরীরের বাইরে ৫-১০ মিনিটের বেশি বাঁচে না, তাই এইচআইভি ঠেকাতে স্রেফ ব্লেডটা বদলে নিলেই চলে৷ কিন্ত্ত হেপাটাইটিস বি/সি ভাইরাস শরীরের বাইরে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অবলীলায় বেঁচে থাকে৷ তাই শুধু ব্লেড বদলে লাভ হয় না৷ কলের জলে ধুয়ে নিলেও সে জীবাণু ব্রাশে, রেজারে থেকে যায়৷ একমাত্র ফুটন্ত জলে অন্তত ৫-১০ মিনিট রাখলে তবেই মরে জীবাণু৷ অন্যথায় সহজেই তা পরের ব্যক্তির দাড়ি কামানোর সময়ে ঢুকে পড়তে পারে শরীরে৷’’ অভিজিৎ জানাচ্ছেন, সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে যেহেতু রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মাত্র ২০ শতাংশ লোকের ক্ষেত্রে, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী নিজেও জানতে পারেন না তাঁর রোগ সম্পর্কে৷ এবং এই অজ্ঞতাই সংক্রমণটা ছড়াতে সাহায্য করে৷

[আরও পড়ুন: বৃষ্টির জল আর ঘাম মিলেমিশে বাড়ায় ফাংগাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা, খুব সতর্ক থাকুন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement