ফিল্মমেকার হতে চাও? সিনেমা নিয়ে গবেষণা? কেরিয়ার-পরিধি বিস্তৃত। জানাচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক ড. মানসকুমার ঘোষ। লিখছেন অনিন্দ্য সিংহ চৌধুরি।
সত্যজিৎ থেকে বার্গম্যান। উত্তম থেকে অমিতাভ। রণবীর কাপুর টু হালের ওটিটি। কিংবা ইরানের সিনেমা থেকে অর্পণা সেন-ঋতুপর্ণ ঘোষ। বা হালের সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ক্যামেরার টপ অ্যাঙ্গেল থেকে মন্তাজ। সোজা কথায়, সারাদিন শুধুই সিনেমা নিয়ে থাকা। সিনেমা নিয়েই পড়াশোনা। সিনেমা নিয়েই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়া। তাও কি সম্ভব?
একেবারেই সম্ভব। সিনেমা নিয়ে যেমন দেশ ও বিদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা করা যায়, হওয়া যায় শিক্ষক থেকে গবেষক। তেমনই নামী বিজ্ঞাপন বা সফটওয়্যার কোম্পানিতেও ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া যায়। কিংবা নিজেই তথ্যচিত্র বা সিনেমা বানানোর পথে পা বাড়ানো যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, প্রযুক্তির উন্নতির কল্যাণে এখন সিনেমা দেখা ‘হাতমুঠো ফোন’-এ হয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু বড় স্ক্রিনের জন্য সিনেমা নয়, ওটিটি-র জন্যও হলি-বলি-টলি দুনিয়াতে প্রচুর পরিমাণে সিনেমা তৈরি হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে টেলিভিশনের নানা সিরিয়াল থেকে টেলিফিল্ম। তাই সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করা লোকজনের সিনেমার নতুন নতুন সেক্টরে কাজের সুযোগও বেশ ভালোরকমই বাড়বে।
[আরও পড়ুন: রাজ্য পুলিশে ১০ হাজার ২৫৫টি শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ, কারা আবেদনের যোগ্য?]
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামীতে সিনেমা অর্থাৎ ‘ফিল্ম স্টাডিজ’ নিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কাজের সুযোগ পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি দেশেও অনেকটাই বাড়বে। তাই অনেকেই উচ্চমাধ্যমিকের পর কলেজে বাংলা, ইংরেজি বা ইতিহাস কিংবা অর্থনীতি ‘মেজর’-এর সঙ্গে ফিল্ম স্টাডিজ-কে ‘মাইনর’ সাবজেক্ট হিসাবে রাখছে। আর মাস্টার্স ডিগ্রিতে ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে পড়ছে, আর এখানেই থামা নয়, ভবিষ্যতে পিএইচডিও করছে। কিংবা অনেকেই মাস্টার্সের পর কাজের জগতে প্রথম থেকে রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
বিজ্ঞাপনের দুনিয়া
মাস্টার্সের পর অনেকেই বড়-মাঝারি-ছোট বিজ্ঞাপন এজেন্সিতে যোগ দেয়। এই রাজে্যই ছোট-বড় বেশ কয়েকটি এজেন্সি রয়েছে। অনেকে যেমন ‘ইয়ার সার্কেল’, ‘ওগিলভি’ বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করছে। এটা ঠিক, কলকাতার থেকেও মুম্বই কিংবা বেঙ্গালুরুতে বিজ্ঞাপন সংস্থা অনেক, তাই সেখানে কাজের সুযোগও বেশি।
উচ্চতর গবেষণা
বহু ছাত্রছাত্রী মাস্টার্সের পর দেশে ও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদের ‘দ্য ইংলিশ অ্যান্ড ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউনিভার্সিটি’তে ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে গবেষণা করা যায়। অনেকেই এখানে ফেলোশিপ নিয়ে যায়। পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করতে যায়। অনেকে ‘পোস্ট-ডক্টরেট’ও করে। আবার, অনেকেই সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, রূপকলা কেন্দ্র কিংবা পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ায় উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যায়।
অধ্যাপনা
যেহেতু এখন পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম স্টাডিজ রয়েছে, তাই এই বিষয়ে মাস্টার্সের পর অধ্যাপনার সুযোগ পাওয়া যায়। সরকারি কলেজের সঙ্গে বেসরকারি নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়
গুগল, ইয়াহু-র মতো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাতেও ফিল্ম স্টাডিজের ছাত্রছাত্রীদের কাজ রয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যেই কাজ করছেও। কর্পোরেট কোম্পানিগুলি নিজেদের ‘প্রোমোশন’-এর কাজে প্রায়ই ফিল্ম স্টাডিজের পড়ুয়াদের নিয়োগ করে। অনেক কর্পোরেট সংস্থায় এই ধরনের ছবি তৈরির জন্য স্থায়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা নিয়োগ হয়।
তথ্যচিত্র-চলচ্চিত্র পরিচালনায়
কারও প্রথম থেকেই পরিচালনায় যাওয়ার স্বপ্ন থাকে। কেউ মাস্টার্সের পর ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকার’ হিসাবে কাজ করে। তথ্যচিত্র থেকে শর্টফিল্ম তৈরি করে। অনেকে এ রাজে্য বা অন্যত্র নানা প্রযোজনা সংস্থায় কাজ করে। টেলিভিশনে সিরিয়াল বা টেলি-ফিল্ম তৈরির নানা কাজে যুক্ত হয়।
পড়ার সুযোগ
উচ্চমাধ্যমিকের পর স্নাতক স্তরে ‘মাইনর’ হিসাবে ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে পড়া যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মুরলীধর গার্লস কলেজ, নেতাজি নগর কলেজ ফর উইমেন, সম্মিলনী কলেজ-সহ আরও কয়েকটি ফিল্ম স্টাডিজ রয়েছে। মাস্টার্স করার সুযোগ আছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বারাসতের ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। যাদবপুরে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হয়। সিনেমা সংক্রান্ত বড় প্রশ্ন থাকে। যে কোনও বিষয়ের ‘মেজর’ স্নাতক মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে।
স্পেশালাইজেশন
সাধারণভাবে ইন্ডিয়ান সিনেমা, ইন্ডিয়ান মিডিয়া, বাংলা সিনেমা, ডিজিটাল সিনেমা নিয়ে স্পেশালাইজেশন করা যায়। অর্থাৎ ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে পড়ে শুধু সিনেমা বানানো নয়, নানা সেক্টরেই কাজের সুযোগ রয়েছে। সুযোগ আরও বাড়বে।