স্বাস্থ্যবিমার প্রয়োজনীয়তা জীবনে প্রতিটি মানুষেরই থাকে। কিন্তু অনেকেই পলিসি সংক্রান্ত শর্তাবলির মারপ্যাঁচ অতটা বোঝেন না, জটিলতার জেরে প্রায়ই বাতিল হয় ক্লেম। তবে এটা রোখা সম্ভব। কোন কোন দিকে নজর রাখলে এই জটিলতা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন, ক্লেমও বাতিল হবে না, জানালেন সনৎ কুমার
স্বাস্থ্যবিমা আমাদের জীবনের এমন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা মেডিক্যাল প্রয়োজনের সময়ে আর্থিক সুরক্ষা দেয়। তবে পলিসির শর্তাবলীর জটিলতার কারণে প্রায়শই ক্লেম বাতিল হয়ে যায়, ফলে পলিসিধারীরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। বোঝার ক্ষমতা এবং সচেতনতা বাড়ানোর জন্যে আমরা ক্লেম বাতিল হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো এবং কীভাবে বাতিল হওয়া আটকানো যায় তার রূপরেখা তৈরি করেছি। নেপথ্যে রয়েছে–
১. সব রোগ প্রকাশ না করা
ক্লেম বাতিল হয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল পলিসি কেনার আগে যা যা অসুখ ছিল, তা প্রকাশ করার অক্ষমতা। বিমাকর্তারা পলিসি চালু হওয়ার সময়ে এই তথ্যগুলো চেয়ে থাকেন ঝুঁকির মূল্যায়ন এবং যথাযথ কভারেজের হিসাব করার জন্যে। সেই সময় অসুখ-বিসুখ প্রকাশ করতে অক্ষম হলে ক্লেম বাতিল হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে পলিসি বাতিলও হয়ে যেতে পারে।
[আরও পড়ুন: ‘স্বামী নির্যাতন করলেও সেটা ধর্ষণ’, পর্যবেক্ষণ গুজরাট হাই কোর্টের]
২. বরাবরের জন্যে বাদ রাখা হয়, এমন অসুখ এবং বাধ্যতামূলক ওয়েটিং পিরিয়ড
প্রত্যেকটি পলিসির নির্দিষ্ট অসুখের জন্যে বাধ্যতামূলক ওয়েটিং পিরিয়ড থাকে, যা ১ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদি কিডনির অসুখ, পারকিনসন’স, অ্যালজাইমার্স এবং এইচআইভির মত কিছু অসুখকে বরাবরের জন্যে বাদ রাখা হয়।
৩. কাগজপত্র জমা না দেওয়া
বিশেষত খরচ করার পর টাকা ক্লেম করার ক্ষেত্রে সমস্ত কাগজপত্র জমা না দেওয়া ক্লেম বাতিল হয়ে যাওয়ার এক সাধারণ কারণ। ডিসচার্জ সামারি, হাসপাতালের রসিদ এবং পেশেন্ট রেকর্ডের মত আসল কাগজপত্র ক্লেমের প্রক্রিয়াকরণের জন্যে আবশ্যিক। ক্লেম বাতিল এড়াতে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া নিশ্চিত করুন।
[আরও পড়ুন: মোদি-মমতার বৈঠকের দিন বিধায়কদের নিয়ে শুভেন্দুর কর্মসূচিতে ‘নারাজ’ সুকান্ত! প্রকাশ্যে অন্তর্কলহ]
৪. প্রতারণা
লঘু এবং গুরুতর, দু’ধরনের প্রতারণামূলক ক্লেমের কারণেই ক্লেম বাতিল হয়ে থাকে। লঘু প্রতারণা হল সামান্য ফুলিয়ে ফঁাপিয়ে ক্লেম করা বা কিছু প্রকাশ না করা। অন্যদিকে গুরুতর প্রতারণা ইচ্ছাকৃত এবং পূর্বনির্ধারিত। বিমাকর্তারা প্রতারণাকে গুরুতর অপরাধ বলে ধরে। ফলে পলিসি বাতিল হয়ে যেতে পারে, হাসপাতালকে কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে অথবা তাকে তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলির মধ্যে থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
সাধারণ বিমা পলিসিধারীর কাছে ক্লেম বাতিল দুর্বোধ্য হতে পারে। তাই সমস্ত ক্লেম বাতিলের ক্ষেত্রেই বিমাকর্তাদের নিয়মানুযায়ী বাতিলের কারণ জানিয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হয়। এই বাতিলের ঘটনাগুলি নিচের চারটি সহজ পরামর্শ অনুসরণ করলেই আটকানো যায়:
১. পলিসি কেনার আগে যে সমস্ত অসুখ-বিসুখ আছে, সব কিছু প্রকাশ করুন
ভবিষ্যতে ক্লেম বাতিল এড়াতে পলিসি কেনার সময়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব কিছু প্রকাশ করুন।
২. পলিসির শর্তাবলী পর্যালোচনা করুন
সযত্নে পলিসির শর্তাবলী পর্যালোচনা করুন, কী কী অসুখ বাদ আছে এবং কিসে কিসে ওয়েটিং পিরিয়ড আছে সেদিকে মনোযোগ দিন। আপনার অসুস্থতায় হাসপাতালে ভর্তির আগে কোনও ওয়েটিং পিরিয়ড আছে কি না, খেয়াল করুন।
৩. ক্যাশলেস সুবিধার সুযোগ নিন
নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসা করান যাতে পূর্বনির্ধারিত খরচ এবং ক্যাশলেস প্রক্রিয়ার সুবিধা নিতে পারেন। বিমাকর্তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কালো তালিকাভুক্ত অথবা বাদ পড়ে, এমন হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা এড়ান।
৪. কাস্টমার সাপোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
বিশেষ করে পরিকল্পিত হাসপাতালে ভর্তির জন্যে কাস্টমার সাপোর্টের থেকে পরামর্শ নিন। বিমাকর্তারা প্রায়শই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাছাই করতে এবং বিকল্প পরামর্শ পেতে সাহায্য করে থাকেন।
৫. সাবধানতা অবলম্বন করুন
সঠিক তথ্য পেতে, বিশেষ করে পরিকল্পিত ভর্তির ক্ষেত্রে, নিয়মিত পেশেন্ট ইনফর্মেশন পর্যালোচনা করুন। ক্যাশলেস অনুমোদন বারবার পরীক্ষা করুন এবং ডিসচার্জের সময়ে ফোলানো ফঁাপানো ক্লেমে সম্মতি দেওয়া এড়ান। এই গাইডলাইন অনুসরণ করে পলিসিধারীরা ক্লেম বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারেন এবং তঁাদের স্বাস্থ্য বিমা কভারেজে মসৃণতর অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারেন।
পরিশেষে বলি, স্বাস্থ্যবিমার জটিলতা অতিক্রম করা এবং ক্লেম বাতিল হওয়া এড়াতে হলে অধ্যবসায় দরকার। গাইডলাইন অনুসরণ করে পলিসিধারীরা ক্লেম বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারেন। নিয়মনীতি সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত থাকা এবং সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি কেবল সফল ক্লেমের সম্ভাবনাই বৃদ্ধি করে না, কঠিন সময়ে আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়ার যে মৌলিক উপযোগিতা স্বাস্থ্য বিমার রয়েছে তার সাফল্যও নিশ্চিত করে।