লাজুক স্বভাবের ছিলেন। কিন্তু উঁচু জেটি থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতে ভালবাসতেন। সাজতেন টারজান। নিয়মিত করতেন শরীরচর্চা। এমনই ছিল নারায়ণ দেবনাথের ছোটবেলা। জানালেন কমিকস বিশেষজ্ঞ শান্তনু ঘোষ।
১৯২৫ সালে হাওড়ার শিবপুরে জন্ম নারায়ণ দেবনাথের (Narayan Debnath)। সেখানেই বেড়ে ওঠা। হেমচন্দ্র দেবনাথ এবং রমণসোনা দেবীর তিন সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন তিনি। ডাকনাম নারাণ। মুখচোরা লাজুক স্বভাবের ছিলেন নারায়ণ দেবনাথ। বোনেদের খুব ভালবাসতেন। এই নারায়ণ দেবনাথের আবার অ্যাডভেঞ্চার ছিল ভীষণ প্রিয়। দোতলা সমান উঁচু জেটি থেকে সোজা গঙ্গায় ঝাপ দিতেন। সাঁতার কেটে পার হয়ে যেতেন গঙ্গা। সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন।
সাইকেল, খেলাধুলো সেরে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরতে হত নারাণকে। পড়তে বসতে হতো। কিন্তু ছোটবেলায় পড়ার বইয়ে কিছুতেই মন টিকত না নারায়ণ দেবনাথের। তাঁকে টানত টারজানের দুঃসাহসিক অভিযান। কখনও ভরা পুকুরে টারজান সেজে ঝাঁপ দিতেন, কখনও আবার পেন্সিল কাটার ছুরি কোমরে বেঁধেই হয়ে যেতেন টারজান। রবিনহুডও সাজতেন তিনি। সরকাঠির তির বানিয়ে দরজায় লক্ষ্যভেদ করতেন। বডিবিল্ডার হওয়ার স্বপ্নও দেখতেন। তাই কাকভোরে বাজে শিবতলা ক্লাবে গিয়ে করতেন শরীরচর্চা।
[আরও পড়ুন: টিকাকরণে জোর দেওয়ার সুফল? দেশে ফের নিম্নমুখী করোনা গ্রাফ, কমল পজিটিভিটি রেটও]
আঁকার প্রতি নারায়ণ দেবনাথের ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। ভাল ছবি দেখলেই তা কপি করতে বসে যেতেন। বাড়ির দেওয়াল ছিল তাঁর পেন্টিংয়ের ক্যানভাস। বাবার আঁকা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নারায়ণ দেবনাথের কন্যা মীনু জানিয়েছিলেন, নারায়ণ দেবনাথ একদিন বাড়ির বারান্দায় বসে ছবি আঁকছিলেন। কাছেই কিছু বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মীনু।গল্পে গল্পে ওঠে প্রেমের প্রসঙ্গ। তখনই একজন সতর্ক করে বলার চেষ্টা করেন নারায়ণ দেবনাথ কাছেই রয়েছেন। তিনি শুনতে পাবেন। মীনু তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, হাজার কথা বললেও নারায়ণবাবুর কানে কোনও কথাই যাবে না। এতটাই মনোযোগ দিয়ে আঁকতেন তিনি। একবার জেলেপাড়ায় লক্ষ্মীঠাকুরের চক্ষূদানও করেছিলেন।
কখনও পেন্সিল কাটার জন্য শার্পনার ব্যবহার করেননি। শুধু কার্টুনিস্ট বা কমিক শিল্পী নয় নিজেকে অলঙ্করণ শিল্পী ও শিশু সাহিত্যিক বলতে ভালবাসতেন নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath)। বঙ্গবিভূষণ থেকে শুরু করে সাহিত্য আকাদেমি, পদ্মশ্রী, একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পাওনা মানুষের ভালবাসা। এমনটাই মনে করতেন নারায়ণ দেবনাথ।